বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-
ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্রগতি ঘটে ও সেই সঙ্গে বাংলায় কারিগরি শিক্ষার দ্রুত প্রসার ও অগ্রগতি শুরু হয় । ১৮২০ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি কারিগর গোলকচন্দ্র ইংল্যান্ড থেকে আগত বাষ্পীয় ইঞ্জিনের আদলে প্রথম কারিগরি যন্ত্র তৈরি করেন । ব্রিটিশরা তাদের নিজেদের সামরিক প্রয়োজনে ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা চালু করেন । এই ইলেকট্রিক টেলিগ্রাফের লাইন পাতার কাজে ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে বাঙালি কারিগর শিবচন্দ্র নন্দী উল্লেখ্যযোগ্য কৃতিত্বের পরিচয় দেন । মহেন্দ্রনাথ নন্দী কাপড় বোনার যন্ত্র তৈরি করেন । বাঙালি কারিগররা অচিরেই আধুনিক কারিগরি প্রযুক্তিবিদ্যা শেখার দিকে মনযোগ দেন । রাজকৃষ্ণ কর্মকার জলচক্র, বন্দুক, মেশিনগান তৈরিতে নিপুনতার পরিচয় দেন । প্রসন্নকুমার ঘোষ কলকাতায় প্রথম সাইকেল ও রিক্সা নির্মাণ করেন । ইলেকট্রিক কারিগর কালিদাস শীল নানা ধরনের নতুন নতুন বৈদ্যুতিক সাজ-সরঞ্জাম তৈরিতে বিশেষ পারদর্শিতার পরিচয় দেন । বিপিনবিহারী দাস সর্বপ্রথম ভারতে একটি সম্পূর্ণ মোটরগাড়ি তৈরি করেন ।
উনিশ শতকের শেষদিক থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ও দেশীয় সংবাদপত্রগুলি ভারতে কারিগরি শিক্ষাবিস্তারের দাবিতে সরব হয় । এর পরিণতি হিসাবে কলকাতায় কারিগরি শিক্ষার বিস্তারের উদ্দেশ্যে ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে 'অ্যাসোসিয়েশন ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল এডুকেশন' গড়ে তোলা হয় । স্কলারশিপ দিয়ে এদেশের যোগ্য ছাত্রদের কারিগরি শিক্ষালাভের জন্য এই অ্যাসোসিয়েশন ইউরোপ, আমেরিকা ও জাপানে পাঠায় । কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে যাদবপুর টেকনিক্যাল কলেজ স্থাপিত হয় । ব্রিটিশ সরকার শিল্প বিষয়ক টেকনিক্যাল স্কুল স্থাপনে উৎসাহ দেখালে ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় একটি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রস্তাব বিবেচনার জন্য একটি কমিটি গঠন করে । সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সতীশ চন্দ্র মুখার্জীর প্রতিষ্ঠিত ডন সোসাইটিতেও বেসরকারিভাবে শিল্প ও কারিগরি শিক্ষা প্রসারের উদ্যোগ নেওয়া হয় । ডন সোসাইটিতে কারিগরি শিক্ষার প্রাথমিক ও উন্নতমানের পাঠক্রম চালু ছিল । এখানে শিক্ষানবীশদের যান্ত্রিক কৌশলের বিষয়ে শিক্ষাদান করা হত । ডন সোসাইটি ছাড়া জাতীয় শিক্ষা পরিষদ ও বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট -এর প্রচেষ্টায় বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ ঘটে ।
******