সুন্দরী বা সুঁদরী গাছের অভিযোজন

Submitted by arpita pramanik on Sun, 12/23/2012 - 21:19

সুন্দরী বা সুঁদরী গাছের অভিযোজন (Adaptation of Sundari)

সুন্দরী এক রকমের লবণাম্বু [Halophyte] উদ্ভিদ । এরা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার কর্দমাক্তলবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল :

[1] মূল:-

[a] মাটি লবণাক্ত থাকায় মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, মূল মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে ।

[b] মাটি কর্দমাক্ত ও রন্ধ্রবিহীন হওয়ায় ওই মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ খুব কম । তাছাড়া এসব এলাকা বেশির ভাগ সময়েই জলপ্লাবিত  থাকে ।  মাটিতে প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণ দ্রবীভুত অবস্থায় থাকে, তাই উদ্ভিদের কিছু শাখা-মূল অভিকর্ষের বিপরীত দিকে ধাবিত হয়ে মাটির উপরে উঠে আসে । এইসব মূলের উপরিভাগে অসংখ্য সূক্ষ্ম শ্বাস ছিদ্র বা 'নিউম্যাটোফোর' থাকে, এই ছিদ্রের  মাধ্যমে মূলগুলি বায়ুমন্ডল থেকে অক্সিজেন শোষণ করে । এই রকম মূলকে শ্বাসমূল বলে ।

[c] গাছগুলি নরম ও কর্দমাক্ত মাটিতে জন্মানোর ফলে, যাতে গাছগুলো সহজে না পড়ে যায়, তার জন্য কান্ডের গোড়ার দিক থেকে এক রকমের অস্থানিক মূল বেরিয়ে মাটিতে প্রবেশ করে —এই মূলগুলিকে ঠেস মূল বলে ।

[d] সুন্দরী গাছের গুঁড়ির নীচের দিকের চারপাশ থেকে কতকগুলি চ্যাপ্টা এবং তক্তার মতো অংশ বের হয়ে মাটির মধ্যে প্রবেশ করে । তক্তার মতো এই অংশগুলিকে অধিমূল বলে । অধিমূল সুন্দরীর গুঁড়িকে খাড়াভাবে থাকতে সাহায্য করে ।

 

[2] কান্ড:-

[a] সুন্দরী গাছ খর্বাকার এবং গম্বুজাকার, কান্ড সাধারণত দৃঢ় এবং শাখাপ্রশাখাযুক্ত ।

[b] কান্ডে যান্ত্রিক কলা ও সংবহন কলা সুগঠিত ।

[c] কান্ডের ত্বকে পুরু কিউটিকল থাকে । ত্বক অনেক সময় মোমযুক্ত পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে ।

 

[3] পাতা:-

[a] পাতাগুলি স্থুল, রসালো এবং খসখসে ।

[b] পাতার ত্বক পুরু এবং কিউটিকলযুক্ত, পাতার ফলকে মোমের আবরণ থাকায় পাতা চকচকে হয় । বাষ্পমোচন রোধের জন্য পাতার এমন অভিযোজন হয়েছে । 

[c] পাতার প্যালিসেড কলা সুগঠিত এবং কোশান্তর-রন্ধ্র সাধারণত থাকে না ।

[d] পত্ররন্ধ্রগুলি নিম্নত্বকের ভিতরের দিকে অবস্থিত ।

 

সুন্দরী গাছের অভিযোজনের বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনগত গুরুত্ব

অভিযোজিতঅঙ্গ  বৈশিষ্ট্য অভিযোজনগত গুরুত্ব
১. পাতা (ক) পাতাগুলো পুরু ও চকচকে মোমের দ্বারা আবৃত থাকে । (ক) বাষ্পমোচনের হার কমানোর জন্য, কারণ বাষ্পমোচন বেশি হলে মাটি থেকে দ্রবীভূত খনিজ লবণসহ জল বেশি প্রবেশ করে না ।
(খ) পাতার পত্ররন্ধ্রগুলি নিমত্বকের ভেতরে অবস্থিত থাকে । (খ) কারণ সরাসরি আলো পত্ররন্ধ্রের ওপর না পড়ার দরুন জল বাষ্পাকারে কম বেরোবে, ফলে মাটি থেকে জল কম শোষণ করতে হবে ।
২. কান্ড (ক) কান্ড হয় খুবই সুগঠিত এবং প্রচুর শাখাপ্রশাখা যুক্ত । (ক) এরা বৃক্ষ জাতীয় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ ।
(খ) ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত হয় । (খ) বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য সুন্দরীর কান্ডের ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত হয়েছে ।    
৩. মূল (ক) সুন্দরীর মূল খুব বেশি সুগঠিত নয় । মাটির খুব গভীরে প্রবেশ করে না । (ক) মাটি থেকে এরা প্রয়োজন মতো জল সন্তর্পণে শোষণ করে । মাটিতে জলের পরিমাণ বেশি থাকায় মূলকে খুব বেশি গভীরে প্রবেশ হয় না । তাছাড়া মাটিতে খনিজ লবণের পরিমাণ থাকে খুব বেশি ।
(খ) প্রধান কান্ডের নিম্নদেশ থেকে তির্যকভাবে ঠেস মূল এবং নৌকোর হালের মতো অধিমূল উত্পন্ন হয় । (খ) নরম কর্দমাক্ত মাটিতে জন্মায় বলে উদ্ভিদকে জোর প্রদান করা হল মূলের অন্যতম কাজ ।
(গ) শ্বাসমূলের মাধ্যাকর্ষণের বিপরীত দিকে উপস্থিতি । (গ) মাটির নীচে অবস্থিত কোশগুলোর শ্বাসকার্যের অসুবিধা দূর করার জন্য শ্বাস মূলের উত্পত্তি । তাদের গাত্রস্থিত শ্বাসছিদ্রের মধ্য দিয়ে O2 গৃহীত এবং  CO2 নির্গত হয় ।

 

পদ্ম, ক্যাকটাস এবং সুন্দরী গাছের অভিযোজনমূলক পার্থক্য

বিষয় পদ্ম ক্যাকটাস সুন্দরী
১. প্রকৃতি  ১. জলজ উদ্ভিদ । ১. জাঙ্গল উদ্ভিদ ১. লবণাম্বু উদ্ভিদ ।
২. মূল ২. মূল অস্থানিক প্রকৃতির, প্রধান মূল, মূলত্র এবং মূলরোম থাকে না । ২. মূল স্থানিক প্রকৃতির । প্রধান মূল উপস্থিত এবং তা মাটির নীচে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত । মূলে মূলরোম এবং মুলত্র থাকে । ২. মূল স্থানিক প্রকৃতির । প্রধান মূল উপস্থিত এবং তা মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে । মূলে মুলত্র এবং মূলরোম থাকে ।
৩. শ্বাসমূল এবং ঠেসমূল ৩. থাকে না ।  ৩. থাকে না । ৩. থাকে ।
৪. কান্ড ৪. বিরুৎ শ্রেণির ও রাইজোম জাতীয় । ত্বক কিউটিকলবিহীন, কান্ডে বাতাবকাশ থাকে । কান্ডের যান্ত্রিক কলা এবং সংবহন কলা সুগঠিত নয় । ৪. গুল্ম জাতীয়, স্থুল, রসালো, চ্যাপ্টা, এবং সবুজ । কান্ডের ত্বকে কিউটিকল এবং মোম জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে । কান্ডের যান্ত্রিক কলা এবং সংবহন কলা সুগঠিত । ৪. বৃক্ষ জাতীয়, কান্ডের ত্বকে কিউটিকল এবং মোম জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে । কান্ডের যান্ত্রিক কলা এবং সংবহন কলা সুদৃঢ় ।
৫. পাতা ৫. পাতার ফলক খুব বড়ো এবং প্রসারিত । পাতার ঊর্ধ্বত্বকে কিউটিকল ও মোমযুক্ত আবরণ থাকে । পত্ররন্ধ্র কেবল ঊর্ধত্বকে থাকে । ৫.পাতা আকারে ছোটো এবং সংখ্যায় কম । পাতা অনেকক্ষেত্রে কাঁটায় রূপান্তরিত । পাতার ত্বক পুরু কিউটিকলযুক্ত এবং মোম জাতীয় আবরণে আবৃত থাকে । পত্ররন্ধ্র অনুপস্থিত । ৫. পাতার ফলক স্থূল, রসালো, ত্বকে পুরু কিউটিকল ও মোমযুক্ত আবরণ থাকে । পত্ররন্ধ্র কেবল নিম্নত্বকে থাকে ।

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স