ভাইরাস ও ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য

Submitted by arpita pramanik on Tue, 12/25/2012 - 14:59

ভাইরাস ও ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য (Virus, Microbes, Diseases and Hygiene)

ভাইরাস (Virus):- ভাইরাস কথার শব্দতত্ত্বগত অর্থ 'বিষ' [poison] । 1796 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী এডওয়ার্ড জেনার [Jenner] সর্বপ্রথম ভাইরাস আক্রান্ত বসন্ত রোগের কথা উল্লেখ করেন । 1936 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের ব্যাডেন [F.C.Bawden] এবং পিরী [N.W.Pirie] পরীক্ষা করে দেখান যে, ভাইরাসে নিউক্লিক অ্যাসিডপ্রোটিন আছে এবং ভাইরাসগুলো নিউক্লিও প্রোটিন ছাড়া আর কিছুই নয় ।

জলে, স্থলে, অন্তরীক্ষে সর্বত্রই ভাইরাসের অবস্থিতি দেখা যায় । মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীদের পৌষ্টিক নালিতে, পানীয়তে, সবজিতে, ভাইরাস-আক্রান্ত রোগীর মলমূত্রে, থুথুতে ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষনীয় ।

ভাইরাসের সংজ্ঞা [Definition of Virus]:- নিউক্লিওপ্রোটিন দ্বারা গঠিত, অ-কোশীয়, রোগ সৃষ্টিকারী, সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম, কেবল পোষকের দেহেই বংশবিস্তারে সক্ষম জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের একধরনের বস্তুকে ভাইরাস বলে ।

 

ভাইরাসের বৈশিষ্ঠ্য (Characteristics of Virus)

1. ভাইরাস জীব ও জড়ের মধ্যবর্তী পর্যায়ের একরকম রোগ সৃষ্টিকারী বস্তু [organism] ।

2. ভাইরাসের দেহে সাইটোপ্লাজম, নিউক্লিয়াস বা নিউক্লিয় বস্তু, কোশ-অঙ্গাণু ইত্যাদি না থাকায় ভাইরাস অকোশীয় [acellular] ।

3. ভাইরাস হল অতি সুক্ষ্মাতিসুক্ষ্ম এক ধরনের অণু-আণুবীক্ষণিক [Sub-microscopic] বস্তু, যা সহজেই অণু-পরিস্রুতির [microfilter] অতি সুক্ষ্ম ছিদ্রের মধ্য দিয়ে অতিসহজেই অতিক্রম করতে পারে (ব্যাকটিরিয়া পারে না ) ।

4. ভাইরাস আকারে এতই ছোটো যে, এদের কেবলমাত্র ইলেকট্রন অনুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না ।

5. ভাইরাস বাধ্যতামূলক পরজীবী, এদের কর্ম তত্পরতার চক্রে দুইটি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র দশা দেখা যায়, যথা: বহিঃকোশীয় দশা এবং অন্তঃকোশীয় দশা । বহিঃকোশীয় দশায় ভাইরাস নির্জীব বা জড় বস্তুর মতো আচরণ করে এবং অন্তঃকোশীয় দশায় ভাইরাস পোষককোশের মধ্যে সজীব অর্থাৎ সজীব প্রাণীর মতো আচরণ করে । ভাইরাস পোষক প্রাণীর দেহে নানা রকম রোগ সৃষ্টি করে , যেমন : ইনফ্লুয়েঞ্জা, বসন্ত, পোলিও, এডস প্রভৃতি রোগ । প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য পোষককে আক্রান্ত করার ব্যাপারে ভাইরাসগুলি বিশেষভাবে নির্দিষ্ট [specific] । উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, পোলিও ভাইরাস শুধুমাত্র বাঁদর ও মানুষকে আক্রমণ করে, কিন্তু অন্য কোনো প্রাণীকে আক্রমণ করে না ।  

6. ভাইরাস কেবল পোষক দেহের কোশেই প্রজননক্ষম । পোষক কোশের বাইরে এরা জড় বস্তুর মতো আচরণ করে । 

7. একমাত্র প্রতিলিপি গঠনের [relication] মাধ্যমেই ভাইরাস কণিকার বংশবৃদ্ধি ঘটে ।

8. ভাইরাসের নিজস্ব কোনো বিপাক ক্রিয়া করার ক্ষমতা নেই এবং চলন ক্ষমতা নেই ।

9. ভাইরাস আয়তনে বাড়ে না এবং বাইরের কোনও উদ্দীপনায় সাড়া দিতে পারে না ।

10. ভাইরাসের দেহে নিউক্লিক অ্যাসিড থাকে এবং তা যে-কোনোও এক রকমের হয়, অর্থাৎ শুধুমাত্র DNA অথবা RNA প্রকৃতির । কখনো কোনও ভাইরাসের দেহে দু'রকমের নিউক্লিক অ্যাসিড একসঙ্গে থাকে না ।

*****

Related Items

মাছ ও পায়রার অভিযোজন বৈশিষ্ট্যের পার্থক্য

মাছ জলচর প্রাণী। পায়রা খেচর প্রাণী। মাছের দেহ আঁশ অথবা পিচ্ছিল মিউকাস দিয়ে আবৃত । পায়রার দেহ পালক দ্বারা আবৃত । মাছের গমন অঙ্গ হল পাখনা । পায়রার গমন অঙ্গ হল একজোড়া ডানা এবং একজোড়া পা। মাছের মেরুদন্ডের দু'পাশে মায়োটোম পেশি থাকে, যা মেরুদন্ডকে ...

পায়রার অভিযোজন

পায়রা খেচর প্রাণী । আকাশে ওড়ার জন্য পায়রার নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় । পায়রার উড্ডয়নে সাহায্যকারী অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য দেহের তাপ সংরক্ষণে সাহায্য করে । দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে । পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও ...

রুই মাছের অভিযোজন

রুই মাছ মুখ্য জলজ প্রাণী । জলে বসবাস করার জন্য এদের দেহে নিম্নলিখিত অভিযোজনগুলি দেখা যায় । রুই মাছের দেহ বেম বা মাকুর মতো । দেহ দু'পাশ থেকে চ্যাপ্টা এবং দেহ থেকে কোনো প্রবর্ধক বেরিয়ে থাকে না । জলে সাঁতার কাটার সময় জলের গতি রোধ করার জন্য দেহের গঠন ...

সুন্দরী বা সুঁদরী গাছের অভিযোজন

সুন্দরী এক রকমের লবণাম্বু উদ্ভিদ । এরা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল - মাটি লবণাক্ত থাকায় মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, মূল মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে । মাটি কর্দমাক্ত ও রন্ধ্রবিহীন ...

ক্যাকটাসের অভিযোজন

ফণীমনসা, তেসিরা মনসা ইত্যাদি ক্যাকটাস জাতীয় উদ্ভিদ । ক্যাকটাস অল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত শুষ্ক ও বালুকাময় স্থানে জন্মায় । এইরকম পরিবেশে বাস করার জন্য এদের জাঙ্গল উদ্ভিদ [Xerophyte] বলে । ক্যাকটাসের উল্লেখযোগ্য অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল ক্যাকটাসের মূলতন্ত্র সুগঠিত ...