ভিটামিনের কাজ ও গুরুত্ব

Submitted by arpita pramanik on Fri, 05/03/2013 - 09:07

ভিটামিনের কাজ ও গুরুত্ব (Functions and Importance of Vitamins)

ভিটামিন (Vitamins)

সংজ্ঞা (Definition of Vitamins) - যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্য অতি অল্প পরিমানে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধে শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে ।

 

ভিটামিনের বৈশিষ্ট্য (Feature of Vitamins)

১৷  রাসায়নিক প্রকৃতিঃ ভিটামিন এক প্রকার জৈব অনুঘটক ।

২৷  ক্রিয়া প্রকৃতিঃ ভিটামিন অল্প গাঢ়ত্যের কাজ করে এবং দৈনিক অল্প মাত্রায় প্রয়োজন হয় ।

৩৷  উৎসঃ  ভিটামিনের প্রধান উৎস হল উদ্ভিদ। তবে ভিটামিন [tex]A,D,{B_{12}},K[/tex]  প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয় ।

৪৷  অন্যান্য বৈশিষ্ট্য- (1) ভিটামিন পচনে বিনষ্ট হয় না,কিন্তু বিপাকের সময় বিনষ্ট হয়। (2) ভিটামিন উৎসেচকের সঙ্গে সহ উৎসেচক রূপে কাজ করে ।

 

ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Vitamin)  

১৷ স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেঃ  জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন অপরিহার্য ।

২৷ রোগ প্রতিরোধেঃ  ভিটামিনের প্রধান কাজ হল রোগ প্রতিরোধ করা ।

৩৷ খাদ্য প্রাণ হিসাবেঃ  জীবের জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান হল ভিটামিন সেই কারণে একে খাদ্য প্রাণ বলে ।

 

নিম্নলিখিত রোগ গুলি কোন ভিটামিনের অভাবে হয় ।

রোগের নাম ভিটামিনের নাম
টোড-স্কিন বা ফ্রিনোডার্মা ভিটামিন A
রাতকানা বা জেরপথ্যালমিয়া ভিটামিন A
কেরাটোম্যালেসিয়া ভিটামিন A
রেনাল স্টোন ভিটামিন A
বেরিবেরি ভিটামিন [tex]{B_1}[/tex]
পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা ভিটামিন  [tex]{B_{12}}[/tex]
পেলেগ্রা ভিটামিন  [tex]{B_5}[/tex]
স্টোমাটাইটিস ভিটামিন  [tex]{B_2}[/tex]
গ্লসাইটিস   ভিটামিন  [tex]{B_2}[/tex]
স্কার্ভি ভিটামিন C
রিকেট  ভিটামিন D
অস্টিওম্যালেসিয়া ভিটামিন D
হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ  ভিটামিন K

 

 

বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস কাজ ও অভাব্জনিত ফল

 

ভিটামিনের নাম

উৎস

কাজ

অভাবজনিত ফল

 

 

১৷ ভিটামিন A বা রেটিনল

কড্ ,হাঙর প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, গাজর, লেটুস দুধ, ডিম ইত্যাদি ।

রেটিনার গঠন ও চোখের কর্মক্ষমতা রক্ষা, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন, ত্বকের কোমলতা স্বাভাবিক রাখে ।

ভিটামিন A –র অভাবে রাতকানা, ত্বক খসখসে হওয়া(টোডস্কিন) প্রভৃতি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় ।

 

 

২৷ ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স

[tex]{B_1} - [/tex] থিয়ামিন

[tex]{B_2} - [/tex] রাইবোফ্ল্যাভিন

[tex]{B_5} - [/tex] নিয়াসিন

[tex]{B_{12}} - [/tex] সায়ানোকো-বালামিন

ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, পালংশাক, টম্যাটো ইত্যাদি ।

দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, রক্ত কোশ গঠন, মিউকাস পর্দা সুস্থ রাখা, স্নায়ু কোশ সুস্থ রাখা ইত্যাদি ।

ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের

অভাবে বেরিবেরি, রক্তিল্পতা, মুখে ঘা, পেলেগ্রা, স্নায়ু-দৌর্বল্য ইত্যাদি রোগ  লক্ষণ প্রকাশ পায় ।

[tex]{B_1} - [/tex] বেরিবেরি, [tex]{B_2} - [/tex] মুখে ঘা বা স্টোমাটাইটিস, [tex]{B_5} - [/tex] (নিয়াসিন)- পেলেগ্রা, [tex]{B_{12}} - [/tex] রক্তাল্পতা ।

 

৩৷ ভিটামিন-C বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড

সব রকম টাটকা ও টক ফল-লেবু, আম, আমলকি, মাতৃ-স্তনদুগ্ধ

ইত্যাদি ।

রড কোশ গঠন, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি, দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখাইত্যাদি ।

ভিটামিন-C এর অভাবে স্কার্ভি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় ।   

 

৪৷ ভিটামিন-D বা ক্যালসিফেরল

কড ও হ্যালিবাট, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, ডিম, দুধ, উদ্ভিজ তেল ইত্যাদি ।

অস্থি গঠনে সহায়তা করা এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিপাক নিয়ন্ত্রণ করা ।

ভিটামিন-D এর অভাবে শিশুদের রিকেট ও বড়োদের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।

 

৫৷ ভিটামিন-E বা টোকোফেরল

লেটুস শাক, মটরশুঁটি, গমের অঙ্কুর নিঃসৃত তেল,দুধ, ডিম ইত্যাদি ।

স্তনদুগ্ধ ক্ষরণ, বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ, ভ্রূণের বৃদ্ধি ইত্যাদিতে সাহায্য করা।

