বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 01/30/2021 - 08:19

কৃষক আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য (The Peasants Movements in the Twentieth Century):- বিশ শতকের ভারতে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনগুলি পর্যালোচনা করলে আন্দোলনগুলির কয়েকটি বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয় । যেমন —

(১) বেশকিছু কৃষক আন্দোলন প্রথমদিকে ধর্মসংস্কার আন্দোলন হিসেবে শুরু হলেও পরে সেগুলি জমিদার, মহাজন ও ব্রিটিশ-বিরোধী আন্দোলনে পরিণত হয় । পরিশেষে এই সমস্ত আন্দোলনগুলি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরোধিতামূলক আন্দোলনে পরিণত হয় । উদাহরণ হিসেবে পাগলপন্থী আন্দোলন, ফরাজি আন্দোলন ও ওয়াহাবি আন্দোলনের কথা উল্লেখ করা যায় ।

(২) কৃষক আন্দোলনগুলির উৎসস্থল ছিল গ্রামাঞ্চল, বেশিরভাগ কৃষক আন্দোলনগুলি গ্রামাঞ্চলে শুরু হয় । প্রাথমিক পর্যায়ে এইসব আন্দোলনগুলি অসংগঠিত প্রকৃতির ছিল এবং আন্দোলনগুলি বিক্ষিপ্ত, বিচ্ছিন্ন ও ইতস্ততভাবে শুরু হয়েছিল ।

(৩) জাতীয়তাবাদী আদর্শের ওপর ভিত্তি কৃষকদের কোনো আন্দোলন শুরু হয়নি । জমির মালিকানা আদায়ের জন্য বা জমিদারি প্রথার উচ্ছেদ ঘটানোর জন্যও তারা আন্দোলন সংঘটিত করেনি । জমিদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ এবং ব্রিটিশদের উচ্চহারে অবৈধ খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে ছিল তাদের প্রতিবাদী আন্দোলন ।

(৪) কৃষক আন্দোলনগুলি অঞ্চলবিশেষে সীমাবদ্ধ ছিল । এক অঞ্চলের কৃষক আন্দোলনের সঙ্গে অন্য অঞ্চলের কৃষক আন্দোলনের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ থাকত না । আন্দোলনগুলিকে কেন্দ্র করে কৃষকদের মধ্যে সাময়িকভাবে যে ঐক্য ও সংহতি গড়ে উঠেছিল, আন্দোলনের উদ্দেশ্য সফল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলনগুলির অবসান ঘটে ।

(৫) কৃষক বিদ্রোহগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে জমিদার, মহাজন, সামন্তগোষ্ঠী এবং ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে পরিচালিত হয়েছিল । আবার দেখা যায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশকিছু জমিদার বা সামন্তপ্রভু কৃষকবিদ্রোহে অংশ গ্রহণ করেছিলেন এবং তারা কৃষকবিদ্রোহে নেতৃত্বও দিয়েছিলেন । বেশিরভাগ কৃষক আন্দোলনগুলিতে দেখা যায় আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে থেকেই কোনো সাধারণ কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ।

****

Comments

Related Items

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট

বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট (The Bengal Technical Institute) :-

ব্রিটিশ আমলে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশি আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প হিসাবে বাংলায় স্বদেশি উদ্যোগে বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education)

জাতীয় শিক্ষা পরিষদ (National Council of Education):-

ব্রিটিশ আমলে লর্ড কার্জনের সময় ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে বাংলাকে দ্বিখন্ডিত করার পর স্বদেশী আন্দোলন শুরু হলে ব্রিটিশ শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প রূপে দেশীয় প্রগতিশীল স্বদেশী ধাঁচে বাংলায় বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রস

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ

বাংলায় কারিগরি শিক্ষার বিকাশ (Development of Technical Education in Bengal) :-

ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে বাংলায় পাশ্চাত্য ধাঁচের কারিগিরি শিক্ষার অস্তিত্ব ছিল না । ঊনিশ শতক থেকে বাংলায় আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার ও বিজ্ঞান শিক্ষার অগ্

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute)

বসু বিজ্ঞান মন্দির (Bose Institute):-

ঔপনিবেশিক ভারতে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা ও বিজ্ঞান শিক্ষার বিকাশের উদ্দেশ্যে যেসকল প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠে সেগুলির মধ্যে অন্যতম হল 'বসুবিজ্ঞান মন্দির' বা বোস ইনস্টিটিউট । ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে নভেম্বর জগদীশচন্দ্র বসু ইংল্যান্ডের র

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ

কলকাতা বিজ্ঞান কলেজ (The Calcutta Science College) :-

১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লর্ড কার্জনের বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে বাংলায় স্বদেশি ও বয়কট আন্দোলন অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে ওঠে । এই সময় স্বদেশি বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঘটানোর উদ্দেশ্যে ১৯১৪ খ্রিস্টাব্দের ২৭শে মা