Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 01/06/2021 - 10:15

গোরা (Gora) of Rabindranath Tagore :-

ঔপনিবেশিক শাসনকালে ভারতবাসীদের মধ্যে জাতীয়তাবাদের বিকাশে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৯১০ খ্রিস্টাব্দে রচিত গোরা উপন্যাসটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । এই  উপন্যাসের কয়েকটি মুখ্য চরিত্র হল— গোরা, আনন্দময়ী, পরেশবাবু, বিনয়, ললিতা, সুচরিতা, মহিম, কৃষ্ণদয়াল প্রমূখ । উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র গোরা একজন আইরিশম্যানের পুত্র । সে বিদেশি, বিধর্মী, নিজের জন্ম পরিচয় না জেনে একজন হিন্দুর ঘরে মানুষ হয় । নিষ্ঠাবান হিন্দু হিসেবেই সে একজন ইংরেজবিদ্বেষী, খ্রিস্টান ধর্মবিরোধী হয়ে ওঠে । তার কাছে হিন্দু ধর্মের সবকিছুই পবিত্র । এখানেই গোরা চরিত্রটি উপন্যাসকে মহিমাময় করে তুলেছে । জাতীয়তাবোধ ও হিন্দুত্ব পরস্পরের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে যুক্ত হয়ে ধরা পড়েছে । গোরা বিভিন্ন গ্রামের বাসিন্দাদের সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিতে গিয়ে ভারতবর্ষের সত্যিকারের রূপটি চিনতে পারে এবং উপলব্ধি করে, শহরের শিক্ষিত সম্প্রদায়ের চেয়ে পল্লীগ্রামের মানুষজন অনেক বেশি সহজসরল । যথাযথ শিক্ষার প্রসার না ঘটায় এদের মধ্যে অনেকেই কুসংস্কারাচ্ছন্ন এবং প্রয়োজনে মানুষকে সহায়তা বা বিপদে ভরসা না দিয়ে সামাজিক আচারবিচারের কথা বলে মানুষের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করে ।

উপন্যাসের পটভূমি রচনাকালের ২৫ বছর আগের সমকালীন সমাজের সনাতন হিন্দুধর্ম ও নবজাত ব্রাহ্মন ধর্মের মানুষের দ্বন্দ্ব সংঘাতে সমাজজীবন উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল তার প্রতিচ্ছবি এবং একই সঙ্গে সমসাময়িক যুগের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় চিন্তাধারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন । এই উপন্যাসে ব্যক্তির সঙ্গে সমাজের, সমাজের সঙ্গে ধর্মের এবং ধর্মের সঙ্গে মানবসত্যের বিরোধ ও সমন্বয়ের ছোঁয়া স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান । গোরা ইংরেজিবিদ্বেষী কিন্তু হিন্দুধর্মের কুসংস্কার সে সহ্য করতে পারে না । প্রথমে সে হিন্দু আচারবিদ্বেষী হলেও ভারতীয় সভ্যতার প্রতি ব্রিটিশদের ঘৃণা ও বিদ্বেষ পোষণের জন্য পরে সে উগ্র হিন্দুত্ববাদী আদর্শের প্রতি আকৃষ্ট হয়, কিন্তু পরে তার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটে । মানবতাই হল তার ধর্ম ও মানুষ হল তার জাতি । পালিতা মা আনন্দময়ী -র মধ্যেই সে সমগ্র ভারতবর্ষেকে খুঁজে পায় । দেশপ্রেম, মানবপ্রেম ও বিশ্বাত্মবোধ মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়ে এই উপন্যাসে গোরা হলেন জাতীয়তাবাদের মূর্ত প্রতীক এবং তার মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভারতবাসীর মধ্যে স্বদেশ প্রেমের আদর্শ ছড়িয়ে দিয়েছেন ।

****

Comments

Related Items

শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

প্রশ্ন : শ্রীরামপুর মিশন প্রেস কিভাবে একটি অগ্রনী মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানে পরিণত হল ?

উঃ- ১৮০০ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৮৩৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৮ বছর বাংলা মুদ্রণ ও প্রকাশনায় শ্রীরামপুর মিশনের অবদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ।

বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

প্রশ্ন : বাংলায় মুদ্রণ শিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্যের কীরূপ অবদান ছিল ?

১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

প্রশ্ন : ১৮৫৭ -এর মহাবিদ্রোহকে কি সামন্ত-শ্রেণির বিদ্রোহ বলা যায় ?

উঃ- ১৮৫৭ সালের মহাবিদ্রোহের সময় থেকেই এই বিদ্রোহের চরিত্র বা প্রকৃতি নিয়ে বিভিন্ন ধারার ইতিহাসচর্চার নানা ধরনের গবেষণালব্দ মতামত পাওয়া যায় ।

কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

প্রশ্ন : কী উদ্দেশ্যে ঔপনিবেশিক সরকার অরণ্য আইন প্রণয়ন করেন ?

এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : এদেশের চিকিৎসাবিদ্যার ক্ষেত্রে কলিকাতা মেডিকেল কলেজের কীরূপ ভূমিকা ছিল ?