মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল/ভালোমন্দ

Submitted by Nandarani Pramanik on Fri, 01/25/2019 - 10:42

মোবাইল ফোন ব্যবহারের সুফল ও কুফল / ভালোমন্দ

ভূমিকা:— আধুনিক প্রযুক্তি বিদ্যার নবতম আবিষ্কার হল ইন্টারনেট, ই-মেল ও মোবাইল ফোন । যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম হাতিয়ার হল মোবাইল ফোন । আজকের দিনে কোনো আত্মীয় পরিজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কাউকে চিঠি লিখে তার উত্তরের প্রতীক্ষায় ডাক-পিয়নের পথ চেয়ে বসে থাকতে হয় না । তার বিহীন এই ক্ষুদ্র মোবাইল যন্ত্রটির মাধ্যমে আমরা মুহূর্তে দেশে বা বিদেশে থাকা মানুষের সঙ্গে সহজে যোগাযোগ করতে পারি, সমস্ত প্রকার খবরাখবরের আদান প্রদান করতে পারি । গত কয়েক বছরের মধ্যে এই ছোট যন্ত্রটি আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দেখা দিয়েছে । মোবাইল ফোন ছাড়া আমাদের এক মুহূর্ত চলে না ।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের প্রসার : মোবাইল ফোনের ব্যবহার এখন সর্বস্তরেই । সমাজের উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত সব পরিবারেই  মোবাইল ফোনের ব্যবহার ছড়িয়ে পড়েছে । এই যন্ত্রটি স্বল্প মূল্যেও পাওয়া যায় আবার বেশি দামের স্মার্টফোনও আছে । সুবিধাজনক মূল্যে ও আকর্ষণীয় শর্তে পাওয়া যায় বলে এটা সর্বস্তরের মানুষ ব্যবহার করছে । বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে এর আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে । ভবিষ্যতেও এর ব্যবহার আরও বৃদ্ধি পাবে বলে সকলের ধারণা ।

মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তার কারণ : মোবাইল ফোনের জনপ্রিয়তার অনেকগুলো কারণের মধ্যে বিশেষ বিশেষ কারণ হল প্রথমত - দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মোবাইল ফোন এত জনপ্রিয়তা লাভ করেছে । স্বল্পমূল্যে ফোনটি কেনা যায় বলে সব ধরনের মানুষ এটি ব্যবহার করতে পারে । দ্বিতীয়ত - মোবাইল ফোন সঙ্গে নিয়ে সর্বত্র যাওয়া যায় এবং সব জায়গায় এটা ব্যবহার করা যায় অতি সহজে । তৃতীয়তঃ কম খরচে এস.এম.এস -এর মাধ্যমে গ্রাহক যে কোন সংবাদ আত্মীয়-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব বা অন্য কোনো জায়গায় পৌঁছে দিতে পারে । চতুর্থত ল্যান্ডলাইন ফোনে মাঝে মাঝে প্রচুর টাকার বিল আসে । মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এরকম ঘটনা ঘটে না । পুলিশের যে কোনো তদন্তের কাজে মোবাইল ফোন একটা বড় হাতিয়ার রূপে কাজ করে । অপরাধীদের ব্যবহার করা মোবাইল ফোনের কল লিস্ট চেক করে অন্যান্য সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম খুঁজে পাওয়া যায় । যে কোনো অপরাধ মূলক তদন্তের কাজে মোবাইল ফোন এখন একটি অপরিহার্য বস্তু । এছাড়া বর্তমানে স্মার্টফোন বা অ্যান্ড্রয়েড ফোনে বিভিন্ন বিষয়ের খোঁজ-খবর, প্রাত্যহিক খবর, এফ এম রেডিও, ক্যামেরা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয় মোবাইল ফোন থেকে পাওয়া যায় । মোবাইল ফোন শুধু প্রয়োজন মেটায় না, চিত্ত বিনোদনের একটা মাধ্যম হয়ে উঠেছে । হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে খুব কম সময়ে ছবি, বা কোন ঘটনা বা অফিস-আদালতের সার্কুলার, মেমো প্রভৃতি খুব কম সময়ে পৌঁছে দেওয়া যায় । আজকের দিনে এই ব্যবস্থাটি খুবই কার্যকরী ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছে ।

মোবাইল ফোন ব্যবহারের ক্ষতিকর প্রভাব:  মোবাইল ফোনের ব্যবহার সভ্য জীবনের একটা অপরিহার্য ব্যবস্থা হয়ে উঠলেও এর ক্ষতির দিকও রয়েছে । মোবাইল ফোনে বেশি কথা বলা বা ব্যবহার করা ঠিক নয় । বর্তমানে আট থেকে আশি বছরের সবাই মোবাইল ফোনে আসক্ত হয়ে পড়েছে যে এটা ঠিক নয় । এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে । মোবাইল ফোনে অনর্থক কথা বলা, এস.এম.এস করা, গেম খেলা, বা নানা ধরনের পর্নো ছবি দেখায় লিপ্ত থাকে যুবক-যুবতীরা । এটি একটি নেশার মত যুব সমাজকে গ্রাস করেছে । কানে মোবাইল ফোনের কর্ড লাগিয়ে রাখায় কারোর কথা শুনতে পায় না বা শুনতে চায় না । একটা বেপরোয়া ভাব দেখা যায় এদের মধ্যে । আবার ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পার হওয়ার সময় কোনো দিকে খেয়াল থাকে না, এতে অকালে অনেক প্রাণ চলে যায় । অনেকে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে অনেকের বিপদ ডেকে আনে । অত্যধিক মোবাইল ফোনের ব্যবহারে মস্তিষ্কে ক্যানসারও হতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা সমীক্ষা করে জানিয়েছেন ।

উপসংহার :— মোবাইল ফোন আমাদের জীবন যাত্রায় অনেক স্বচ্ছলতা এনে দিয়েছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে । কিন্তু ক্ষতিও হচ্ছে প্রচুর । মোবাইল ফোনের ব্যবহারে কিশোর-কিশোরীরা এতটাই মগ্ন হয়ে পড়েছে, যে তারা পারিপার্শ্বিকের দিকে তাকাচ্ছে না । এমনকি পরিবারে বাবার আর্থিক অবস্থার কথাও ভাবছে না । তাদের চাহিদা পূরণের জন্য বাবা-মার উপর চাপ সৃষ্টি করে পরিবারে অশান্তি বাড়াচ্ছে । নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা হবে ভবিষ্যতে দেশের কর্ণধার । তারা যদি এইভাবে গা বাঁচিয়ে চলে, তাহলে দেশটা গড়বে কারা ? আমাদের মনে রাখতে হবে ভারতের বেশিরভাগ মানুষ দরিদ্র, অশিক্ষিত । সর্বাগ্রে এদের উন্নতির কথা চিন্তা করতে হবে । বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রযুক্তির সাহায্যে দেশের জনসাধারণের মুখে হাসি ফোটানোই আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত অন্ধভাবে মোবাইল ফোন নিয়ে বিলাসিতায় মগ্ন হয়ে থাকা নয় ।

*****

Comments

Related Items

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য

" ছয় সেবাদাসী / ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করে আসি ।"

বাংলার উৎসব

উৎসব হল মানবজীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ । মানুষ শুধু খেয়ে-পরে বেঁচেই সন্তুষ্ট থাকে না । সে অনেকের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিতে চায় । মানুষ দৈনন্দিন জীবনের গতানুগতিক একঘেয়েমির জীবন থেকে মুক্তি চায় । শ্রমক্লান্ত জীবনে পেতে চায় সহজ অনাবিল আনন্দ । আর তাই মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে ।

মিড ডে মিল (Mid-Day-Meal)

শিশুদের শিক্ষার অধিকার সবচেয়ে বড় অধিকার । দারিদ্র্য পীড়িত ভারতে বেশির ভাগ শিশু এই অধিকার থেকে বঞ্চিত । পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য বেশির ভাগ শিশু, শিশুশ্রমিকে পরিণত হয় । শিশুদের শৈশবকে সুরক্ষিত করার জন্য ভারত সরকার এক জনমুখি প্রকল্প গ্রহণ করেন । এই প্রকল্পের নাম মিড-ডে-মিল ।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা

মানব সভ্যতার বিজয়রথের চালক হল বিজ্ঞান । সমগ্র মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম । মানব সভ্যতার হাহক হল বিজ্ঞান । গুহাবাসী মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখল, যেদিন নগ্ন গায়ে গাছের ছালকে পরিধেয় হিসাবে ব্যবহার করতে শিখল, সেদিন থেকেই শুরু হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ।

মানব জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা

'মেলা' কথাটির মধ্যে আছে মিলনের ইঙ্গিত । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা গিয়ে এক জায়গায় মিলিত হই । সম্মিলিত মানুষের সমাবেশেকেই মেলা বলে । প্রত্যেক মেলার একটা উপলক্ষ থাকে ঠিকই, কিন্তু একসময় সেটা একেবারেই গৌণ হয়ে যায় । লক্ষ্য হয়ে ওঠে পরস্পরের মধ্যে মিলেমিশে কিছু দেওয়া-নেওয়া বা আদান-প্রদান । মেলা হল মিলনের ক্ষেত্রে । মিলনের মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় ।