মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন (Montague-Chelmsford Reforms)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 17:17

মন্টেগু চেমসফোর্ড সংস্কার আইন (Montague-Chelmsford Reforms) :

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের অবসানে ব্রিটিশ সরকার ভারতীয়দের কিছু শাসনতান্ত্রিক সুযোগ সুবিধা দান করে ভারতবাসীকে তুষ্ট রাখার জন্য সচেষ্ট হন । এই উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ সরকার মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন নামে একটি আইন প্রণয়ন করেন । এই আইন অনুযায়ী—

(১) ভারতের শাসনব্যবস্থাকে কেন্দ্রীয় সরকার ও প্রাদেশিক সরকার এই দুভাগে ভাগ করা হয় ।

(২) দেশরক্ষা, পররাষ্ট্র বিভাগ, মুদ্রাব্যবস্থা, পরিবহন ও ডাকবিভাগ প্রভৃতি সর্বভারতীয় বিষয় সমূহ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে অর্পণ করা হয় । বিচার, জেলখানা, স্বাস্থ্য, সেচ, জল বিদ্যুৎ, রাজস্ব, বনবিভাগ, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতির দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের ওপর ন্যস্ত হয় ।

(৩) কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনার জন্য গভর্নর জেনারেলের সভাপতিত্বে একটি কার্যনির্বাহক সভা গঠন করা হয় । এই কার্যনির্বাহক সভায় তিনজন ভারতীয় এবং পাঁচজন শ্বেতাঙ্গ সদস্য রাখবার নিয়ম বলবৎ হয় ।

(৪) কেন্দ্রীয় আইনসভা দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত হয় । একটি উচ্চকক্ষ যার নাম রাষ্ট্রীয় পরিষদ, অন্যটি নিম্নকক্ষ বা কেন্দ্রীয় আইনসভা । 

সাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে নির্বাচনের নীতি যথারীতি অক্ষুন্ন থাকে । গভর্নর জেনারেল কেন্দ্রীয় আইনসভা কর্তৃক গৃহীত বিল আইনে পরিণত করতে কিংবা নাকচ করতে পারতেন । গভর্নর জেনারেল বা তাঁর কার্যনির্বাহক পরিষদ তাঁদের কাজকর্মের জন্য আইনসভার কাছে দায়ী থাকতেন না । তাঁরা ভারত সচিবের মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের কাছে দায়ী থাকতেন । প্রাদেশিক শাসনব্যবস্থায় দ্বৈতশাসন ব্যবস্থার প্রবর্তন করা হয়েছিল । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, পূর্ত, আবগারি, সমবায় স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন প্রভৃতি কয়েকটি বিষয় আইন সভার নির্বাচিত সদস্য থেকে গৃহীত কয়েকজন মন্ত্রীর হাতে দেওয়া হয়েছিল । এই সকল হস্তান্তরিত বিষয় এবং গভর্নর ও তাঁর কার্যকরী সভার ওপর ন্যস্ত বিষয়গুলি সংরক্ষিত বিষয় নামে পরিচিত ছিল । বিচার, পুলিশ, সেচ, অর্থ, রাজস্ব, দুর্ভিক্ষ, ত্রাণ ও সংবাদপত্র প্রভৃতি অসংরক্ষিত বিষয় বলে ঘোষিত হয় । মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কার আইন ভারতীয়দের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ব্যর্থ হয় । কেন্দ্রীয় আইনসভায় কোনো প্রস্তাব অনুমোদিত হলে তা গভর্নর জেনারেল অগ্রাহ্য করতে পারতেন । ফলে আইনসভা প্রকৃত ক্ষমতা লাভে বঞ্চিত হয় । হস্তান্তরিত বিষয়গুলি দায়িত্বশীল মন্ত্রীদের হাতে দিলেও প্রয়োজন বোধে গভর্নর মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে পারতেন । ফলে আইনসভা, মন্ত্রিসভা থাকলেও প্রকৃত ক্ষমতা গভর্নর জেনারেলের হাতে থেকে যায় । জাতীয় কংগ্রেস মন্টেগু-চেমসফোর্ড সংস্কারে সন্তুষ্ট হতে পারে নি এবং এই আইনকে তুচ্ছ, বিরক্তিকর এবং নৈরাশ্য জনক বলে অভিহিত করেন । শ্রীমতী অ্যানি ব্যাসান্ত একে 'দাসত্বের এক নতুন অধ্যায়' রূপে বর্ণনা করেছেন । ওই বছরেই অনুষ্ঠিত অমৃতসর কংগ্রেসে এই আইনের প্রতি কংগ্রেসিদের হতাশা ব্যক্ত হয় । অবশেষে মহাত্মা গান্ধির পরামর্শে কংগ্রেস এই আইন মেনে নেয় । একদল বিক্ষুব্ধ কংগ্রেসি সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস ছেড়ে 'ইন্ডিয়ান লিবারেল ফেডারেশন' নামে এক নতুন দল গঠন করেন ।

*****

Related Items

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ

সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ (Students' Role in Armed Revolutionary Struggles) :-

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পরাধীন জাতির মুক্তি সংগ্রামে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে । ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসেও জাতীয

রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day)

রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day) :-

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি লালকেল্লার সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে কোর্ট মার্শাল করে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে এই অবিচারের প্রতিবাদে ও তাঁর মুক্তির দাবিতে

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Quit India Movement) :-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ড

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসম

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অপশাসন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে গান্ধিজির নেতৃত্বে জা