Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 04/26/2012 - 13:01

ভারতের রাষ্ট্রপতি (President of India)

গণতান্ত্রিক ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের সঙ্গে ভারতবর্ষের মিল থাকলেও ভারতের রাষ্ট্রপ্রধান অর্থাৎ রাষ্ট্রপতির পদটি বংশানুক্রমিক নয় । এ ক্ষেত্রে প্রজাতান্ত্রিক দেশ চিন বা সোভিয়েত রাশিয়ার সঙ্গে অনেকাংশে মিল আছে । ওই সব দেশের মত ভারতবর্ষের রাষ্ট্রপ্রধানও প্রজাপুঞ্জের মধ্যে থেকে পরোক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন । ইংল্যান্ডের রাজা বা রানির মত ভারতে রাষ্ট্রপতি 'নিয়মতান্ত্রিক বা নামসর্বস্ব' (Titular executive) আর মন্ত্রীসভা হল 'প্রকৃত শাসক' (Real executive) । রাষ্ট্রপতি দেশের সাংবিধানিক তথা সশস্ত্র তিন বাহিনীর প্রধান । তাঁর কার্যকাল পাঁচ বছর । পাঁচ বছরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে তিনি পুনরায় রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেন । অন্যথায় অন্য কেউ নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন । ভারতীয় লোকসভা, রাজ্যসভা এবং বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের কেদ্রীয় শাসিত অঞ্চলের বিধানসভা সমূহের সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়ে থাকেন ।

রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীর যোগ্যতাবলী :

(ক) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থীকে অবশ্যই ভারতের নাগরিক হতে হবে ।

(খ) তাঁর বয়স অন্তত ৩৫ বছর বা তার বেশি হতে হবে ।

(গ) রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হওয়ার সময় তিনি সংসদ বা রাজ্যবিধান সভার সদস্য অথবা কোনও সরকারি বা বেসরকারি পদে অথবা অর্থ প্রাপ্তি হয় এমন কোনোও পদে নিযুক্ত থাকতে পারবেন না ।

(ঘ) তাঁকে লোকসভায় নির্বাচিত হওয়ার যোগ্যতা সম্পন্ন হতে হবে ।

রাষ্ট্রপতির ক্ষমতাবলী— রাষ্ট্রপতি ভারতের সাংবিধানিক প্রধান এবং সেই সূত্রে তিনি সর্বময় প্রশাসনিক ক্ষমতার অধিকারী । ইংল্যান্ডের রাজা বা রানীর মত তিনি নিয়মতান্ত্রিক প্রধান । আসল ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের হাতে ন্যস্ত । প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীমন্ডলী এবং সেই সিদ্ধান্ত অনুসারে সকল নির্দেশিকা জারি হয় রাষ্ট্রপতির নামে । ভারতের সংবিধান রাষ্ট্রপতিকে ছয় ধরনের ক্ষমতার অধিকার প্রদান করেছে । এগুলি হল—

(১) শাসন সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রী, রাজ্যপালদের, ভারতের একাউন্ট জেনারেল, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন ও তাঁদের পদচ্যুত করার অধিকার রাষ্ট্রপতির রয়েছে । এছাড়া তিনি সুপ্রিমকোর্ট ও হাইকোর্টের বিচারপতি, অডিটর জেনারেল, নির্বাচন কমিশনার, সশস্ত্র তিন বাহিনীর প্রধান এবং ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সদস্যদের নিয়োগ করেন । রাষ্ট্রপতি তাঁর পদাধিকার বলে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীত্রয়ের সর্বাধিনায়ক । কেন্দ্রীয় মন্ত্রীপরিষদ রাষ্ট্রশাসন ও পরিচালনা সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য ও সিদ্ধান্ত রাষ্ট্রপতিকে জানাতে বাধ্য থাকেন । 

(২) আইন সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতি লোকসভা গঠন, লোকসভার অধিবেশন আহ্বান প্রয়োজনে মুলতুবি ইত্যাদি করতে পারেন । রাষ্ট্রপতি দুজন অ্যাংলো ইন্ডিয়ান সদস্যকে লোকসভায় মনোনীত করেন । এ ছাড়া রাজ্যসভার ১২ জন সদস্যও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক মনোনীত হন । তাঁর সম্মতি ছাড়া কোনো বিল আইনে পরিণত হতে পারে না । অর্থবিল (Money bill) ছাড়া অন্য যে-কোনো বিলকে পুনর্বিবেচনার জন্য সংসদের উভয় পরিষদে ফেরত পাঠাতে পারেন ।

(৩) অর্থ সংক্রান্ত ক্ষমতা : ভারতীয় অর্থমন্ত্রী রাষ্ট্রপতির হয়ে সংসদে বাজেট পেশ করেন । বাজেট অধিবেশনের আগে রাষ্ট্রপতি সংসদের উভয় কক্ষের যৌথ অধিবেশনে ভাষণ দেন । রাষ্ট্রপতির হাতে রাষ্ট্রের আকস্মিক ব্যয় সংকুলানের জন্য একটি বিশেষ তহবিল থাকে ।

(৪) বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতি সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও অন্যান্য বিচারপতিদের নিয়োগ করেন । এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজ্যের হাইকোর্টের বিচারপতিরাও রাষ্ট্রপতির দ্বারা নিযুক্ত হন । সুপ্রিম কোর্টে মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তির প্রাণরক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি মকুব করতে পারেন বা নাও পারেন ।  

(৫) জরুরি ক্ষমতা : ভারতের সংবিধান অনুসারে তিনটি বিশেষ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি জরুরি অবস্থা জারি করতে পারেন, একে রাষ্ট্রপতির জরুরি ক্ষমতা বলে, যেমন—

(ক) জাতীয় জরুরি অবস্থা— যুদ্ধ, বৈদেশিক আক্রমণ ও নির্বাচিত সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে ,

(খ) রাজ্যগুলিতে শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থা বা দেশে অরাজক অবস্থা উপস্থিত হলে রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরি অবস্থা (রাষ্ট্রপতি শাসন) ঘোষণা করতে পারেন ।

(গ) সমগ্র দেশ বা দেশের কোনো অংশের আর্থিক স্থায়িত্ব ও সুনাম এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হলে রাষ্ট্রপতি অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন ।

(৬) রাজ্য সংক্রান্ত ক্ষমতা : রাষ্ট্রপতি বিভিন্ন রাজ্যের রাজ্যপালদের নিয়োগ করে থাকেন । এছাড়া রাজ্যের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় বিধানসভায় পেশ করার আগে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয় ।

*****

Related Items

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি (Anti-Circular Society)

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি (Anti-Circular Society):-

বাঙালিদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ঘোষণা কর

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Participation of Students in the anti-Partition Movement of Bengal):-

বাংলার মানুষদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্র

বিশ শতকের ভারতে ছাত্র আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ

বিশ শতকের ভারতে ছাত্র আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য ও বিশ্লেষণ (Students' Movements in Twentieth Century):-

বিশ শতকের ভারতে ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চারটি জাতীয় আন্দোলন হল—(i) ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী স্বদেশি আন্দ

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনী

আজাদ হিন্দ ফৌজের নারীবাহিনী (Women's Wing of the Ajad Hind Fauj):-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে ভারতকে মুক্ত করার উদ্দেশ্যে রাসবিহারী বসু জাপানে গিয়ে সেখানে তিনি বিপ্লবীদের সংগঠিত করার চেষ্টায় ছিলেন । ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের

কল্পনা দত্ত (Kalpana Datta)

কল্পনা দত্ত (Kalpana Datta):-

বিশ শতকে ব্রিটিশ-বিরোধী বিভিন্ন গণতান্ত্রিক ও জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ব্যর্থতার ফলে সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলন যথেষ্ট সক্রিয় হয়ে ওঠে । সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনে বাংলার নারীসমাজ প্রথমদিকে পরোক্ষভাবে অংশ নিতে শুরু করলেও ব