জৈব যৌগের গঠনগত সমাবয়বতা

Submitted by arpita pramanik on Sat, 04/20/2013 - 13:08

জৈব যৌগের গঠনগত সমাবয়বতা (Constitutional Isomerism of Organic Compounds) :

সমাবয়বতা (Isomerism) : একই আণবিক সংকেত যুক্ত কিন্তু আলাদা গঠন ও ধর্মবিশিষ্ট একাধিক জৈব যৌগ পাওয়া যায় । এই ঘটনাকে সমাবয়বতা (Isomerism) বলে এবং এই ধরনের যৌগগুলিকে সমাবয়ব বা আইসোমার (Isomer) বলে । 

গঠনগত সমাবয়বতা (Constitutional Isomerism) : দুটি যৌগের একই আণবিক সংকেত থাকা সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরণের গঠন সংকেত (structural formula) থাকে, ওই সমাবয়ব যৌগগুলির মধ্যে বিভিন্ন ধরণের ভৌত এবং রাসায়নিক ধর্ম দেখা যায়, তখন ওই ঘটনাকে গঠনগত সমাবয়বতা বলে । গঠনগত সমাবয়বতা তিন ধরনের যথা: (ক) শৃঙ্খল ঘটিত সমাবয়বতা,   (খ) অবস্থান ঘটিত সমাবয়বতা,  (গ) কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা

(ক) শৃঙ্খলঘটিত সমাবয়বতা (Chain Isomerism) : কার্বন শৃঙ্খলের বিভিন্নতার জন্য জৈব যৌগে যে সমাবয়বতা সৃষ্টি হয়, তাকে শৃঙ্খল ঘটিত সমাবয়বতা বলে । যেমন: C4H10  সংকেত থেকে দুটি ভিন্ন গঠন যুক্ত যৌগ পাওয়া যায় ।

যথা:

 

(খ) অবস্থানঘটিত সমাবয়বতা (Positional Isomerism) :- একই কার্বন শৃঙ্খল যুক্ত জৈব যৌগে প্রতিস্থাপিত পরমাণু বা কার্যকরী মূলকের ভিন্ন অবস্থানের জন্য যে সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়, তাকে অবস্থান ঘটিত সমাবয়বতা বলে ।

যেমন:  

গ) কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা (Functional group Isomerism) :- একই আণবিক সংকেত বিশিষ্ট একাধিক যৌগে বিভিন্ন কার্যকরী মূলকের উপস্থিতির জন্য যে সমাবয়বতার সৃষ্টি হয়, তাকে কার্যকরী মূলক ঘটিত সমাবয়বতা বলে ।

যেমন— কার্বন, হাইড্রোজেন এবং অক্সিজেনের দ্বারা সমযোজী বন্ধনে উৎপন্ন C2H6O যা ওই পরমাণু ত্রয়ের দ্বারা একটি যৌগের আণবিক সংকেত । ওই যৌগটি আবার বিভিন্নভাবে বিন্যস্ত হয়ে দুটি যৌগ তৈরি করে : প্রথমটি C2H5OH (কার্যকরী মূলক —OH) এবং দ্বিতীয়টি CH3—O—CH3 (কার্যকরী মূলক —O—) । এই দুটি যৌগে উপাদান হিসাবে C, H  এবং O -এর ওজনের অনুপাত একই কিন্তু এরা ভিন্ন প্রকৃতির যৌগ । একটি হল অ্যালকোহল যা জলে দ্রাব্য এবং অন্যটি ইথার জলে দ্রাব্য নয় ।

একই আণবিক সংকেতযুক্ত ইথাইল অ্যালকোহল ও ডাইমিথাইল ইথারের তুলনা ।

যৌগ

আণবিক

সংকেত

গঠন ভৌত অবস্থা স্ফুটনাঙ্ক ধাতব Na -এর সঙ্গে বিক্রিয়া

[1]ইথাইল

    অ্যালকোহল

C2H6O সাধারণ অবস্থায় তরল এর স্ফুটনাঙ্ক 78°C

ধাতব Na -এর সঙ্গে

বিক্রিয়ায় H2 গ্যাস নির্গত হয় ।

[2] ডাইমিথাইল

     ইথার

C2H6O সাধারণ অবস্থায় গ্যাসীয় এর স্ফুটনাঙ্ক -24°C

ধাতব Na -এর সঙ্গে এর

কোনো বিক্রিয়া ঘটে না  ।

 

মন্তব্য : ইথাইল অ্যালকোহলডাইমিথাইল ইথারের আণবিক সংকেত একই, কিন্তু এদের গঠন আলাদা, তাই এদের ধর্মও আলাদা । এরা পরস্পর সমাবয়বী ।

*****

Related Items

সাবান (Soap)

সাবান হল উচ্চ আণবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি অ্যাসিড -এর সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ । একাধিক জৈব অ্যাসিডের লবণ হওয়ায় সাবানের নির্দিষ্ট কোনো সংকেত নেই । সাবান একটি মিশ্র লবণ । সাধারণ উষ্ণতায় সাবান অনুদ্বায়ী কঠিন পদার্থ ও জলে দ্রাব্য । ...

ইউরিয়া বা কার্বাইড (Urea)

ইউরিয়া নাইট্রোজেন ঘটিত একটি সার । 1828 খ্রিস্টাব্দে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোলার অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেট -কে উত্তপ্ত করে ইউরিয়া প্রস্তুত করেন । ইউরিয়া সাদা, গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী, কেলাসাকার কঠিন জৈব পদার্থ।এটি জলে দ্রাব্য । মানবদেহের এবং প্রাণীদেহের ...

অ্যামোনিয়াম সালফেট

অ্যামোনিয়াম সালফেট হল একটি নাইট্রোজেন ঘটিত অজৈব রাসায়নিক সার। অ্যামোনিয়াম সালফেট সাদা রঙের, গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী একটি অজৈব কেলাসিত লবণ । অ্যামোনিয়াম সালফেট জলে দ্রাব্য ও এর জলীয় দ্রবণ অম্লধর্মী । অ্যামোনিয়াম সালফেট তাপে ঊর্ধ্ব পাতিত হয় ...

কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল

কেলাস-জলযুক্ত কিউপ্রিক সালফেটকে ব্লু-ভিট্রিয়ল বলে। ব্লু-ভিট্রিয়ল সাধারণভাবে তুঁতে নাম পরিচিত । কপার সালফেট বা ব্লু-ভিট্রিয়ল গন্ধহীন, অনুদ্বায়ী ও গাঢ় নীলবর্ণের কেলাসিত অজৈব কঠিন পদার্থ। এটি একটি শমিত লবণ । জলে দ্রাব্য এবং জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে। ...

ব্লিচিং পাউডার বা বিরঞ্জক চূর্ণ

ব্লিচিং পাউডারের রাসায়নিক নাম ক্যালসিয়াম ক্লোরো-হাইপোক্লোরাইট । ব্লিচিং পাউডার থেকে ক্লোরিনের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায় । ব্লিচিং পাউডার জলীয় বাষ্প শোষণ করে, জলের সঙ্গে আংশিক বিক্রিয়া করে ক্যালশিয়াম ক্লোরাইড ও ক্যালশিয়াম হাইপো-ক্লোরাইট উত্পন্ন করে । ...