Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 04/22/2012 - 18:49

মোপলা বিদ্রোহ (Mopala Movement)

মোপলা বিদ্রোহ (Mopala Movement) : ভূমিরাজস্ব ব্যবস্থার ত্রুটি, সুদখোর মহাজনদের নির্লজ্জ শোষণ, ঔপনিবেশিক শোষণ এবং কৃষক ও উপজাতিদের উপর দমন নীতি ইত্যাদির কারণে ও এর প্রতিবাদে বিভিন্ন সময়ে কৃষক, শ্রমিক, তাঁতি, কারিগর, জেলে, মুচি, মেথর, ব্যবসায়ী, শিল্পী, ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ বিচ্ছিন্ন ভাবে হলেও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে ব্রিটিশ বিরোধী সংগ্রামে সামিল হয়েছিল । এইসব বিদ্রোহগুলির মধ্যে মোপলা বিদ্রোহ ছিল অন্যতম । 

কেরলের মালাবার অঞ্চলের মোপলাদের উত্থান ও বিদ্রোহ কৃষক বিদ্রোহের ইতিহাসে এক জ্বলন্ত সংযোজন । এই বিদ্রোহের কারণগুলি হল :-

(ক) ১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে ভাস্কো-ডা-গামার ভারতে আসার পর এখানে পোর্তুগিজরা মশলার বাজার দখল, লুঠপাট ও জবরদস্তি ধর্মান্তকরণ চালাতে থাকে যা মালাবারের মোপলা বা মুসলিম কৃষকদের শ্বেতাঙ্গবিদ্বেষী করে তোলে ।

(খ) ধর্মযুদ্ধে শহিদ হওয়ার জিগির তুলে জায়ন-আল-দিন 'তুহফাৎ-আল-মুজাহিদিন' ও 'কোতুপালি মালা'  -এর বিখ্যাত গান লিখেছিলেন ।

(গ) এখানে ব্রিটিশ শাসকরা উঁচু জাতের হিন্দু 'নাম্বুদ্রি' ও 'নায়ার' জেনমি (জমিদার) দের অবস্থার উন্নতি ঘটাতে উদ্যোগ নেয় । ফলে অসংখ্য মুসলিম 'ইজারাদার' বা 'কনমদার' ও কৃষক বা 'বেরুসপট্টমদার' যারা 'মোপলা' নামে পরিচিত, তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে ।

(ঘ) ১৮৩১ খ্রিস্টাব্দে মালাবারে মসজিদের সংখ্যা ৬৩৭ টি ছিল ;  যা ১৮৫১ -তে বেড়ে হল ১০৫৮ টি  ।  তিরুরঙ্গাডির মালব্রুমের তালঙ্গদের নেতা সৈয়দ আলাবি ও তাঁর পুত্র সৈয়দ ফদল ক্রমশ মোপলা সমাজের ধর্মীয় তথা রাজনৈতিক আন্দোলনের নেতা হয়ে ওঠেন ।

(ঙ) এখানকার চেরুমর নামে অস্পৃশ্য সম্প্রদায় মোপলা বিদ্রোহে যোগ দিলে দক্ষিণ মালাবারে ভাল্লুভেনাড় ও এলেনাড় তালুকে মোপলা আন্দোলন গণরূপ নেয় ।

(চ) ১৮৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ২৮টি অভ্যুত্থানে মোট সক্রিয় বিদ্রোহীর সংখ্যা ছিল ৩৪৯ জন । পুলিশের গুলির মুখে তাদের সমবেত আত্মহত্যাকে তারা বেহেস্তযাত্রা মনে করত । ১৯১১ খ্রিস্টাব্দে মোপলারা হত্যা করেছিল ৮২ জনকে; যার মধ্যে ৬২ জন ছিল উচ্চবর্ণের । এই দরিদ্র চাষি ও ভূমিহীন মজুরদের কৃষক বিদ্রোহে বহু হিন্দু চাষি ছিল । ১৮৬২-৮৪ পর্যন্ত খাজনা সংক্রান্ত মামলা ছিল ২৪৪% ও উচ্ছেদের আদেশ জারি বেড়ে দাঁড়ায় ৪৪১% ।

এই বিদ্রোহের ব্যর্থতার কারণ হল বিচ্ছিন্ন বসতি ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা ।

*****

Related Items

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ধারণার সমালোচনা (Critique of Colonial Ideas Regarding Education):-

ভারতে ব্রিটিশ শাসনের সূচনাপর্বে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষার্থীরা পাঠশালা, টোল, মক্তব ও মাদ্রাসা থেকে সংস্কৃত, আরবি ও ফারসি -র মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ করত । এসব প্রতি

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education)

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education):-

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কার্জনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে দেশীয় প্রগতিশীল স্বদেশী ধাঁচে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রস

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute)

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-

ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের র