Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/19/2021 - 18:50

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া শুরু হয় । এই উদ্দেশ্যে আইনজীবী তারকনাথ পালিতের প্রচেষ্টায় ১৯০৬ খ্রিস্টাব্দের ২৫শে জুলাই কলকাতায় 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট' নামে একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠিত হয় । তারকনাথ পালিত নগদ চার লক্ষ টাকা এবং ৯২, আপার সার্কুলার রোডে অবস্থিত তার বসতবাড়ি এই ইনস্টিটিউটকে দান করেন । প্রমথনাথ বসু এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম অধ্যক্ষ এবং রাসবিহারী ঘোষ প্রথম সভাপতির স্থলাভিসিক্ত হন । এই প্রতিষ্ঠানে প্রথমদিকে দু-ধরনের পাঠক্রম চালু হয় —(i) তিন বছরের অন্তর্বর্তী পাঠক্রম ও (ii) চার বছরের মাধ্যমিক পাঠ্যক্রম । প্রবেশিকা পরীক্ষায় অনুর্তীর্ণ ছাত্ররা অন্তর্বর্তী পাঠক্রমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত । অন্তর্বর্তী বিভাগের এই ছাত্ররা ছাপানো, রং মাখানো, ছুতোরের কাজ, বিভিন্ন ধরনের খোদাই করা, সাবান তৈরি করা, চামড়া পাকা করা ইত্যাদি কাজ শিখত । পাঠক্রমের মধ্যে ছিল পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত ও ইংরেজি । প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ ছাত্ররা মাধ্যমিক পাঠক্রমে সুযোগ পেত । মাধ্যমিক পাঠক্রমে তিনটি প্রধান বিষয় ছিল— (i) যন্ত্রবিজ্ঞান ও বৈদ্যুতিক যন্ত্রবিজ্ঞান, (ii) ফলিত রসায়ন এবং (iii) ভূবিদ্যা । প্রমথনাথ বসু, শরৎ দত্ত, প্রফুল্ল মিত্র, যোগেশ ঘোষ, নিবারণ রায়, সত্যদেব প্রমূখ ব্যক্তিরা এই কারিগরি প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শিক্ষক ছিলেন । কিছুদিন পর প্রতিষ্ঠানটি সাময়িকভাবে অর্থনৈতিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়ে । তারকনাথ পালিত তাঁর দান করা বসতবাড়ি বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের থেকে ফেরত নিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিলে এই প্রতিষ্ঠানটি পঞ্চবটী ভিলা, ক্যানাল ইস্ট রোড, মানিকতলায় স্থানান্তরিত হয়ে যায় । পরে রাজবিহারী ঘোষের ১৩ লক্ষ টাকা দানে এবং মনীন্দ্রচন্দ্র নন্দী, আশুতোষ চৌধুরী, ব্যোমকেশ চক্রবর্তী প্রমুখের অর্থসাহায্যে বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট সাময়িক অর্থনৈতিক সমস্যা অতিক্রম করে নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করে । পরবর্তীকালে যাদবপুরে এই প্রতিষ্ঠানের কর্মকেন্দ্র গড়ে ওঠে । আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের পৌরহিত্যে নতুন পাঠক্রম চালু হয় । নতুন পাঠক্রমে পূর্তবিদ্যা ও যন্ত্র বিজ্ঞানের সঙ্গে রসায়ন প্রযুক্তিও অন্তর্ভুক্ত হয় । দেশীয় শিক্ষাব্যবস্থার ব্যাপক প্রসারের উদ্দেশ্যে 'বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ' ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের সঙ্গে একত্রে মিশে যায় । প্রতিষ্ঠানটির নতুন নাম হয় 'বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিক্যাল স্কুল' । এখানে কলা বিদ্যার পাশাপাশি পদার্থবিদ্যা, রসায়ন প্রযুক্তি, শিল্প প্রযুক্তি প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা হয় । বাংলার বহু শিক্ষিত যুবক এখান থেকে কারিগরিবিদ্যা লাভ করে স্বনির্ভর ও স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে । শিবপুর বি ই কলেজের সমতুল্য শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে 'বেঙ্গল ন্যাশনাল কলেজ অ্যান্ড টেকনিক্যাল স্কুল'টির নতুন নামকরণ হয় 'কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি' । কারিগরি শিক্ষার বিকাশে এই প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে ।

****

Comments

Related Items

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহের প্রতি শিক্ষিত বাঙালি সমাজের কীরূপ মনোভাব ছিল ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহকে শিক্ষিত বাঙালি সমাজ সাধারণভাবে সমর্থন করেননি ।

১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

প্রশ্ন : ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে সাঁওতালরা বিদ্রোহ করেছিল কেন ?

স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

প্রশ্ন : স্বামী বিবেকানন্দের ধর্মসংস্কারের আদর্শ ব্যাখ্যা কর ।

নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

প্রশ্ন : নারী ইতিহাসের ওপর একটি টীকা লেখ ।

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন : সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে নারীদের ভূমিকা বিশ্লেষণ কর ।