সংবিধানে কীভাবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে ? কী কারণে ভারতীয় সংবিধানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বলে মনে হয় ?

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 01/23/2022 - 11:56

প্রশ্ন : সংবিধানে কীভাবে সমাজতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিফলিত হয়েছে ?  কী কারণে ভারতীয় সংবিধানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বলে মনে হয় ?

১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে ৪২তম সংবিধান সংশোধনে মূল সংবিধানে সমাজতান্ত্রিক কথাটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এই উদ্দেশ্যে ব্যাঙ্ক, বিমা প্রভৃতি জাতীয়করণ, রাজন্য ভাতার বিলোপসাধন, জমিদারি প্রথা বিলোপ, জমির মালিকানার ঊর্ধ্বসীমা স্থিরীকরণ, ধনীদের ওপর বিভিন্ন কর কাঠামো প্রভৃতি শাসনতান্ত্রিক কর্মসূচির মধ্য দিয়ে ভারতের সমাজতান্ত্রিক আদর্শকে প্রতিফলিত করা হয়েছে ।

ভারতের সংবিধানে ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র বলে অভিহিত করা হয় নি । কিন্তু নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যগুলির জন্য ভারতীয় সংবিধানকে যুক্তরাষ্ট্রীয় বলে মনে হয়, যেমন—

(১) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হল লিখিত ও অপরিবর্তনীয় সংবিধান । ভারতের সংবিধান লিখিত এবং আংশিক ভাবে অপরিবর্তনীয় ।

(২) যুক্তরাষ্ট্রীয় শাসনব্যবস্থায় একটি কেন্দ্রীয় সরকার ও কতগুলি আঞ্চলিক সরকার পাশাপাশি অবস্থান করে । ভারতের ক্ষেত্রে একটী কেন্দ্রীয় সরকার ও ২৮টি রাজ্য সরকার এই দুই ধরণের সরকার নিয়েই ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্র গঠিত ।

(৩) যুক্তরাষ্ট্রের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য হল সংবিধানের প্রাধান্য, ভারত রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে ভারতীয় সংবিধানের প্রাধান্য স্বীকৃত হয়েছে ।

(৪) ভারতীয় শাসনব্যবস্থার অপর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল একটি নিরপেক্ষ যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত । ভারতেও সংবিধান অনুসারে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে । এই আদালত হল সুপ্রিমকোর্ট ।

ভারতকে একটি যুক্তরাষ্ট্র বলে মনে করা হলেও—(i) আইন প্রণয়ন,  (ii) শাসন পরিচালনা, (iii) আর্থিক বিষয়, (iv) রাজ্যের নাম, সীমানা ইত্যাদির পরিবর্তন, (v) উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মচারী নিয়োগ (I.A.S,  I.P.S প্রভৃতি), (vi) অর্ডিনান্স জারি, (vii) রাজ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী প্রেরণ, (viii) জরুরি অবস্থা ঘোষণা প্রভৃতি বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এই সিদ্ধান্তে আসা যায় যে, ভারতীয় শাসনব্যবস্থা আকৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রীয় হলেও প্রকৃতিগতভাবে এককেন্দ্রিক । অন্যভাবে বলা যায় ভারতীয় সংবিধান হল আধা-যুক্তরাষ্ট্রীয় সংবিধান ।

*****

Comments

Related Items

লর্ড ডালহৌসির সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি

লর্ড ডালহৌসি একজন পুরোপুরি আগ্রাসী মনোভাবাপন্ন শাসক ছিলেন । তাঁর শাসনকালে (১৮৪৫ - ৫৬ খ্রিস্টাব্দ) ব্রিটিশ সাম্রাজ্য চরম সীমা লাভ করে । স্বত্ববিলোপ নীতি - এই নীতির মূলকথা ছিল এই যে, ইংরেজদের আশ্রিত কোনো রাজা অপুত্রক অবস্থায় মারা গেলে সেই রাজ্য ব্রিটিশ ...

তৃতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে হায়দর আলির মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র টিপু সুলতান দ্বিতীয় ইঙ্গ মহীশূর যুদ্ধের নেতৃত্ব হাতে নেন । ইংরেজদের প্রতিহত করাই ছিল টিপু সুলতানের একমাত্র লক্ষ্য । কিন্তু এর জন্য তাঁকে একা হাতেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়েছিল, কারণ ...

দ্বিতীয় ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে ১৭৬৯ খ্রিস্টাব্দে স্বাক্ষরিত মাদ্রাজ চুক্তির (Madras Treaty) শর্ত ইংরেজগণ পরবর্তীকালে পালন করেন নি । ১৭৭১ খ্রিস্টাব্দে মারাঠাগণ মহীশূর আক্রমণ করলে প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধে স্বাক্ষরিত মাদ্রাজ চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হায়দার আলি ...

প্রথম ইঙ্গ-মহীশূর যুদ্ধ

হায়দর আলির সঙ্গে ইংরেজদের খুব একটা ভাল সম্পর্ক ছিল না । হায়দর আলির শক্তি বৃদ্ধিতে ইংরেজরাও ঈর্ষান্বিত হয়েছিলেন । হায়দর আলি ফরাসিদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে চলতেন । তৃতীয় কর্ণাটকের যুদ্ধের সময় হায়দর ৪,০০০ অশ্বারোহী ...

রবার্ট ক্লাইভের পর বাংলার গভর্নর ভেরেলস্ট এবং কার্টিয়ার

রবার্ট ক্লাইভের পর ভেরেলস্ট এবং কার্টিয়ার স্বল্প সময়ের জন্য বাংলার গভর্নর নিযুক্ত হন । ওই সময়ে তাঁদের ঔদাসীন্যে বাংলার রাজনৈতিক ক্ষেত্রে চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় । এই অবস্থায় ১৭৭২ খ্রিস্টাব্দে ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার ...