পায়রার অভিযোজন (Adaptation of Pigeon)
পায়রা খেচর প্রাণী । আকাশে ওড়ার জন্য পায়রার নিম্নলিখিত অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি লক্ষ করা যায় ।
পায়রার উড্ডয়নে সাহায্যকারী অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্য
অভিযোজিত অঙ্গ |
বৈশিষ্ট্য | অভিযোজনগত গুরুত্ব |
১. দেহ-পালক | সারা দেহ পালকে ঢাকা । পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও হুকযুক্ত । |
(ক) দেহের তাপ সংরক্ষণে সাহায্য করে । (খ) দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব হ্রাস করে । (গ) পায়রার পালকগুলি বার্ব, বার্বিউল ও হুকযুক্ত হওয়ায় বায়ুর চাপে সহজে ছিঁড়ে যায় না । |
২. ডানা | পায়রার অগ্রপদ দুটি ডানায় রুপান্তরিত হয়েছে । |
(ক) বিশেষ আকৃতির জন্য বাতাসের চাপ ডানা দুটির ওপর এমনভাবে পড়ে যাতে দেহকে বাতাসে ভাসিয়ে রাখা সহজ হয় । (খ) পায়রার ডানা দেহ সংলগ্ন অংশটি মুক্তপ্রান্তের তুলনায় মোটা এবং ডানার ওপরের তল উত্তল ও নিচের তল অবতল । (গ) ডানার পিছনের দিকের উড্ডয়ন পালকগুলি এমন ভাবে বিন্যস্ত থাকে, যার ফলে বাতাসের ওপর চাপ প্রয়োগ করে পায়রা অনায়াসে বাতাসে ভেসে থাকতে পারে । |
৩. লেজের পালক | সংখ্যায় 12টি । | পায়রার লেজের পালকগুলি ওড়ার সময় দিক পরিবর্তন করতে সাহায্য করে । |
৪. বায়ু থলি | পায়রার ফুসফুসে বেশ কয়েকটি বায়ুথলি থাকে । |
(ক) এই বায়ুথলিগুলি পায়রার দেহে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহ করে । (খ) অক্সিজেনের সঞ্চয় করে রাখা ছাড়াও পায়রার দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে তাকে উড়তে সাহায্য করে । (গ) দেহের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণেও বায়ুথলিগুলি কিছুটা সাহায্য করে । |
৫. উড্ডয়ন পেশি | পেকটোরালিস মেজর, পেকটোরালিস মাইনর, কোরাকোব্রাকিয়ালিস ইত্যাদি ডানা সংলগ্ন বক্ষপেশিগুলি সুগঠিত । | উড্ডয়ন পেশিগুলি ওড়ার সময় ডানার সঞ্চালনে সাহায্য করে । |
৬. স্পঞ্জিঅস্থি | পায়রার অস্থিগুলি পাতলা হালকা, বায়ুপূর্ণ এবং কতকটা স্পঞ্জের মতো । | এই ধরনের অস্থিগুলি ওড়ার সময় চাপ সহ্য করতে পারে, আর হালকা হওয়ায় উড়তে সুবিধা হয় । |
পায়রার অন্যান্য অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল
[1] দেহাকৃতি [Body contour]:- পায়রার দেহ মাকুর মতো । দেহটি সামনে ও পিছনে সরু হওয়ায় ওড়ার সময় বায়ুর প্রতিরোধ কম হয় ।
[2] গ্রীবা [Neck]:- পায়রার গ্রীবা নমনীয়, সরু এবং দীর্ঘ হওয়ায় এরা সহজেই মাথা ঘুরিয়ে চঞ্চুর সাহায্যে খাদ্য গ্রহণ করতে পারে ।
[3] চঞ্চু [Beak]:- পায়রার চোয়াল দুটি চঞ্চুতে রুপান্তরিত হয়েছে, ফলে মাটি থেকে খাদ্য মুখে তোলা সহজ হয় ।
[4] পশ্চাৎপদ [Hind limb]:- পায়রার পশ্চাদপদ সংলগ্ন পেশি এমনভাবে অভিযোজিত যে, মাটিতে চলাফেরা করতে এবং গাছের ডালে বসতে সাহায্য করে ।
গাছের ডালে বসার জন্য পায়রার অভিযোজন [Adaptation for perching]:- পায়রার পশ্চাদ পায়ের চারটি আঙুলের মধ্যে তিনটি সামনের দিকে এবং একটি পিছনের দিকে থাকে । পায়রার পায়ের পেশি সংলগ্ন কন্ডরাগুলি বিশেষভাবে অভিযোজিত । এই কারণে পায়রা গাছের ডালে ঘুমন্ত অবস্থায় স্বচ্ছন্দে বসে থাকতে পারে ।
[5] পৌষ্টিক তন্ত্র [Alimentary system]:- ওড়বার জন্য পায়রার অনেক বেশি শক্তির প্রয়োজন হয়, তাই এদের পৌষ্টিক তন্ত্র অত্যন্ত উন্নত ধরনের । পৌষ্টিক তন্ত্রে চঞ্চু, ক্রপ, গিজার্ড থাকে; অন্যদিকে ওজন কমাবার জন্য দাঁত, পাকস্থলী, পিত্তাশয়, মলাশয় ইত্যাদি থাকে না ।
[6] শ্বসন তন্ত্র [Respiratory system]:- বেশি শক্তির প্রয়োজনে দেহে অতিরিক্ত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য পায়রার ফুসফুসে কতকগুলি বায়ুথলি বা এয়ার স্যাক [air sacs] থাকে, যা প্রয়োজন মতো অক্সিজেন জমা করে রাখে এবং দেহের আপেক্ষিক গুরুত্ব কমিয়ে উড়তে সাহায্য করে ।
[7] মস্তিষ্ক [Brain]:- পায়রার মস্তিস্ক উন্নত । পায়রার মস্তিষ্কে 12 জোড়া করোটিয় স্নায়ু থাকে । এদের গুরু মস্তিষ্ক এবং অপটিক লোব বেশ উন্নত । এদের লঘু মস্তিষ্ক উন্নত হওয়ায় ওড়বার সময় বা ডালে বসার সময় সহজেই দেহের ভারসাম্য বজায় থাকে ।
[8] চক্ষু [Eye]:- পায়রার চোখ দুটি বেশ উন্নত । চোখে 'পেকটিন' থাকায় এরা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিশক্তির আদিকারী ।
[9] মুত্র-জনন তন্ত্র [Urinogenital system]:- ওজন কমাবার জন্য ডান ডিম্বাশয়, ডান ডিম্বনালী, মূত্রথলি এবং শিশ্ন থাকে না ।
হাঁটার জন্য পায়রার অভিযোজন [Adaptation for walking]:- ওড়ার জন্য অগ্রপদ ডানায় রুপান্তরিত হওয়ায় পায়রা কেবল পশ্চাদ পদদ্বয়ের সাহায্যে মাটিতে হাঁটাচলা করে । হাঁটার সময় দেহের ভার শ্রোণিচক্র ও পশ্চাদ-পায়ের ওপর ন্যস্ত হয় । ফলে এই অঞ্চলের অস্থিগুলি দৃঢ় ও মজবুত হয়েছে । শ্রোণিদেশের কশেরুকাগুলি পরস্পর যুক্ত ও অনড় । অপরপক্ষে শ্রোণিচক্র উক্ত কশেরুকার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে । পায়ের অস্থিগুলি অনেকটা 'Z' আকারে বিন্যস্ত । পায়রার দেহের এই রকম অস্থিবিন্যাস এদেরকে হাঁটাচলা করতে, ওড়ার সময় লাফিয়ে উঠতে এবং উড়তে উড়তে হটাৎ মাটিতে দাঁড়াবার সময় দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে ।
*****
- 21546 views