দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা

Submitted by Nandarani Pramanik on Wed, 12/13/2017 - 08:56

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞান ও মানব সভ্যতা

ভূমিকা:- বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ । বিজ্ঞানের নব নব আবিষ্কার মানুষের জীবনধারাকে আমূল পাল্টে দিয়েছে । মানুষের ব্যবহারিক জীবনে এসেছে যুগান্তকারী পরিবর্তন । প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে বাঁচার জন্য মানুষ আর মন্দিরে গিয়ে মাথা ঠোকে না বা অপদেবতার হাত থেকে মুক্তির জন্য ওঝার কাছে ছোটে না । অন্ধকার থেকে আলোয় ফিরিয়েছে বিজ্ঞান । বিজ্ঞানীদের অনলস সাধনায় আজ আমরা সভ্যতার শীর্ষে উন্নীত হতে পেরেছি ।

দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান:- আধুনিক জীবনের চরম উৎকর্ষের এবং অফুরন্ত ঐশ্বর্যের মূলে রয়েছে বিজ্ঞান । সকালের ঘুম ভাঙ্গে এলার্ম ঘড়ির ক্রিং ক্রিং শব্দে, বিছানা ছাড়ার পর যে টুথব্রাশ ও পেষ্ট নিই সেটাও বিজ্ঞানের অবদান । রান্নাঘরের গ্যাস ওভেন, ইলেকট্রিক কেটলি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনের প্রতিটি সাজ সরঞ্জাম সবই বিজ্ঞানের অবদান । এছাড়া বিনোদনের সামগ্রী রেডিও, টেলিভিশন, খবরের কাগজ, টেলিফোন থেকে শুরু করে টেপরেকর্ডার, ক্যালকুলেটর, সবই বিজ্ঞান দিয়েছে । নানা রকমের আধুনিক যানবাহনের আবিষ্কারের ফলে আমাদের জীবন যাত্রায় এসেছে গতি । দ্রুতগামী বাস, মোটর, ট্রেন, এরোপ্লেন, সবই বিজ্ঞানের অবদান । আজকের কর্মব্যস্ত মানুষ বিজ্ঞান ছাড়া একপাও এগোতে পারে না ।

প্রযুক্তিবিজ্ঞান ও মানব জীবনের অগ্রগতি:- প্রযুক্তিবিজ্ঞানের সাহায্যে কৃষিক্ষেত্রে সবুজ বিপ্লব এসেছে । আজকের ভারত খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ । চিকিৎসায় এসেছে অভূতপূর্ব সাফল্য । দুরারোগ্য কঠিন ব্যাধির চিকিৎসা করে নিরাময় করা হচ্ছে নিত্য নতুন বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে । প্রযুক্তিবিজ্ঞানের আবিষ্কার আমাদের রোজকার জীবনযাত্রায় এনেছে অভূতপূর্ব সাফল্য । আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরী মোবাইলের সাহায্যে পথ চলতে চলতেও প্রয়োজনীয় অনেক কাজ করে ফেলা যাচ্ছে । প্রচন্ড গরমেও এসি ঘরে বসে অনেক কঠিন কাজ করে ফেলা সম্ভব হচ্ছে ।  মোট কথা বিজ্ঞান আমাদের জীবনে যেমন আরাম এনে দিয়েছে তেমনি জীবনের চলার পথকেও অনেক সহজ ও গতিময় করেছে ।

বিজ্ঞানের অপকারিতা:- বর্তমান জগতের মানুষ বিজ্ঞান নির্ভর । বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে করতে মানুষ নিজেও অনেক যান্ত্রিক হয়ে পড়েছে । নিজের স্বাভাবিকত্ব হারিয়ে ফেলেছে । বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি মানুষের জীবনে যেমন আয়াস ও বিলাসিতা এনে দিয়েছে তেমনি অপর দিকে চাহিদাও বাড়িয়ে দিয়েছে । কিন্তু দরিদ্র মানুষের তো সব চাহিদা পূরণ হয় না । তাই অনেকেই অসুখী ও অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে । কৃত্রিম হয়ে পড়েছে মানুষের জীবন ।

