উত্তর ভারতের প্রধান নদনদী

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 11/14/2014 - 14:39

উত্তর ভারতের নদ ও নদীগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— (১) সিন্ধু নদ, (২) গঙ্গা নদী ও (৩) ব্রহ্মপুত্র নদ ।

(১) সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে কাশ্মীরে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ২৮৮০ কিমি এবং এর মধ্যে ৭০৯ কিমি ভারতে মধ্য দিয়ে প্রবাহিত । ভারতের মধ্য দিয়ে ৭০৯ কিলোমিটার প্রবাহিত হওয়ার পর সিন্ধু নদ নাঙ্গা পর্বতের উত্তর প্রান্ত ঘুরে কাশ্মীরের সীমানা ত্যাগ করে দক্ষিণ-পশ্চিম বাহিনী হয়ে পাকিস্তানের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আরব সাগরে পড়েছে । শতদ্রু (শতলজ), বিপাশা (বিয়াস), ইরাবতী (রাভি), চন্দ্রভাগা, বিতস্তা (ঝিলাম) প্রভৃতি সিন্ধুনদের উপনদীগুলি ভারতের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । শতদ্রু নদীর উপর নির্মিত ভাকরা-নাঙ্গাল সেচ ও বিদ্যুৎ প্রকল্প পাঞ্জাবে ও হিমাচল প্রদেশে শষ্য উৎপাদনে বিরাট পরিবর্তন এনেছে । বিতস্তা নদীর তীরে জম্মু ও কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগর অবস্থিত ।

(২) গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি, এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে দেবপ্রয়াগে অলকানন্দার সঙ্গে মিলিত হয়েছে এবং এই দুই মিলিত স্রোত গঙ্গা নামে পরিচিত হয়েছে । গঙ্গা পরে শিবালিক পর্বত অতিক্রম করে হরিদ্বারের কাছে সমভূমিতে অবতরণ করেছে । পরে বিহারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে রাজমহল পাহাড়ের কাছে পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশ করে কিছু দূর প্রবাহিত হয়ে মুর্শিদাবাদ জেলার মিঠিপুরের কাছে ভাগীরথীপদ্মা নামে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে । গঙ্গার একটি শাখা ভাগীরথী-হুগলী নামে দক্ষিণ দিকে পশ্চিমবঙ্গের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । গঙ্গার প্রধান উপনদী যমুনা যমুনোত্রী হিমবাহ থেকে উৎপন্ন হয়ে এলাহাবাদ বা প্রয়াগে এসে ডান দিক থেকে গঙ্গায় পতিত হয়েছে । চম্বল, বেতোয়া, কেন প্রভৃতি যমুনার উল্লেখযোগ্য উপনদী । এরা দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । গঙ্গার ডান তীরের উপনদীগুলির মধ্যে শোন নদীটি সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য । এটিও দাক্ষিণাত্য মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়েছে । ব্রাহ্মণী, ময়ূরাক্ষী, অজয়, দামোদর, রূপনারায়ণ, কাঁসাই প্রভৃতি উপনদীগুলি ভাগীরথী–হুগলী নদীর দক্ষিণ তীরে মিলিত হয়েছে । ভাগীরথী–হুগলী নদী হল গঙ্গার একমাত্র শাখানদী । গঙ্গার বাম তীরের উপনদী গুলির মধ্যে রামগঙ্গা, গোমতী, ঘর্ঘরা, গণ্ডক, কুশী, মহানন্দা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার বদ্বীপটি পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম । গঙ্গার তীরে কলকাতা, পাটনা, বারাণসী, এলাহাবাদ, কানপুর, হরিদ্বার প্রভৃতি বিখ্যাত শহর ও তীর্থকেন্দ্রগুলি গড়ে উঠেছে ।

(৩) ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে ব্রহ্মপুত্র নদের উৎপত্তি । এর মোট দৈর্ঘ্য ২৫৮০ কিমি, এর মধ্যে ৮৮৫ কিমি ভারতের অন্তর্গত । তিব্বতে সাংপো নামে পরিচিত এই নদীটি হিমালয়ের সমান্তরালে প্রায় ১২০০ কিলোমিটার পূর্বে প্রবাহিত হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের পূর্বে হিমালয়ের গভীর ও সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে দিহং নামে ভারতে প্রবেশ করে । সাদিয়ার কাছে দিহং নদীটি, দিবংলোহিত এর সঙ্গে মিলিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নামে অসম উপত্যকার মধ্য দিয়ে পশ্চিম বাহিনী হয়েছে । সাদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত এই ৭৫০ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র নদ মোটামুটি সমভূমির উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে । ধুবড়ির কিছু দূরে দক্ষিণ বাহিনী হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ যমুনা নামে বাংলা দেশে প্রবেশ করেছে এবং পরিশেষে গঙ্গার মুল শাখা পদ্মার সঙ্গে মিলে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । ব্রহ্মপুত্রের উল্লেখযোগ্য উপনদীগুলির মধ্যে সুবনসিরি, তিস্তা, তোর্সা, বরাক, কামেং, মানস, বুড়ি-দিহাং, দিসাং, কপিলি ও ধানসিরি প্রধান । ডিব্রুগড়, তেজপুর এবং গুয়াহাটি হল ব্রহ্মপুত্রের তীরে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য শহর ।

(৪) উত্তর ভারতের অন্যান্য গুরুত্ব পূর্ণ নদী :

(১) লুনি : লুনি নদী আরাবল্লী পর্বতের নিকটবর্তী আনাসাগর হ্রদ থেকে উৎপন্ন হয়ে থর মরুভূমি অঞ্চলের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম বাহিনী হয়ে কচ্ছের রণে পতিত হয়েছে । এর দৈর্ঘ্য ৪৫০ কিমি । বর্ষাকাল ছাড়া অন্য সময়ে নদীটির অস্তিত্ব বিশেষ বোঝা যায় না । লুনি ভারতের প্রধান অন্তর্বাহিনী নদী ।

অন্তর্বাহিনী নদী : যে সমস্ত নদীর প্রবাহ পথ কোনোও দেশ বা মহাদেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ অর্থাৎ যেসব নদী স্থলভাগের বাহিরে কোনও সাগর বা জলভাগে না পড়ে স্থলভাগের মধ্যেই কোনও হ্রদ বা জলাশয়ে পতিত হয় অথবা স্থলভাগেই বিলীন হয়ে যায়, সেইসব নদীকে অন্তর্বাহিনী নদী বলে ।

(২) সবরমতী : সবরমতী নদী আরাবল্লী পর্বতশ্রেণী থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণ বাহিনী হয়ে কাম্বে উপসাগরে পড়েছে । এর দৈর্ঘ্য ৪১৬ কিমি ।

(৩) সুবর্ণরেখা : সুবর্ণরেখা নদীটি ছোটনাগপুরের মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে বিহার হয়ে পশ্চিমবঙ্গের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ওড়িশায় প্রবেশ করে বালিয়াপালের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে । এর দৈর্ঘ্য ৪৭৭ কিমি । 

উত্তর ভারতের নদনদীর বৈশিষ্ট্য :

(১) প্রধানত হিমালয় পর্বতের বিভিন্ন হিমবাহের বরফ গলা জল থেকে উৎপন্ন হওয়ায় এই সব নদীতে সারাবছরই জল থাকে । 

(২) উত্তর ভারতের নদীগুলি বন্যা প্রবণ

(৩) উচ্চ প্রবাহ ছাড়া সমভূমিতে নদী স্রোতের বেগ কম হওয়ায় উত্তর ভারতের নদীগুলি জাহাজ বা নৌকো চলার উপযুক্ত ।

*****

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত