ইতিহাসের ধারণা ও আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্য

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 09/21/2020 - 07:05

ইতিহাসের ধারণা :- ইতিহাস কথাটির অর্থ হল অতীতে যা ঘটেছে তার বিবরণ । সুদুর অতীত, নিকট অতীত, এমনটি গতকালের ঘটনাও অতীত । সুদুর অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা থেকে শুরু করে গতকালের ঘটনাও ইতিহাসের বিষয়বস্তু । ঐতিহাসিক তাঁর ব্যক্তিগত অনুভব এবং বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে বিভিন্ন উপাদান থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ইতিহাস রচনা করেন ।   

আধুনিক ইতিহাসচর্চার বৈচিত্র্য :- মানুষের অতীত কর্মকাণ্ড হল ইতিহাসের বিষয়বস্তু । ইতিহাসচর্চা হল ইতিহাস-রচনার ধারাবাহিক বিবর্তন বা প্রগতির কাহিনির বিবরণ । ইতিহাস-রচনার বিভিন্ন ধারণা ও রীতি এবং প্রকৃতিগত ধারাবাহিক পরিবর্তনের ইতিহাস হল ইতিহাসচর্চা । যুগ যুগ ধরে ইতিহাস কীভাবে লেখা হয়ে চলেছে তার ধারণা মেলে ইতিহাসচর্চার মাধ্যমে । আধুনিক ইতিহাসচর্চায় ইতিহাসের বিষয়বস্তুকে সমাজের একেবারে তলা থেকে বিশ্লেষণ করা শুরু হয়েছে । ঐতিহাসিক ঘটনার মূল চালিকাশক্তি অথচ অনালোচিত সমাজের গরিষ্ট শ্রেণির ভূমিকা তুলে ধরার প্রচেষ্টা দেখা যাচ্ছে । এই ধরণের আধুনিক ইতিহাসচর্চায় সমাজের নিম্নবর্গীয় মানুষের ভূমিকাকেই মুখ্য চরিত্র হিসেবে গ্রহণ করা হয় । কোনো ঘটনার মূল চরিত্রের বা আন্দোলনের নেতৃবর্গের কৃতিত্ব বর্ণনাই শুধু ইতিহাস নয়, সেই ঘটনা বা আন্দোলনে সমাজের গরিষ্ট অংশের ভুমিকা তুলে ধরার মধ্যে রয়েছে বৃহত্তর ইতিহাস । সমাজ পরিবর্তনের ধারাকে বুঝতে ইতিহাসচর্চায় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে মানুষের সামাজিক-সাংকৃতিক কর্মকাণ্ড । খেলা, বিনোদন, খাদ্যাভ্যাস, পোষাক-পরিচ্ছদ, রুচি, সাহিত্য-সংস্কৃতির চর্চার মধ্যে ব্যক্তি ও সমাজের সম্পর্ক স্পষ্ট হয় । সামাজিক অবস্থান, শ্রেণিগত বিভেদ, নারী-পুরুষ সম্পর্ক এইসব সাধারণ মানুষের জীবন ও সমাজে কীভাবে মিশে আছে তা ইতিহাসচর্চার এক একটি ধারায় পর্যালোচিত হয় । এই সব ধারাগুলির মধ্যে নতুন সামাজিক ইতিহাস, খেলার ইতিহাস, খাদ্যাভাসের ইতিহাস, শিল্পচর্চার ইতিহাস, দৃশ্য শিল্পের ইতিহাস, পোষাক-পরিচ্ছদের ইতিহাস, সামরিক ইতিহাস, যানবাহন-যোগাযোগ ব্যবস্থায় ইতিহাস, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ও চিকিৎসাবিদ্যার ইতিহাস, স্থাপত্যের ইতিহাস, স্থানীয় ইতিহাস, শহরের ইতিহাস, পরিবেশের ইতিহাস ও নারী ইতিহাস প্রভৃতি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ।

*****

Comments

Related Items

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Quit India Movement and the Working Class):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ডাক দেয় । এই আন্দো

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (The Civil Disobedience Movement and the Working Class) :-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ গ্রহণ করে । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন যথেষ্ট শ

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি

ওয়ার্কার্স অ্যান্ড পেজেন্টস পার্টি (Workers and Peasants Party) :-

কুতুবুদ্দিন আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম, অধ্যাপক হেমন্ত সরকার, সামসুদ্দিন হোসেন প্রমুখ ব্যক্তির উদ্যোগে ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দের ১লা নভেম্বর বাংলায় 'লেবার স্বরাজ পার্টি অব দা ইন্ডিয়ান

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Non Co-operation Movement and the Working Class):- 

অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের সময় সারা ভারতে শ্রমিকরা আন্দোলনে শামিল হয় । এই সময় বাংলায় শ্রমিক আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী ওঠে । শ্রমিকদের কাজের সময় কমানো, ব

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন (Anti-Partition Movement and the Working Class):-

ব্রিটিশ শাসনের প্রথমদিকে পাশ্চাত্য শিক্ষায় শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা না করলেও ভারতের নিম্নবর্গের মানুষ বিশেষত শ্রমিক