উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন (Tropic Movement in plants)
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসরন করে হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিজম বলে ।
ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ ( Types of Tropic Movement )
১৷ ফটোট্রপিক চলন ( Phototropic Movement )
উদ্ভিদের যে ট্রপিক চলন আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে হয় তখন তাকে ফটোট্রপিক বা আলোকবর্তী চলন বলে । উদ্ভিদ অঙ্গের আলোকবর্তী চলন অক্সিন নামক এক রকম হরমোনের প্রভাবে ঘটে । উদ্ভিদের যে অংশে আলো পড়ে তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ অন্ধকারের দিকে বেশি মাত্রায় অক্সিন সঞ্চিত হয়ে ঐ অঞ্চলের কোষ গুলিকে দ্রুত বিভাজিত করে । এর ফলে ঐ অংশটি বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায় । ফলে কাণ্ড আলোর দিকে বেঁকে যায় । কিন্তু মূলের ক্ষেত্রে অক্সিন আলোর অংশের দিকে বেশি কাজ করে । ফলে মূল আলোর বিপরীত দিকে বেঁকে যায় ।
ফটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা
একটি টবে লাগানো তাজা চারাগাছকে একটি অন্ধকার ঘরের জানালার পাশে টেবিলের উপর রাখা হল । কয়েকদিন পর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে, চারা গাছটি ক্রমশ খোলা জানালার দিকে বেঁকে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই পরীক্ষাটি থেকে প্রমাণিত হয় যে উদ্ভিদের কাণ্ডের চলন আলোক অনুকূলবর্তী ।
২৷ জিওট্রপিক চলন (Geotropic Movement)
মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে অভিকর্ষ বৃত্তি বা জিওট্রপিক চলন বলে ।
আমরা জানি (ক) উদ্ভিদের মূল সব সময় অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়। সেই জন্য মূলকে অভিকর্ষের অনুকূল বর্তী বা পজিটিভ জিওট্রপিক বলা হয় । (খ) কাণ্ড মাটির উপরে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়, তাই তাই কাণ্ডকে অভিকর্ষ প্রতিকুলবর্তী বা নেগেটিভ জিওট্রপিক বলা হয় । (গ) উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূল পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের সঙ্গে লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূলকে তির্যক অভিকর্ষবর্তী বা ট্রান্সভার্স জিওট্রপিক বলে ।
জিওট্রপিক চলনের পরীক্ষা
একটি ভিজে ব্লটিং পেপারের উপরে একটি অঙ্কুরিত চারা গাছকে পিনের সাহায্যে ভূমির সমান্তরাল ভাবে আটকে ব্লটিং পেপারটিকে অন্ধকার স্থানে খাড়াভাবে রেখে দেওয়া হল । কয়েকদিন পরে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে ভ্রূণমূলটি নীচের দিকে এবং ভ্রূণমুকুলটি উপরের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে । এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে উদ্ভিদের মূলের চলন অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী ।
৩৷ হাইড্রোট্রপিক চলন (Hydrotropic Movement)
উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন জলের উৎসের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে জলবর্তী বা হাইড্রোট্রপিক বলে ।
হাইড্রোট্রপিক চলনের পরীক্ষা :
একটি চালুনির মধ্যে কিছু ভিজে কাঠের টুকরো রেখে কয়েকটি ছোলা বীজ রাখা হল । কয়েকদিন পর দেখা যাবে যে, বীজ গুলি অঙ্কুরিত হয়েছে এবং ভ্রূণমূল গুলি চালুনির ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে চালুনির বাইরে ঝুলে আছে । আরও কয়েকদিন পর লক্ষ্য করা গেল যে, ভ্রূণমূল গুলি পুনরায় বেঁকে চালুনির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করছে । এর কারণ কিছুই নয়, ভ্রূণমূল গুলি প্রথমে অভিকর্ষের টানে চালুনির ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে ঝুলছিল । কিন্তু পরে জল পাওয়ার জন্য আবার চালুনির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করেছে । এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হল যে মূলের চলন জল অনুকূলবর্তী ।
*****
- 19859 views