বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ

Submitted by avimanyu pramanik on Wed, 05/23/2012 - 08:58

বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ:-

বালিয়াড়ি (Sand Dunes) : বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে নানা রকম ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, বালিয়াড়ি হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । মরু অঞ্চলে বালির পাহাড়গুলিকে বালিয়াড়ি বলে । বায়ুপ্রবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে শিলাধূলি ও বালির সৃষ্টি হয়, সেগুলি আবার কোথাও কোথাও জমা হয়ে নতুন ভূমিরূপ গঠন করে । বায়ুপ্রবাহের সঞ্চয়কার্যের ফলে কোনো বিস্তীর্ণ স্থান জুড়ে উঁচু ও দীর্ঘ বালির স্তূপ গঠিত হলে তাকে বালিয়াড়ি বলে । ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে নির্দিষ্ট প্রতিবন্ধকতা বা অসমতল ভূপ্রকৃতির নির্ভরতা ছাড়াই যে চলমান বালির স্তুপ গড়ে ওঠে, তাকে বালিয়াড়ি বলে । তবে বিজ্ঞানীরা বর্তমানে স্থির বালির স্তুপকেও বালিয়াড়ি বলে থাকেন । মরুভূমি ছাড়া সমুদ্র উপকূলেও বালিয়াড়ি দেখা যায়, যেমন — দিঘা বালিয়াড়ি । তবে সমুদ্র উপকূলের বালিয়াড়ি সাধারনত আকারে ছোটো হয় । বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে বালিয়াড়ি গতিশীল হয় । বালিয়াড়ি কখনো ভাঙ্গে আবার কখনো গড়ে, আবার আকৃতির পরিবর্তন ঘটায় । রাজস্থানের মরুভূমিতে এরূপ চলন্ত বালিয়াড়িকে ধ্রিয়ান বলা হয় ।

বিখ্যাত বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড বালিয়াড়িকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেন । যথা— (i) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান, (ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি ।

(i) তির্যক বালিয়াড়ি বা বার্খান (Crescent Dunes or Barchans) : তুর্কি শব্দ বার্খান কথার অর্থ 'বালির পাহাড়' । মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতিপথে আড়াআড়িভাবে যে আধখানা চাঁদের মতো বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে তাকে বার্খান বা অর্ধচন্দ্রাকৃতি বালিয়াড়ি বলে । বার্খান বালিয়াড়ির বায়ুমুখী সামনের দিকটি উত্তল এবং পিছনের দিকটি অবতল ঢালবিশিষ্ট হয় । বার্খানের দুটি বাহুর দু-প্রান্তে শিং -এর মতো শিরা অবস্থান করে । বার্খানগুলির উচ্চতা সাধারণত ১৫ - ২০ মি. এবং বিস্তার ৪০ - ৮০ মি. পর্যন্ত হয়ে থাকে । একাধিক বার্খান পরপর পাশাপাশি গঠিত হওয়ার ফলে যে আঁকাবাঁকা ও সারিবদ্ধ শৈলশিরার মতো বালিয়াড়িশ্রেণির সৃষ্টি হয় তাদের একত্রে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলা হয় । অনেকটা পিরামিডের মতো দেখতে তির্যক বালিয়াড়িগুলিকে রোর্ডস বালিয়াড়ি বলে । বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হলে বার্খানগুলি রোর্ডস বালিয়াড়িতে পরিণত হয় । পৃথিবীর সব উষ্ণ মরুভূমিতেই অসংখ্য বার্খান দেখা যায় ।

(ii) অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বা সিফ বালিয়াড়ি (Longitudinal Dunes or Seif Dunes) : মরু অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহের গতি পথের সঙ্গে সমান্তরালে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়ি বলে । অনুদৈর্ঘ্য বালিয়াড়িগুলির মধ্যে যেগুলি খুব দীর্ঘ কিন্তু সংকীর্ণ তাদেরকে সিফ বালিয়াড়ি বলে । এই বালিয়াড়ি দেখতে অনেকটা খোলা তরবারির মতো । এর সংকীর্ণ শৈলশিরার মতো শীর্ষদেশ ছুরির ফলার মতো হয়ে থাকে । বিজ্ঞানী ব্যাগনল্ড -এর মতে, বার্খানের এক বাহুর দিকে বায়ুর গতিবেগ বেশি হলে তা ক্রমশ অগ্রসর হয়ে সিফ বালিয়াড়ি গঠিত হয় । সাধারণত সিফ বালিয়াড়ির উচ্চতা ১০ - ৩৫ মি. হলেও বিস্তার তার উচ্চতার থেকে প্রায় ছ-গুণ বেশি হয় । তবে ইরান মরুভূমিতে প্রায় ২১০ মি. উঁচু সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় । দুটি সিফ বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী ফাঁক বা করিডোরগুলিকে সাহারায় 'গাসি' বলে । থর, সাহারা, কালাহারি প্রভৃতি মরুভূমিতে সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।

লোয়েস সমভূমি (Loess Plain) : বায়ুপ্রবাহের বহন ও সঞ্চয়কাজের ফলে যে সমস্ত ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়, লোয়েস সমভূমি হল তার মধ্যে অন্যতম একটি ভূমিরূপ । জার্মান শব্দ লোয়েস কথার অর্থ 'সূক্ষ্ম পলি' । মরু অঞ্চলে বায়ুতাড়িত হালকা হলুদ রঙের অতি সূক্ষ্ম ও তীক্ষ্ণ বালিকণাকে লোয়েস বলে । চুনময় লোয়েস সাধারণত ক্যালসাইট, কোয়ার্টজ, ফেলসপার প্রভৃতি খনিজ সমৃদ্ধ হয় । প্রবল বায়ুপ্রবাহ দ্বারা পরিবাহিত হয়ে লোয়েস কণা বহুদূরে গিয়ে অন্যত্র সঞ্চিত হয়ে যে সমভূমি গঠন করে তাকে লোয়েস সমভূমি বলে । লোয়েস দ্বারা গঠিত সমভূমির মাটি খুবই উর্বর । মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে শীতকালীন উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু বাহিত হয়ে বিপুল পরিমাণে লোয়েস কণা উড়ে গিয়ে উত্তর চিনের হোয়াং হো নদীর অববাহিকার হোয়াংতু অঞ্চলে দীর্ঘ দিন ধরে সঞ্চিত হয়ে সেখানে পৃথিবীর বৃহত্তম লোয়েস সমভূমি গঠন করেছে ।

প্লায়া হ্রদ (Playa) প্রবল বায়ুপ্রবাহের ফলে মরুভূমির বালি অপসারিত হয়ে ছোটো-বড়ো অনেক গর্তের সৃষ্টি হয় । এই গর্তগুলো কখনো কখনো খুব গভীর হয়ে ভূগর্ভের জলস্তরকে স্পর্শ করে । তারপর যখন ভূগর্ভস্থ জল ও বৃষ্টির জল জমা হয়ে সেখানে হ্রদের সৃষ্ঠি হয় । মরুভূমির প্রখর তাপে অত্যধিক বাষ্পীভবনের জন্য সাধারণত এই সব হ্রদের জল লবণাক্ত হয়ে থাকে । এই ভাবে যে হ্রদ সৃষ্টি হয় তাকে লবণ হ্রদ বলে । এই সব লবণ হ্রদ আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে প্লায়া হ্রদ ও আফ্রিকায় শটস নামে পরিচিত ।

রাজস্থানের সম্বর হ্রদ হল প্লায়া হ্রদের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, এই অঞ্চলে প্লায়া হ্রদগুলি ধান্দ নামে পরিচিত ।

মরু অঞ্চলে সামান্য বৃষ্টির জলে সৃষ্ট সাময়িক নদী প্রবাহ যেসব নুড়ি, বালি, পলি প্রভৃতি জমা করে সমতল জায়গা গঠন করে তা বাজাদা (Bajada) নামে পরিচিত । এখানকার পর্বতের পাদদেশীয় অঞ্চলের ক্ষয়প্রাপ্ত প্রায় সমতলভূমিকে পেডিমেন্ট (Piedmont) বলে ।

*****

Related Items

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment)

পরিবেশের ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effect of wastes on environment) : বর্জ্য পরিবেশকে নানাভাবে প্রভাবিত করে থাকে । যেমন — (ক) ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, (খ) মৃত্তিকা সংক্রমণ, (গ) দূষণ, (ঘ) লিশেট ইত্যাদি ।

বর্জ্যের উৎস (Source of waste)

বর্জ্যের উৎস (Source of waste) : বর্তমান আধুনিক নাগরিক সভ্যতায় মানুষের নানাবিধ কার্যকলাপেরপরিধিই হল বিভিন্ন ধরনের বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্র । বর্জ্যের উৎসের প্রধান ক্ষেত্রগুলি হল — (১) গৃহস্থালির বর্জ্য, (২) শিল্প বর্জ্য, (৩) কৃষিজ বর্জ্য,  (৪) পৌর

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste)

বর্জ্য পদার্থের প্রকারভেদ (Types of waste) : বিভিন্ন কারণে পরিবেশে নানা প্রকারের বর্জ্য উৎপন্ন হয়ে থাকে । বর্জ্য পদার্থ তিন প্রকার, যেমন— (ক) কঠিন বর্জ্য, (খ) তরল বর্জ্য ও (গ) গ্যাসীয় বর্জ্য ।

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্যের ধারণা (Concept of Waste) : 'বর্জ্য' কথাটির অর্থ হল 'যা বর্জনযোগ্য' । যে-কোনো কঠিন, তরল অথবা গ্যাসীয় সম্পদকে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারের পরে যে মূল্যহীন, নষ্ট বা খারাপ হয়ে যাওয়া অব্যবহার্য বস্তু পড়ে থাকে, যা সরাসরি মানুষের কাজে না লেগে পরিবেশ দূষণ

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?

প্রতিদিন একই সময়ে জোয়ার ভাটা হয় না কেন ?