১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে জনসাধারণ কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/08/2022 - 09:09

প্রশ্ন:-  ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে জনসাধারণ কী ভূমিকা গ্রহণ করেছিল ?

১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের গণবিদ্রোহের একটি অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই যে ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী ভারতীয় সিপাহিদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে জনগণ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংগ্রামে অংশ গ্রহণ করেছিল ।

(১) মহাবিদ্রোহে জনগণের প্রত্যক্ষভাবে অংশ গ্রহণ : অযোধ্যা, দিল্লি, মধ্যভারত, বিহার প্রভৃতি অঞ্চলে বিদ্রোহ প্রকৃত গণ-বিদ্রোহের রূপ ধারণ করেছিল, যেমন—

(i) গ্রামাঞ্চলে কোম্পানি প্রবর্তিত নতুন ভূমিরাজস্ব আইন দ্বারা সুরক্ষিত সুদখোর মহাজন ও নতুন জমিদারদের বাড়িঘর ও কাছারি লুঠ করা হয় । যদিও কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় ডাকাতরাও এই সব লুঠতরাজে অংশ নিয়েছিল ।

(ii) ব্যবসায়ী ও মহাজনদের ওপর কর বসিয়ে বিদ্রোহী সিপাহিদের খাদ্যশস্য ও যুদ্ধের রসদপত্র কেনা হয় ।

(iii) দিল্লি, লক্ষ্ণৌ, রায়বেরিলি প্রভৃতি শহরের জনসাধারণ তাদের বল্লম, টাঙ্গি, ছুরি, দা, কাস্তে প্রভৃতি নিয়ে বিদ্রোহী সিপাহিদের সঙ্গে যোগ দেয় এবং কোম্পানির অনুগত সেনাদের সঙ্গে হাতাহাতি লড়াই চালায় ।

(iv) দিল্লি, অযোধ্যা, কানপুর, লক্ষ্ণৌ প্রভৃতি অঞ্চলে রাস্তাঘাট নষ্ট করে গরু-মোষ-ঘোড়ার গাড়ি ও স্থানীয় নৌকাগুলি সরিয়ে ফেলে কোম্পানির সেনাবাহিনীর রসদপত্র সরবরাহের কাজে বাধা দেওয়া হয় ।

মহাবিদ্রোহে জনগণের পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ : ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মহাবিদ্রোহে ভারতের জনগণ পরোক্ষভাবেও অংশ নিয়েছিল, যেমন—

(i) স্থানীয় ভৃত্য, পরিচারক ও আয়ারা তাদের কাজকর্ম বন্ধ করে দিয়ে ইংরেজদের বিপদে ফেলে ।

(ii) বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় জনগণ ইংরেজদের কাছে বিদ্রোহী সিপাহিদের গতিবিধি সম্পর্কে কোনো আগাম খবর না দিয়ে এবং

(iii) নানারকম গুজব রটিয়ে ইংরেজদের মনোবল ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা করে ।

পরিশেষে বলতে হয়, যদিও ভারতীয় জনগণের একটা বড়ো অংশ যেমন— বোম্বাই, মাদ্রাজ, পশ্চিম পাঞ্জাব, বাংলা প্রভৃতি এবং ভারতের ইংরেজি শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণি ইংরেজ কোম্পানির বিরুদ্ধে ১৮৫৭ সালের বিদ্রোহে অংশ গ্রহণ করেনি, তবুও ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে যে গণবিদ্রোহের রূপ ধারণ করেছিল একথা অস্বীকার করা যায় না ।

*****

Comments

Related Items

ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয় । ভারতীয় সংবিধানের চারটি উল্লেখযোগ্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

প্রশ্ন:-  মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:- ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?