এশিয়া মহাদেশের স্বাভাবিক উদ্ভিদ

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/16/2013 - 16:43

যে সমস্ত গাছ কোনো স্থানের জলবায়ু ও মৃত্তিকাসহ স্বাভাবিক প্রাকৃতিক পরিবেশে মানুষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই জন্মায় ও বড়ো হয়, তাদের ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলা হয় । কোনো স্থানের জলবায়ু অর্থাৎ বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার ঋতুগত তারতম্য ওই স্থানের স্বাভাবিক উদ্ভিদকে প্রভাবিত করে । প্রতিটি আলাদা জলবায়ু অঞ্চলেরই নিজস্ব স্বাভাবিক উদ্ভিদ জগৎ রয়েছে । যেমন—

(১) এশিয়ার নিরক্ষীয় অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : সারাবছর ধরেই অত্যধিক উত্তাপ ও প্রচুর বৃষ্টিপাতের জন্য এশিয়ার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও সিঙ্গাপুর অঞ্চলে বড়ো বড়ো গাছের গভীর চিরহরিৎ নিরক্ষীয় অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে । এইসব অঞ্চলে যেসব উদ্ভিদ জন্মায় সেগুলিকে প্রধানত দু'ভাগে ভাগ করা যায়, যেমন— (ক) নিরক্ষীয় চিরহরিৎ বনভূমি এবং (খ) গুল্ম, লতা ও ঝোপজাতীয় উদ্ভিদ । মেহগিনি, এবনি, রোজউড, পাম (তাল জাতীয় গাছ) প্রভৃতি এখানকার মুল্যবান বনজ সম্পদ ।

(২) এশিয়ার মৌসুমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : এশিয়ার মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বিশেষত মায়ানমার, কাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম এবং ভারতীয় উপমহাদেশের স্থান বিশেষে বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুসারে স্বাভাবিক উদ্ভিদেরও তারতম্য দেখা যায়, যেমন— বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে রোজউড, মেহগিনি, লোহাকাঠ, দেবদারু, বাঁশ প্রভৃতি চিরহরিৎ গাছের ঘন অরণ্য দেখা দেখা যায় । আবার একটু কম বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানে সেগুন, শাল, নাহার, শিমুল, জারুল, মহুয়া, বট, অশ্বত্থ, পলাশ, আম, জাম, কাঁঠাল প্রভৃতি পর্ণমোচী বৃক্ষ দেখা যায় ।

(৩) এশিয়ার ক্রান্তিয় মরুভূমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ার আরব মরুভূমি এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভারত ও পাকিস্তানের থর মরুভূমিতে জলের অভাবে বড়ো গাছপালা বিশেষ একটা দেখা না গেলেও ফনীমনসা প্রভৃতি ক্যাকটাস জাতীয় গাছ এবং অ্যাকেশিয়া, বাবলা প্রভৃতি কাঁটাযুক্ত গাছ দেখা যায় । মরুভূমির অপেক্ষাকৃত আর্দ্র অঞ্চলে বুনো খেজুর, তাল, বেরি প্রভৃতি উদ্ভিদ দেখা যায় ।

(৪) এশিয়ার ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : এশিয়ার তুরস্ক, সিরিয়া, লেবানন, ইস্রাইল প্রভৃতি দেশের ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদের মধ্যে জলপাই, ইউক্যালিপটাস, নানান ধরনের লেবু জাতীয় গাছ (যেমন কমলালেবু) প্রধান । এছাড়া এই জলবায়ু অঞ্চলে লরেন্স, একাশিয়া প্রভৃতি চিরসবুজ গাছও জন্মায় ।

(৫) এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ তৃণভূমি বা স্টেপস অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : কম বৃষ্টিপাতের জন্য দক্ষিণ-পশ্চিম সাইবেরিয়া ও পূর্ব মঙ্গোলিয়ার স্টেপস অঞ্চলে বড়ো গাছ না জন্মালেও এখানে কাঁটাযুক্ত নানান ধরনের ঝোপঝাড় এবং এক ধরনের বেঁটে ঘাস জন্মায় ।

(৬) এশিয়ার নাতিশীতোষ্ণ মরুভূমি অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : এশিয়ার মঙ্গোলিয়া মালভূমি ও গোবি মরুভূমি অঞ্চলের বেশিরভাগ অংশ উদ্ভিদহীন তবে স্থানে স্থানে ঘাস ও ঝোপঝাড় দেখা যায় ।

(৭) এশিয়ার চিন দেশীয় জলবায়ু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : কোরিয়া, দক্ষিণ জাপান এবং পূর্ব ও মধ্য চিনের চিন দেশীয় জলবায়ু অঞ্চলে মিশ্র উদ্ভিদের অরণ্য দেখা যায় । এই অঞ্চলের উষ্ণ ও বেশি বৃষ্টিপাত যুক্ত আর্দ্র জলবায়ু এখানে চিরসবুজ উদ্ভিদ জন্মানোর অনুকূল পরিবেশের সৃষ্টি করেছে । ওক, কর্পূর, ক্যামেলিয়া, ম্যাগনোলিয়া, বাঁশ এবং তুঁতগাছ হল এখানকার মুল্যবান বনজ সম্পদ ।

(৮) এশিয়ার মাঞ্চুরিয় জলবায়ু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : মাঞ্চুরিয়া ও উত্তর জাপানের পার্বত্য অঞ্চলে পাইন, ফার, স্প্রুস প্রভৃতি সরলবর্গীয় চিরসবুজ উদ্ভিদের বনভূমি দেখা যায় ।

(৯) এশিয়ার তাইগা বা সাইবেরিয়া জলবায়ু অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : এশিয়া মহাদেশের ৫৫° থেকে ৭০° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত উত্তর রাশিয়া ও উত্তর সাইবেরিয়ার তাইগা জলবায়ু অঞ্চলের জলবায়ু অত্যন্ত শীতল । এখানে বছরের অধিকাংশ সময়ে তুষারপাত হয় এবং ভূমি বরফে ঢাকা থাকে । এই ধরনের পরিবেশে পাইন, ফার, স্প্রুস, সিডার প্রভৃতি সরলবর্গীয় বৃক্ষের গভীর অরণ্যের সৃষ্টি হয়েছে, যা তাইগা বনভূমি নামে পরিচিত ।

(১০) এশিয়ার তুন্দ্রা অঞ্চলের স্বাভাবিক উদ্ভিদ : এশিয়া মহাদেশের সুমেরু বৃত্তের একেবারে বাহিরে অবস্থিত উত্তর রাশিয়ার উত্তর প্রান্তের তুন্দ্রা অঞ্চল সারাবছর বরফে ঢাকা থাকে বলে এই অঞ্চলে মস ও লাইকেন জাতীয় শৈবাল ও গুল্ম ছাড়া অন্যান্য উদ্ভিদ বিশেষ একটা জন্মায় না ।  গ্রীষ্মকালে এখানে এক ধরনের গুল্মজাতীয় উদ্ভিদে প্রচুর ফুল ফোটে ।

*****

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত