উদ্ভিদ পুষ্টি (Plant Nutrition)

Submitted by arpita pramanik on Fri, 05/03/2013 - 13:06

উদ্ভিদ পুষ্টি (Plant Nutrition) :

স্বভোজী পুষ্টি :

যে পদ্ধতিতে জীব নিজ দেহে উৎপন্ন খাদ্য দ্বারা পুষ্টি নির্বাহ করে তাকে স্বভোজী পুষ্টি  বা অটোট্রফিক পুষ্টি বলে। উদাহরন - শৈবাল, মস, ফার্ন, আম, জাম প্রভৃতি উদ্ভিদের মধ্যে এইরূপ পুষ্টি পদ্ধতি দেখা যায় ।

পদ্ধতি - স্বভোজী পুষ্টি দুটি পর্যায় ঘটে - 1. সংশ্লেষ , 2. আত্তীকরণ

1. সংশ্লেষ : এই পদ্ধতিতে সবুজ উদ্ভিদ ক্লোরোফিলের সহায়তায় সূর্যালোকের উপস্থিতিতে মূলরোম দ্বারা শোষিত জল ও পত্ররন্ধ্র দ্বারা গৃহিত কার্বন ডাই অক্সাইডের রাসায়নিক সমন্বয় সাধন করে, গ্লুকোজ সংশ্লেষ করে। পরে তা শ্বেতসার বা প্রোটিন বা ফ্যাট খাদ্যে পরিণত হয়ে উদ্ভিদের মূল, কাণ্ড, পাতা, ফল ও বীজের মধ্যে সঞ্চিত থাকে। যে পদ্ধতিতে উদ্ভিদ না না অজৈব উপাদান থেকে নিজ দেহে উপযোগী জৈব যৌগের সৃষ্টি করে তাকে সংশ্লেষ বলে ।

2. আত্তীকরণ : এই পর্যায় উদ্ভিদ সংশ্লেষিত খাদ্য বস্তুকে প্রোটপ্লাজমে অঙ্গীভূত করে । এর ফলে উদ্ভিদ দেহে শুষ্ক ওজন বাড়ে । যে পদ্ধতিতে উদ্ভিদের নিজ দেহে সংশ্লেষিত খাদ্য বস্তু কোষীয় প্রোটপ্লাজমে অঙ্গীভূত হয় তাকে আত্তীকরণ বলে ।

 

পরভোজী পুষ্টি :

যে পুষ্টি প্রক্রিয়ায় জীবেরা নিজেদের দেহে খাদ্য সংশ্লেষ না করে অপর কোনো আশ্রয়দাতার দেহ থেকে অথবা মৃত জৈব পদার্থ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে, পুষ্টি সম্পন্ন করে তাকে পরভোজী পুষ্টি বলে । উদাহরন- বিভিন্ন রকম ছত্রাক স্বর্ণলতা, র‍্যাফ্লেসিয়া, বেনে-বৌ এবং পতঙ্গভুক উদ্ভিদদের পরভোজী পুষ্টি দেখা যায় । এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে প্রাণীদের পুষ্টি পরভোজী পুষ্টি ।

বিভিন্ন প্রকার পরভোজী উদ্ভিদ - 1. মৃতজীবী, 2. পরজীবী, 3. মিথোজীবী বা অন্যান্যজীবী, 4. পতঙ্গভুক

1. মৃতজীবী:

যে সব উদ্ভিদ গলিত ও পচা উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ অথবা অন্যান্য জৈব পদার্থ, ( যেমন- গোবর, ভিজে কাঠ, ভিজে চামড়া, জ্যাম, জেলি ইত্যাদি পচনশীল জৈব পদার্থ ) থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে, তাদের মৃতজীবী বা স্যাপ্রোফাইট বলে। উদাহরণ - ব্যাঙের ছাতা বা অ্যাগারিকাস, ঈস্ট, পেনিসিলিয়াম, মিউকর ইত্যাদি ছত্রাক এবং মনোট্রোপা নামের সপুষ্পক উদ্ভিদ পূর্ণ মৃতজীবী উদ্ভিদ ।

পাইন গাছ সবুজ তাই এদের স্বভোজী পুষ্টি দেখা যায়; কিন্তু এদের মূলে বসবাসকারী একরকম ছত্রাকের (মাইকো্রাইজা) সাহায্যে এরা পরোক্ষ ভাবে গলিত পদার্থ শোষণ করে, তাই পাইন গাছ আংশিক মৃতজীবী। মৃতজীবী উদ্ভিদের পুষ্টিকে মৃতজীবী পুষ্টি বলে । যে পুষ্টি পদ্ধতিতে পচা গলিত উদ্ভিদ বা প্রাণীর দেহাবশেষ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে পুষ্টি সম্পাদিত হয়, তাকে মৃতজীবীয় পুষ্টি বলে ।

 

2. পরজীবী

যে সব উদ্ভিদ অপর কোনো সজীব আশ্রয়দাতা উদ্ভিদ দেহ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে পুষ্টি সাধন করে তাদের পরজীবী বা প্যারাসাইট বলে । যে সব উদ্ভিদ দেহ থেকে পরজীবী উদ্ভিদ পুষ্টিরস শোষণ করে তাদের পোষক বা আশ্রয়দাতা বলে ।