উপসংহার:- অসুখী বা অসহিষ্ণুতা নিজেদের অজ্ঞতা থেকে জন্ম নেয় । এগুলো বাদ দিলে বিজ্ঞান আমাদের পরম বন্ধুর মতো । একে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতা অচল । প্রযুক্তিবিজ্ঞানকে আরো বেশি করে কাজে লাগিয়ে তার সুফল প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে । তবেই একটা দেশ স্বয়ং সম্পূর্ণ হয়ে উঠবে । বিজ্ঞান সত্য নির্ভর জ্ঞান । এই জ্ঞানই পারে সমস্ত কুসংস্কার বা অন্ধবিশ্বাসকে দূরে সরিয়ে দিতে । আর সেই অজ্ঞতার অচলায়তন যেদিন ভারতের বুক থেকে সরে যাবে সেদিন হবে নির্মল ভারত ।  

***     

Comments

Related Items

বাংলার ঋতুবৈচিত্র্য

" ছয় সেবাদাসী / ছয় ঋতু ফিরে ফিরে নৃত্য করে আসি ।"

বাংলার উৎসব

উৎসব হল মানবজীবনের একটি অপরিহার্য অঙ্গ । মানুষ শুধু খেয়ে-পরে বেঁচেই সন্তুষ্ট থাকে না । সে অনেকের সঙ্গে নিজেকে মিলিয়ে দিতে চায় । মানুষ দৈনন্দিন জীবনের গতানুগতিক একঘেয়েমির জীবন থেকে মুক্তি চায় । শ্রমক্লান্ত জীবনে পেতে চায় সহজ অনাবিল আনন্দ । আর তাই মানুষ উৎসবে মেতে ওঠে ।

মিড ডে মিল (Mid-Day-Meal)

শিশুদের শিক্ষার অধিকার সবচেয়ে বড় অধিকার । দারিদ্র্য পীড়িত ভারতে বেশির ভাগ শিশু এই অধিকার থেকে বঞ্চিত । পেটের ক্ষুধা নিবারণের জন্য বেশির ভাগ শিশু, শিশুশ্রমিকে পরিণত হয় । শিশুদের শৈশবকে সুরক্ষিত করার জন্য ভারত সরকার এক জনমুখি প্রকল্প গ্রহণ করেন । এই প্রকল্পের নাম মিড-ডে-মিল ।

বিজ্ঞানের জয়যাত্রা

মানব সভ্যতার বিজয়রথের চালক হল বিজ্ঞান । সমগ্র মানবসভ্যতার অগ্রগতিতে বিজ্ঞানের অবদান অপরিসীম । মানব সভ্যতার হাহক হল বিজ্ঞান । গুহাবাসী মানুষ যেদিন আগুন জ্বালাতে শিখল, যেদিন নগ্ন গায়ে গাছের ছালকে পরিধেয় হিসাবে ব্যবহার করতে শিখল, সেদিন থেকেই শুরু হল বিজ্ঞানের জয়যাত্রা ।

মানব জীবনে মেলার প্রয়োজনীয়তা

'মেলা' কথাটির মধ্যে আছে মিলনের ইঙ্গিত । জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আমরা গিয়ে এক জায়গায় মিলিত হই । সম্মিলিত মানুষের সমাবেশেকেই মেলা বলে । প্রত্যেক মেলার একটা উপলক্ষ থাকে ঠিকই, কিন্তু একসময় সেটা একেবারেই গৌণ হয়ে যায় । লক্ষ্য হয়ে ওঠে পরস্পরের মধ্যে মিলেমিশে কিছু দেওয়া-নেওয়া বা আদান-প্রদান । মেলা হল মিলনের ক্ষেত্রে । মিলনের মধ্যে মানুষ নিজেকে খুঁজে পায় ।