Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 17:13

লখনউ চুক্তি (Lucknow Pact) :

১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে লখনউ শহরে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের প্রথম অধিবেশন বসে । এই পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে লোকমান্য বালগঙ্গাধর তিলক জাতীয় আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলার উদ্দেশ্যে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে একটি সমঝোতা গড়ে তুলতে সচেষ্ট হন । তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অধ্যাবসায়ে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের নেতৃবৃন্দ একটি পারস্পরিক সমঝোতায় উপনীত হন । এরই ফলশ্রুতিতে ১৯১৬ খ্রিস্টাব্দে উভয় দলের মধ্যে লখনউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় । লখনউ চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের দুটি কারণ ছিল—

(ক) ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গে সিদ্ধান্ত বাতিল হওয়া এবং

(খ) প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তুরস্কের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা ।

লখনউ চুক্তির শর্তগুলি ছিল —

(ক) মুসলিম লিগ কংগ্রেসের 'স্বরাজ' বা স্বায়ত্তশাসনের নীতি মেনে নেবে ।

(খ) কংগ্রেসও মুসলিম লিগের পৃথক নির্বাচন নীতির স্বীকৃতি জানাবে ।

(গ) প্রতিটি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক আইন সভায় নির্বাচিত প্রতিনিধিদের এক তৃতীয়াংশ সদস্য হবেন মুসলিম প্রতিনিধি ।

(ঘ) মুসলিম লিগ ও কংগ্রেসের সদস্যরা যৌথভাবে স্বরাজ আদায়ের জন্য ইংরেজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে । চুক্তিতে আরও স্থির হয় যে, উভয় দলই স্বরাজ প্রতিষ্ঠার জন্য নির্দিষ্ট দিন, তারিখ, প্রভৃতি ঘোষণার দাবি জানাবে ।

নানা কারণে এই লখনউ চুক্তি ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ । লখনউ চুক্তির মাধ্যমে কংগ্রেস ও মুসলিম লিগের বোঝাপড়া ব্রিটিশ সরকারের যথেষ্ট শঙ্কার কারণ হয়েছিল । ঐতিহাসিক বিপিনচন্দ্র মন্তব্য করেন, লখনউ চুক্তি হল হিন্দু-মুসলিম ঐক্য স্থাপনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । এই চুক্তি দ্বারা কংগ্রেস প্রমাণ করেছিল যে, ধর্মীয় পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও জাতীয় প্রয়োজনে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে মিলিত হতে পারে । রমেশচন্দ্র মজুমদার বলেন, কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ এই চুক্তি স্বাক্ষর করে চরম অদূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন । কারণ সন্ধির শর্তগুলির মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ নিহিত ছিল । ডঃ অমলেশ ত্রিপাঠিও মন্তব্য করেন, লখনউ চুক্তি কংগ্রেসের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী ছিল । জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের মূলে আঘাত করা হয়েছিল । মহাত্মা গান্ধিও এই নীতির সমালোচনা করছিলেন । তবুও লখনউ চুক্তির মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হিন্দু-মুসলিম ঐক্য ভারতের জাতীয় আন্দোলনকে গতিশীল ও প্রাণবন্ত করে তুলেছিল ।

*****

Related Items

বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (Indian universities Act, 1904)

লর্ড কার্জন প্রতিক্রিয়াশীল শাসক হলেও শিক্ষার ব্যাপারে তিনি খুবই উৎসাহী ছিলেন । লর্ড কার্জন স্যার টমাস র‍্যালের সভাপতিত্বে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে 'র‍্যালে কমিশন' গঠন করেছিলেন । এটি 'ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন' নামেও পরিচিত । স্যার টমাস র‍্যালে ছিলেন বড়লাটের কার্যনির্বাহক সমিতির আইন সদস্য । এই কমিশন ...

হান্টার কমিশন (Hunter Education Commission)

১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে লর্ড রিপণের সময় উইলিয়াম হান্টারের নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠিত হয় । এই কমিশনের কাজ ছিল দেশে ইংরেজি শিক্ষার অগ্রগতি পর্যালোচনা করা । শিক্ষার প্রসারে হান্টার কমিশনের ভূমিকা এক অভিনব অধ্যায়ের সূচনা করেছিল । হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি ছিল ....

উডের ডেসপ্যাচ (Wood's Despatch of 1854)

শিক্ষা সংক্রান্ত নানা সমস্যার সমাধান করার জন্য ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানির পরিচালক সমিতির সভাপতি স্যার চার্লস উড 'শিক্ষা বিষয়ক প্রস্তাব' (Wood's Education Despatch) নামে একটি শিক্ষা নীতি রচনা করে ভারতে পাঠান । ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারে চার্লস উডের সুপারিশ ...

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতে 'হাফটোন' প্রিন্টিং পদ্ধতি প্রবর্তন করেন—     [মাধ্যমিক-২০১৭]

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা

বহু বিকল্পীয় প্রশ্নোত্তর (M.C.Q) - সংঘবদ্ধতার গোড়ার কথা:-

মাধ্যমিকের নমুনা প্রশ্ন:-

১. ভারতের প্রথম রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হল—       [মাধ্যমিক -২০১৭]