ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ (Bacteriophage)
ব্যাকটিরিওফাজের সংজ্ঞা:- যেসব ভাইরাস ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণ এবং ধ্বংস করে, তাদের ব্যাকটিরিওফাজ [Bacteriophage] বা ফাজ-ভাইরাস [Phase Virus] বলে । ফাজ [phase] কথার অর্থ ভক্ষক [eater] ।
ব্যাকটিরিওফাজের উদাহরণ :- 1917 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী দ্য হেরেলী [d'Herelle] ব্যাকটিরিয়া আক্রমণকারী (ভক্ষণকারী) ভাইরাসদের ব্যাকটেরিয়া-ভাইরাস বা ব্যাকটিরিওফাজ [Bacteriophage] বা ফাজ [phase] নামে অভিহিত করেন । এখন পর্যন্ত যেসব ব্যাকটিরিওফাজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ভালো করে জানা গিয়েছে, তাদের মধ্যে 'T' শ্রেণির [T-series] অন্তর্গত ব্যাকটিরিওফাজই প্রধান । এই শ্রেণির ব্যাকটিরিওফাজদের 1—7 সংখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে । দেখা গিয়েছে যে, T শ্রেণির সমস্ত ভাইরাস এসিরিকিয়া কোলাই [E. coli] ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণ করে । T শ্রেণির সমস্ত [1—7] ব্যাকটিরিওফাজ এক-তন্ত্রী DNA ও প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত । T3 এবং T7 ছাড়া সমস্ত ফাজ ষড়ভূজ আকারের মস্তক এবং দীর্ঘ পুচ্ছবিশিষ্ট এবং দেখতে অনেকটা ব্যাঙের লার্ভার মতো হয় । T3 এবং T7 ফাজের পুচ্ছ খুবই ছোটো । T3 এবং T7 ছাড়া অন্যান্য ফাজের পুচ্ছটি দৃঢ় ও সংকোচনশীল আবরণ বিশিষ্ট অথবা নমনীয় ও সংকোচনশীল আবরণবিহীন হতে পারে । এসিরিকিয়া কোলাই ব্যাকটিরিয়াকে আক্রমণকারী T-ফাজ তাদের শেষপ্রান্তে অবস্থিত কাঁটাওয়ালা [Spike] পাদফলক থেকে উদ্ভুত পুচ্ছতন্তুর সাহায্যে পোষকের (ব্যাকটিরিয়ার) দেহে অবস্থান করে এবং কাঁটার সাহায্যে নিজেকে পোষকের দেহে শক্ত করে আটকে থাকে । নীলাভ সবুজ শৈবাল আক্রমণকারী ভাইরাসদের সায়ানোফাজ বলা হয়, এরা DNA ভাইরাস । এদের দেহে একটি বহু-পার্শ্ববিশিষ্ট মস্তক এবং একটি দীর্ঘ ও প্যাঁচানো পুচ্ছ থাকে ।
ব্যাকটিরিওফাজের গুরুত্ব :- ব্যাকটিরিওফাজ [T2] কলেরা, টাইফয়েড, আমাশয় প্রভৃতি রোগ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া দেহে পরজীবী হিসেবে বসবাস করার মাধ্যমে এবং ওই সব ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়াদের ধ্বংস করার মাধ্যমে ওই সমস্ত রোগ আক্রমণের হাত থেকে পরোক্ষভাবে আমাদের রক্ষা করে —তাই ব্যাকটিরিওফাজকে উপকারী ভাইরাস বলা হয় ।
*****
- 1641 views