পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ :
রোগ এবং স্বাস্থ্যবিধি (Desease and Hygiene)
রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ এবং আক্রান্ত পোশাকের দ্বারা সংক্রামিত অপ্রাণীবাচক পদার্থের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় ।
[A] পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ:- আর্থ্রোপোডা পর্বের পতঙ্গ শ্রেণির অন্তর্গত বিভিন্ন প্রাণীর মাধ্যমে বিভিন্ন সংক্রমক রোগ ছড়ায় । এই প্রাণীগুলিকে ওই সব রোগের বাহকরূপে গণ্য করা যেতে পারে । মানবরোগ সংক্রমণের উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ বাহক হল মাছি, মশা ।
মাছি [House fly]:- মাছির জীবনচক্রে ডিম, লাভা, পিউপা এবং পূর্নাঙ্গ এই চারটি দশা পাওয়ায় যায় । পরিণত মাছি ধূসর বর্ণের এবং প্রায় 6.5 mm. লম্বা । এদের দেহ (i) মস্তক (ii) বক্ষ এবং (iii) উদর —এই তিন ভাগে বিভক্ত । মস্তকে একজোড়া শুঙ্গ, একজোড়া পুঞ্জাক্ষি এবং খাদ্য শোষণের জন্য একটি চোষক নল বা প্রোবোসিস থাকে । উদর অংশটি খন্ডবিশিষ্ট এবং হালকা ও গাঢ় ডোরাযুক্ত ।
[1] রোগ বিস্তারে মাছির ভুমিকা:- মাছি যখন রোগীর মল-মূত্র বা বমির ওপর বসে, তখন তাদের গায়ে, পায়ে এবং ডানায় রোগ জীবাণু ছড়িয়ে যায় । পরে যখন আঢাকা খাবারের ওপর বসে, তখন ওইসব রোগ জীবাণু খাবারে মিশে যায় এবং সেই খাবার খেয়ে মানুষ রোগাক্রান্ত হয় । মাছির মাধ্যমে সংক্রামিত উল্লেখযোগ্য রোগগুলি হল —কলেরা, উদরাময়, আমাশয়, আন্ত্রিক, জ্বর, যক্ষ্মা, কুষ্ঠ, আনথ্রাক্স, পোলিও, ক্ষতে সংক্রমণ খাদ্যে বিষক্রিয়া, সংক্রামক হেপাটাইটিস ইত্যাদি ।
[2] মাছি দমনের উপায়:-
[a] মাছির বংশবৃদ্ধি রোধ করার জন্য মল, মূত্র, গোবর, ঘোড়ার বিষ্ঠা, নোংরা আবর্জনা প্রভৃতি যাতে জমে উঠতে না পারে, সেই জন্য লোকালয় থেকে দূরে নির্দিষ্ট স্থানে ওইগুলোকে নিক্ষেপ করা উচিৎ ।
[b] উপদ্রুত এলাকায় নানারকম কীটনাশক ঔষধ স্প্রে করা দরকার । আবর্জনাময় স্থানে ব্লিচিং পাউডার, ফিনাইল ইত্যাদি ছড়াতে হবে ।
[c] মাছির উপদ্রব বাড়লে জলে ফিনাইল গুলে বারান্দা, উঠান, করিডোর ইত্যাদি মুছতে হবে ।
[d] খাদ্য বস্তুর ওপর যাতে মাছি বসতে না পারে, সেইজন্য খাবার সবসময় ঢেকে রাখতে হবে ।
[e] যেখানে-সেখানে মল-মূত্র ত্যাগ, কফ, থুতু ইত্যাদি ফেলা চলবে না ।
মশা [Mosquito]:- মশা সন্ধিপদ পর্বের অন্তর্ভুক্ত পতঙ্গ শ্রেণির অন্তর্গত একরকমের অনিষ্টকারী পতঙ্গ । আমাদের দেশে সাধারণত তিন রকমের মশা দেখা যায়, যেমন : অ্যানোফিলিস [Anopheles], কিউলেক্স [Culex] এবং এডিস [Aedes] । এই প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য যে, কেবলমাত্র স্ত্রী-মশারাই রোগ জীবাণু বহন করে ।
[1] রোগ বিস্তারে মশার ভুমিকা:- স্ত্রী-মশা যখন রোগীর দেহ থেকে রক্ত পান করে, তখন রোগ জীবাণু রোগীর দেহ থেকে মশার দেহে আসে । আবার রোগজীবাণু বহনকারী মশা যখন সুস্থ মানুষের রক্ত পান করে, তখন ওই রোগজীবাণু সুস্থ মানুষের রক্তে মিশে যায় । এইভাবে মশা এক মানুষের দেহ থেকে অন্য মানুষের দেহে রোগ বিস্তার করে ।
মশা যেসব রোগ জীবাণু বহন করে সেগুলি হল :
[ক] অ্যানোফিলিস — ম্যালেরিয়া ।
[খ] কিউলেক্স — গোদ, এনকেফালাইটিস ।
[গ] এডিস — ডেঙ্গু, পীতজ্বর, জাপানি-বি-এনকেফালাইটিস ।
[2] মশা দমনের উপায়:-
[a] বাড়ির আশ-পাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ।
[b] উপদ্রুত এলাকায় বিভিন্ন রকম কীটনাশক ওষুধ —বেগন, ফ্লিট, ইত্যাদি স্প্রে করে পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংস করা ।
[c] ছোটোখাটো পুকুর, ডোবা প্রভৃতির গর্ত বুজিয়ে ফেলা এবং নর্দমা পরিষ্কার রাখা ।
[d] মশার প্রজনন স্থানে তেল ঢেলে বা কীটনাশক ওষুধ ছিটিয়ে মশার ডিম, লার্ভা, পিউপা ইত্যাদি ধ্বংস করা ।
[e] পুকুরে মশার লার্ভা ভক্ষণকারী মাছ, যেমন —তেচোখা, খলসে, তেলাপিয়া, গাপ্পি প্রভৃতি মাছ পোষা উচিত । এছাড়া
[f] রাত্রে মশারি খাটিয়ে শোয়া দরকার । মশা তাড়ানোর জন্য ধূপ-ধূনো এবং ওডোমস, ম্যাট ও রিপ্লেক্স জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করা উচিত ।
*****
- 2857 views