অরণ্য ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা

Submitted by Nandarani Pramanik on Sat, 07/07/2018 - 16:32

সূচনা :- মানুষের জন্ম থেকেই অরণ্য তার পরম আত্মীয়, অকৃত্রিম বন্ধু । অরন্যের ডাকেই ধরিত্রীর প্রথম ঘুম ভেঙ্গে ছিল । দিকে দিকে প্রচারিত হয়েছিল জীবনের মহিমা । ভারতীয় সভ্যতা অরণ্য কেন্দ্রিক সভ্যতা, অরণ্যের কোলেই মানুষ গড়ে তুলেছিল তার প্রথম বাসস্থান । অরণ্য দিয়েছে বেঁচে থাকার রসদ, প্রাণের নিঃশ্বাস, আশ্বাস ।

অরণ্য উচ্ছেদ: - কালের বিবর্তনে সভ্যতার বিজয় রথ যত এগিয়েছে ততই সভ্যতা হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক । যন্ত্রই বেশি প্রাধান্য পাচ্ছে । যন্ত্রদানবের প্রভাবে অকাতরে অরণ্য নিধন চলছে অহরহ । অরণ্য হটাও, বসতি বানাও, এই বিধানে এই যান্ত্রিক সভ্যতা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে । বৃক্ষ আজ লাশকাটা ঘরে আবদ্ধ । সবুজের ক্ষেত্রে এখন বহুতল আবাসন । অরণ্যকে ধ্বংস করে বড় বড় কলকারখানা আবাসন গড়তে ব্যস্ত আজকের মানুষ । যে বৃক্ষ ছিল মানুষের পরম বন্ধু সুহৃদ সেই বৃক্ষের উপর চলছে অকথ্য অত্যাচার, উচ্ছেদ । সবুজ বনানীর জায়গায় আজ ইট-কাঠ কংক্রিটের জঙ্গল গড়ে উঠেছে ।

অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা:- মানুষের জন্মলগ্ন থেকেই অরণ্য প্রকৃত বন্ধুর মত পাশে থেকে অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান যুগিয়েছে । নিঃশ্বাস নেওয়ার অক্সিজেন যোগান দিয়েছে । দূষণের আক্রমণ থেকে রক্ষা করেছে মানব সভ্যতাকে । মাটিকে আঁকড়ে রেখে ভূমিক্ষয় রোধ করেছে । বৃষ্টি নামিয়ে ধরিত্রীকে শস্য শ্যামলা করেছে যে অরণ্য সেই অরণ্যের প্রতি মানুষের অকথ্য অত্যাচার, উৎপীড়নের শেষ নেই । যথেচ্ছ ভাবে গাছগাছালি কেটে ফাঁক করে দিচ্ছে । উচ্ছেদ হচ্ছে বন বনানী । এই অপব্যবহারের ফল ও মানুষ কে ভুগতেও হচ্ছে । প্রকৃতিতে নানা রকম পরিবর্তন ঘটছে । সময়ে বৃষ্টি হচ্ছে না । গরমে মানুষের প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে উঠছে । এক ফোটাবৃষ্টির জন্যে প্রাণিকুল হা হা করে মরে ।  বর্তমানে নানা রকম দূষণের কবলে মনুষ্য সমাজ জর্জরিত । এই সব কিছুর মূলে রয়েছে অরণ্যের অভাব ।

অরণ্য সংরক্ষণ:- - প্রকৃতির এই শাস্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মানুষের মুখেই আবার ধ্বনিত হচ্ছে ‌"দাও ফিরে সে অরণ্য লহ এ নগর" সবুজের অভিযান অর্থাৎ বৃক্ষরোপণে মানুষকে সচেষ্ট হতে হবে বেশি করে । জেলায় জেলায় বৃক্ষরোপণ উৎসব পালিত হচ্ছে, মানুষকে বৃক্ষপ্রেমিক করে তোলার প্রয়াস চলছে । বন উন্নয়নের জন্য central forestry commission তৈরি হয়েছে । যার মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে, গ্রামে-গঞ্জে গাছপালার চারা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ:- গাছের সঙ্গে সঙ্গে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের ও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে । বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে - যার যেখানে থাকার কথা সে সেখানে থাকলেই সব কিছু ঠিক ঠাক থাকে । বন্যপ্রাণী অর্থাৎ বাঘ, সিংহ, হাতি দুবেলা যদি শিকারীর অত্যাচারে উৎপীড়িত হয় তখন তারাও মনুষ্য সমাজে ঢুকে ক্ষয় ক্ষতি করে । এদের উপর অত্যাচার বন্ধ করা একান্ত প্রয়োজন । তাহলেই সমস্ত ভারসাম্য বজায় থাকবে ।

উপসংহার:- মানুষ এখনো বৃক্ষনিধন কর্ম থেকে বিরত হয়নি । এখনোও অকাতরে নিজের সুখের প্রয়োজনে বহু মূল্যবান গাছ-গাছালি কেটে ফেলছে । এটা বন্ধ করতে হবে । মানুষকে বুঝতে হবে গাছ আমাদের পরম বন্ধু । আমাদের বেঁচে থাকার জন্য আমরা একান্তভাবেই গাছের উপর নির্ভরশীল । একটি গাছ মানে একটি প্রাণ আর বৃক্ষ হত্যা মানেই নিজেকে হত্যা এই উপলব্ধি দরকার ।

 

Comments

Related Items

ছাত্র জীবনে খেলাধূলার প্রয়োজনীয়তা

'ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ' । ছাত্রছাত্রীদের প্রধান কাজ হল পড়াশুনা করা । পড়াশুনাকে তপস্যার মতো করেই করা দরকার ।

বিশ্বের ত্রাস মহামারী করোনা

ভুমিকা:- একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার শিখরে বাস করেও মানুষ ভয়ঙ্কর এক মহামারির মোকাবিলা করতে পারেনি । সেই মহামারি হল করোনা । ধনী বা দরিদ্র কোন দেশই করোনা নামক মহামারির কবল থেকে রেহাই পায়নি । করোনা এমনই এক রোগ যা অতি দ্রুত মানুষকে সংক্রমিত করে । এটা নতুন রো

পশ্চিমবঙ্গের পর্যটন শিল্প

"বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি । / দেশে দেশে কত-না নগর রাজধানী — / মানুষের কত কীর্তি, কত নদী গিরি সিন্ধু মরু, / কত-না অজানা জীব, কত-না অপরিচিত তরু / রয়ে গেল অগোচরে । বিশাল বিশ্বের আয়োজন ; / মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র তারি এক কোণ ।" — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

যুগে যুগে বাংলার বুকে যে সকল ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ জন্মেছেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তাঁদের মধ্যে অন্যতম । ঈশ্বরচন্দ্রের পাণ্ডিত্য, চারিত্রিক দৃঢ়তা, কর্মনিষ্ঠা, নির্ভীকতা, হৃদয়বত্তা মানবসমাজে এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত । হিমালয়ের মতো বিশাল ও উন্নত মনের মানুষ ঈশ্বরচন্দ্র শুধুমাত্র বিদ্যাসাগর ছিলেন না, করুণার সিন্ধুও ছিলেন ।

রক্তদান — মানবকল্যাণের আর এক নাম

"দেহের একটু রক্ত দিলে যদি বাঁচে একটি প্রাণ, / ধন্য হবে জনন তোমার, মহৎ তোমার দান । "