সামরিক ইতিহাস (Military History) : প্রাচীনকাল থেকে বর্তমানকাল পর্যন্ত সভ্যতা, রাষ্ট্র ও রাজনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে সামরিক শক্তি অন্যতম সহায়ক উপাদান ছিল । যুদ্ধের প্রয়োজনে সামরিক শক্তি অপরিহার্য ছিল । প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিটি দেশ, জাতি ও সভ্যতায় সামরিক কাঠামো, যুদ্ধাস্ত্র প্রভৃতির ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটেছে । সামরিক বাহিনীতে পদাতিক, রথ, বা হস্তিবাহিনীর পরিবর্তে বর্তমানে ট্যাংক বা সাঁজোয়া বাহিনী, বিমানবাহিনী প্রভৃতি এবং তীরধনুক, তরবারি, বল্লম, কুঠার প্রভৃতির পরিবর্তে বর্তমানে কামান, বন্দুক, বোমা বিষাক্ত গ্যাস প্রভৃতির প্রচলন হয়েছে । উনবিংশ শতক পর্যন্ত ঐতিহাসিকদের যুদ্ধ-সংক্রান্ত আলোচনা যুদ্ধের কারণ ও ফলাফলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল । বর্তমানকালে এই ধারার পরিবর্তন ঘটেছে । বর্তমানে যুদ্ধাস্ত্র, সামরিক সজ্জা, রণকৌশল, সামরিক পোশাক প্রভৃতি খুঁটিনাটি বিষয়ও ইতিহাসচর্চায় স্থান পেয়েছে । ভারতে বিগত শতকে সামরিক ইতিহাসচর্চা শুরু হয় । রবার্ট আর্ম, সুবোধ ঘোষ, দীপ্তনীল রায়, নিখিলেশ ভট্টাচার্য প্রমুখ এবিষয়ে আলোচনা করেছেন । যদুনাথ সরকার রচিত 'মিলিটারি হিস্ট্রি অব ইন্ডিয়া' গ্রন্থে ভারতের প্রধান প্রধান যুদ্ধগুলির বর্ণনা ও যুদ্ধপদ্ধতির বিকাশের বর্ণনা মেলে । তাঁর লেখায় রণকৌশল নির্ধারণের ওপর কীভাবে ভূগোলের প্রভাব পড়ে তার আলোচনা রয়েছে । ভারতের সামরিক ইতিহাসচর্চায় সুরেন্দ্রনাথ সেন, কৌশিক রায় প্রমুখের কাজ বিশেষ উল্লেখযোগ্য । মারাঠা, মোঙ্গলদের জাতিগঠনে সামরিক বিষয় গুরুত্বপূর্ণ । আবার সিপাহি বিদ্রোহ, নৌবিদ্রোহ বা আজাদ হিন্দ বাহিনীর সামরিক ইতিহাস 'ভারত' গঠনের এক-একটি সোপান ।
*****