পরজীবী উদ্ভিদ দু রকমের- (ক) পূর্ণ পরজীবী , (খ) আংশিক পরজীবী

(ক) পূর্ণ পরজীবী - পুষ্টির জন্য যে সব জীব সম্পূর্ণভাবে আশ্রয়দাতার ওপর নির্ভরশীল তাদের পূর্ণ পরজীবী বলে। যেমন – স্বর্ণলতা, র‍্যাফ্লেসিয়া, আলুর পচনশীল রোগ সৃষ্টিকারী ফাইটোপথোরা ও গমের মরিচা রোগ সৃষ্টিকারী পাকসিনিয়া ছত্রাক হল পূর্ণ পরজীবী উদ্ভিদ ।

(খ) আংশিক পরজীবী - অন্যভাবে যে সব জীব পুষ্টির জন্য আশ্রয়দাতার ওপর আংশিক ভাবে  নির্ভরশীল তাদের আংশিক পরজীবী বলে। যেমন শ্বেতচন্দন, লোরানথাস, ভিসকাম প্রভৃতি আংশিক পরজীবী উদ্ভিদ । পরজীবী উদ্ভিদের পুষ্টি প্রক্রিয়াকে পরজীবী পুষ্টি বলে। যে প্রক্রিয়ায় কোনো সজীব পোষকের দেহ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করার ফলে পোষক ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং পরজীবী উপকৃত হয়, তাকে পরজীবীয় পুষ্টি বলে ।

 

3. মিথোজীবী বা অন্যান্যজীবী

যে পুষ্টির জন্য এক জীব অন্য কোনো জীবের সাহচর্যে জীবন ধারণ করে পরস্পর উপকৃত হয়, তাকে মিথোজীবী বা অন্যান্যজীবী বা সিমবায়োটিক বলে ।

মিথোজীবী পুষ্টি দু রকমের হয়- A. ব্যতিহারী(Mutualism), B. সহভোক্তা (Commensalism)

A. ব্যতিহারী (Mutualism) - এই রকম পুষ্টিতে দুটি জীব সহাবস্থান করে পরস্পরের সাহায্যে পুষ্টি সম্পন্ন করে, যেমন – লাইকেন ।

B. সহভোক্তা (Commensalism) - এই রকম পুষ্টিতে দুটি জীব সহাবস্থানে থেকেও পরস্পর পৃথক ভাবে পুষ্টি সম্পন্ন করে, যেমন – পরাশ্রয়ী উদ্ভিদ রাস্না, গজপিপুল ইত্যাদি ।

যে পুষ্টি প্রক্রিয়ায় দুটি ভিন্ন ধরনের জীব পরস্পরের উপর নির্ভরশীল হয়ে বসবাস করে, তাকে মিথোজীবীয় পুষ্টি বলে ।

 

4. পতঙ্গভুক

যে সব উদ্ভিদ নাইট্রোজেন ঘটিত প্রোটিন খাদ্যের জন্য পতঙ্গ ধরে পতঙ্গের দেহ থেকে পুষ্টিরস শোষণ করে পুষ্টি সম্পন্ন করে, তাদের পতঙ্গভুক উদ্ভিদ বলে। যেমন – কলসপত্রী, সূর্যশিশির, পাতাঝাঁঝি ইত্যাদি ।

*****

Related Items

লসিকা সংবহন (Lymph Circulation)

লসিকা সংবহন তন্ত্র - লসিকা সংবহনে সাহায্যকারী অঙ্গ গুলি মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠন করে, তাকে লসিকা সংবহন তন্ত্র বলে।, লসিকা - লসিকা একরকম হালকা হলুদ বর্ণের স্বচ্ছ ক্ষারীয় তরল যোগ কলা , লসিকার কাজ ও গুরুত্ব , লসিকা সংবহন.....

মানব দেহে রক্ত ও রক্ত কণিকা

রক্ত এক প্রকার অসচ্ছ, লমনাক্ত, ক্ষার ধর্মী তরল যোগ কলা। রক্তের কাজ , রক্তের বিভাগ, মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্ত প্রবাহের কারণ কি, রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ...

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন তন্ত্র, হৃৎপিণ্ডের গঠন, প্রকোষ্ঠ, অলিন্দ, নিলয়, কপাটিকা, ট্রাইকাসপিড কপাটিকা , বাইকাস পিড কপাটিকা, পালমনারি কপাটিকা, অ্যাওটিক কপাটিকা সম্পর্কিত আলোচনা। ডান অলিন্দ, ডান নিলয়, বাম অলিন্দ, বাম নিলয় ....

উদ্ভিদ সংবহনের পার্থক্য সমূহ

উদ্ভিদ সংবহনর কয়েকটি পার্থক্য সমূহ ছক আকারে দেওয়া হলো - 1. জাইলেম ও ফ্লোয়েম, 2. ব্যাপন ও অভিস্রাবন, 3. পরিবহণ ও সংবহন, 4. ঊর্ধ্বমুখী সংবহন ও নিম্নমুখী সংবহন ..

বাষ্পমোচন (Transpiration)

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার মূল দ্বারা শোষিত জলের অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত অংশ লেন্টিসেল, কিউটিকল, পত্ররন্ধ্র ইত্যাদি বায়বীয় অংশের মাধ্যমে দেহ থেকে বাস্পের আকারে বের করে দেয়, প্রোটোপ্লাজম নিয়ন্ত্রিত ওই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাষ্পমোচন বলে। ...