ভিতামিন-E এর অভাবে বন্ধ্যাত্ব, স্তনদুগ্ধ ক্ষরণ হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় ।

 

 

৬৷ ভিটামিন-K বা ফাইলোকুইনন

টম্যাটো, বাঁধাকপি, পালংশাক, আলফা-আলফা শাক, দুধ, মাখন, শূকরের যকৃৎ নিঃসৃত তেল ইত্যাদি ।

রক্তে প্রোথ্রম্বিন এর পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা এবং রক্ত-তঞ্চনে সহায়তা করা ।

ভিটামিন-K এর অভাবে রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয়, এর ফলে রক্ত ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় ।

 

অ্যান্টিভিটামিন ( Antivitamin ) - যে সব পদার্থ ভিটামিনের অনুরূপে রাসায়নিক শ্রেণীভুক্ত হয়েও ভিটামিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে বা ভিটামিনের ক্রিয়া বিনষ্ট করে, তাদের অ্যান্টিভিটামিন বলে । যেমন থিয়ামিন [tex]\left( {{B_1}} \right)[/tex] এর অ্যান্টিভিটামিন হল পাইরিথিয়ামিন । বায়োটিনের অ্যান্টিভিটামিন হল অ্যাভিডিন ।

প্রোভিটামিন ( Provitamin ) - যে সব পদার্থ থেকে ভিটামিন সংশ্লেষিত হয় তাদেরকে প্রোভিটামিন বলে । যেমন আর্গোস্টেরল হল ভিটামিন D এর প্রোভিটামিন। ক্যারোটিন হল ভিটামিন A এর প্রোভিটামিন ।

সিউডোভিটামিন ( Psedovitamin ) - যে সব জৈব যৌগের গঠন ভিটামিনের মত কিন্তু ভিটামিনের গুন সম্মত নয়, তাদের  সিউডোভিটামিন বলে । যেমন মিথাইলকোবালামিডন ভিটামিন [tex]{B_{12}}[/tex] এর সিউডোভিটামিন ।

 

ভিটামিন সংশ্লেষ

একমাত্র উদ্ভিদরাই নিজেদের দেহে ভিটামিনের সংশ্লেষ করতে পারে । উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লুকোজ থেকে ভিটামিন সংশ্লেষ করে । প্রাণীদেহে সরাসরি ভিটামিন সংশ্লেষ হয় না । ত্বকে ভিটামিন D সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্নির প্রভাবে আর্গেস্টরল থেকে সংশ্লেষিত হয় । ভিটামিন A যকৃতে ক্যারোটিন থেকে সংশ্লেষিত হয় । ভিটামিন [tex]{B_{12}},K[/tex] ইত্যাদি অন্ত্রে জীবাণু কর্তৃক সংশ্লেষিত হয় । ভিটামিন C  ইঁদুরের অ্যাভরিনাল কটেক্স সংশ্লেষিত হয় ।

*****

Related Items

আরশোলার গমন

চলা ফেরা বা হাঁটার জন্য আরশোলার তিন জোরা সন্ধিল পদ বর্তমান। আরশোলার পৃষ্ঠ দেশে দ্বিতীয় ও তৃতীয় খণ্ডকে মোট দু জোরা ডানা আছে। আরশোলার দু জোরা ডানার মধ্যে প্রথম ডানা জোরা শক্ত ও পুরু। তারা উড্ডয়নে সাহায্য করে না। দ্বিতীয় ডানা জোরা স্বচ্ছ ও পাতলা ...

কেঁচোর গমন

প্রাণীর নাম – কেঁচো, গমন অঙ্গের নাম, গমনে সাহায্যকারী পেশীর নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - কেঁচোর দেহ খণ্ডতলের অঙ্গীয় তলে অবস্থিত আণুবীক্ষণিক এক আয়তন কণ্টক সদৃশ্য অঙ্গ হল সিটি । সিটির এক প্রান্ত দেহ অভ্যন্তরস্ত থলির মধ্যে থাকে। ...

অ্যামিবার গমন

প্রাণীর নাম - অ্যামিবা, গমন অঙ্গের নাম, গমন পদ্ধতির নাম, গমন পদ্ধতি - ক্ষনপদ হল অ্যামিবার কোষ পর্দা সমূহ দেহ প্রোটোপ্লাজমের অংশ বিশেষ যা নলাকারে প্রসারিত হয়। গমনের সময় ক্ষনপদ সামনের দিকে প্রসারিত হয় এবং কোনো কঠিন বস্তুর সঙ্গে ক্ষনপদটিকে দৃঢ় ভাবে আবদ্ধ করে।

উদ্ভিদ দেহে ন্যাস্টিক চলন

উদ্ভিদের স্থায়ী অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের তীব্রতা বা ব্যাপ্তি অনুসারে হয় , তখন তাকে ন্যাস্টিক চলন বা ব্যাপ্তি চলন বলে। ন্যাস্টিক চলনের প্রকারভেদ , ফটোন্যাস্টি, থার্মোন্যাস্টি, নিকটিন্যাস্টি, কেমোন্যাস্টি, সিসমোন্যাস্টি। ...

উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন

উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসরন করে হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিজম বলে। ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ, ফটোট্রপিক চলন, ফটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা, জিওট্রপিক চলন, জিওট্রপিক চলনের পরীক্ষা, হাইড্রোট্রপিক চলন ...