মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন

Submitted by avimanyu pramanik on Sun, 02/07/2021 - 17:37

মানবেন্দ্রনাথ রায় ও ভারতের বামপন্থী আন্দোলন(M.N.Roy and the Left Movement in India):-

মানবেন্দ্রনাথ রায়ের আসল নাম হল নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য । বিপ্লবী কাজ করতে গিয়ে তিনি অসংখ্য ছদ্মনাম গ্রহণ করেন, যেমন— মি. মার্টিন, হরি সিং, ডা. মাহমুদ, মি. হোয়াইট, মি. ব্যানার্জী ইত্যাদি । তবে এম. এন. রায় নামেই তিনি সমধিক পরিচিতি । প্রথম জীবনে তিনি অনুশীলন সমিতি ও যুগান্তর দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । পরে তিনি যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় 'বাঘাযতীন' -এর সংস্পর্শে আসেন । বাঘাযতীনের নির্দেশে তিনি জার্মান অস্ত্র সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ইন্দোনেশিয়ার বাটাভিয়ায় চলে যান । কিন্তু বাঘাযতীনের এই অস্ত্র সংগ্রহের পরিকল্পনা সফল হয়নি । পরবর্তীকালে মেক্সিকোতে থাকাকালীন সোশ্যালিস্ট পার্টির সংস্পর্শে এলে তিনি মার্কসবাদের প্রতি আকৃষ্ট হন । এখানে বিশিষ্ট রুশ বিপ্লবী ও কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের প্রতিনিধি মিখাইল বোরোদিনের সঙ্গে তিনি পরিচত হন । বোরোদিন ও তাঁর মিলিত উদ্যোগে রাশিয়ার বাইরে মেক্সিকোতে তাঁর সভাপতিত্বে প্রথম কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় । এসময় থেকেই তিনি মানবেন্দ্রনাথ রায় নামে পরিচত হন । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৯শে জুলাই থেকে ৭ই আগস্ট রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের (কমিন্টার্ন) দ্বিতীয় অধিবেশনে লেলিনের আমন্ত্রণে মেক্সিকো কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধি হিসেবে মানবেন্দ্রনাথ যোগদান করেন । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের ১৭ই অক্টোবর মানবেন্দ্রনাথ রায় অবনী মুখার্জী ও ২৪ জন মুহাজিরিনকে নিয়ে রাশিয়ার তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গঠন করেন । রাশিয়া থেকে মানবেন্দ্রনাথ রায় বিভিন্ন পুস্তিকা, অর্থ ও দূত পাঠিয়ে ভারতে কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রসার ঘটানোর প্রয়াস চালান । মানবেন্দ্রনাথ রায়ের নির্দেশে নলিনী গুপ্ত, মহম্মদ শরিফ, ফিরোজ উদ্দিন মনসুর, আব্দুল মজিদ, রফিক আহমেদ ও শওকত ওসমানিসহ প্রাক্তন মুহাজিরিনদের একটি দল ভারতে ফিরে কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রচার চালায় । মানবেন্দ্রনাথ রায় চেয়েছিলেন কমিউনিস্ট পার্টি জাতীয় আন্দোলনে অংশ নেবে, কংগ্রেসের মধ্যে থেকে বিরোধিতা করবে এবং ভবিষ্যতে কংগ্রেসের বিকল্প হয়ে উঠবে এবং কমিউনিস্ট দল গোপনে কৃষক ও শ্রমিকদের সংগঠিত করে বিপ্লবের ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে । নানা অভিযোগে মানবেন্দ্রনাথ রায়কে ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয় । পরবর্তীকালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর চিন্তাভাবনার স্বতন্ত্রতা বজায় রাখতে তিনি 'র‍্যাডিক্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি' প্রতিষ্ঠা করেন । ১৯৪০ সালে তিনি কংগ্রেসের সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হন ।

****

Comments

Related Items

ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:-  ভারতের সংবিধানের চারটি মূল বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করো ।

১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬শে জানুয়ারি ভারতের সংবিধান প্রকাশ করা হয় । ভারতীয় সংবিধানের চারটি উল্লেখযোগ্য প্রধান বৈশিষ্ট্য হল—

মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

প্রশ্ন:-  মুসলিম লিগ কবে প্রতিষ্ঠিত হয় ? স্যার সৈয়দ আহম্মদ খাঁ মুসলমানদের কংগ্রেসে যোগ না দিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন কেন ? মুসলিম লিগ কেন ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালন করে ?

‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

প্রশ্ন:- ‘দ্বিজাতি তত্ত্ব’ কী ? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়ে এই তত্ত্বের প্রভাব উল্লেখ কর ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

প্রশ্ন:-  ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে নৌ-বিদ্রোহের গুরুত্ব কী ? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে ছাত্র আন্দোলনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।

আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?

প্রশ্ন:- আজাদ হিন্দ ফৌজের লক্ষ্য কতদূর পরিপূর্ণ হয় ? আজদ হিন্দ ফৌজের বিচার ভারতীয় জনগণের ওপর কী প্রভাব বিস্তার করে ?