Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/11/2022 - 19:53

প্রশ্ন:- প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে কী কী পরিবর্তন ঘটেছিল ?

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতে নানা পরিবর্তন ঘটে—

(i) ভারতীয় অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ও অর্থনৈতিক সংকট : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ফলে ভারতে গভীর অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় প্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্রের দাম খুব বেড়ে যায় । যুদ্ধের পর অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় । বিদেশি জিনিসপত্রের আমদানি আবার শুরু হয় ও ভারতীয় শিল্পজাত জিনিসপত্রের ওপর চড়া হারে শুল্ক ধার্য করা হয়, ফলে ভারতের শিল্পসংস্থাগুলির বেশিরভাগই লোকসান সামলাতে না পেরে বন্ধ হয়ে যায় । এর ফলে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে— (ক) ভারতে অসংখ্য শিল্প-শ্রমিক ও মজুর বেকার হয়ে পড়ে, (খ) কৃষিজমির ওপর খাজনার হার বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের দারিদ্র চরমে ওঠে, (গ) যুদ্ধ শেষ হলে ভারতীয় সেনা ও সামরিক কর্মচারীদের বেশির ভাগই ছাঁটাই হয়ে বেকারে পরিণত হয় ।

(ii) ভারতবাসীর হতাশা ও অসন্তোষ : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারত ছিল ব্রিটেনের প্রধান উৎস । যুদ্ধের পর রাজনৈতিক সুযোগসুবিধা আদায় করা সহজ হবে— এই আশায় ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতারা ব্রিটেনকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছিলেন । কিন্তু প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জয়ী হয়ে ব্রিটেন সেই প্রতিশ্রুতি পালনে মোটেই উৎসাহী হয়নি, ফলে এশিয়া ও আফ্রিকার অন্যান্য পরাধীন জাতিগুলির মতো ভারতবাসীদের মনেও হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দেয় ।

(iii) ১৯১৯ খ্রস্টাব্দের ভারত শাসন আইন (মন্টেগু-চেমস্‌ফোর্ড শাসন সংস্কার) : প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে ভারতবাসীদের খুশি করার উদ্দেশ্যে ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন পাস করা হয় । কিন্তু এই আইনে ভারতকে স্বায়ত্বশাসন প্রদান করার কোনো উল্লেখ না থাকায় এই আইন ভারতীয়দের সন্তুষ্ট করতে পারে নি ।

(iv) ভারতীয় মুসলমান সমাজের ক্ষোভ- খিলাফৎ আন্দোলন : তুরষ্ক সাম্রাজ্যের প্রধান ছিলেন খালিফা । প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মানিদের পক্ষ অবলম্বন করার অপরাধে ব্রিটেন তথা মিত্রশক্তি খালিফাকে তাঁর পদ থেকে অপসারণ করে এবং তুরষ্ক সাম্রাজ্যের বিচ্ছেদ ঘটায় । তুরষ্কের সুলতানের অবমাননার প্রতিবাদে বিংশ শতাব্দীর প্রথম পর্বে ভারতীয় মুসলমানরা যে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন শুরু করে তা খিলাফৎ আন্দোলন নামে পরিচিত । তুরষ্কের খলিফাকে তাঁর পদে ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিকে কেন্দ্র করে ভারতবর্ষে খিলাফৎ আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে । ইতিমধ্যে ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে মুস্তাফা কামাল তুরষ্কের খালিফাতন্ত্রের অবসান ঘটালে ভারতে খিলাফৎ আন্দোলন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে ও এই আন্দোলন প্রত্যাহৃত হয় ।

*****

Comments

Related Items

রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day)

রশিদ আলি দিবস (Rasid Ali Day) :-

১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ২রা ফেব্রুয়ারি লালকেল্লার সামরিক আদালতে আজাদ হিন্দ বাহিনীর সেনা অফিসার ক্যাপ্টেন রশিদ আলিকে কোর্ট মার্শাল করে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করলে এই অবিচারের প্রতিবাদে ও তাঁর মুক্তির দাবিতে

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

ভারত ছাড়ো আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Quit India Movement) :-

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ৯ই আগস্ট মহাত্মা গান্ধির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলনের ড

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

আইন অমান্য আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Civil Disobedience Movement):-

১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ব্রিটিশ অপশাসনের বিরুদ্ধে আইন অমান্য আন্দোলনের ডাক দিলে সেই আন্দোলনে ভারতের ছাত্রসম

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন

অহিংস অসহযোগ আন্দোলন পর্বে ছাত্র আন্দোলন (Students' Participation in the Non Co-operation Movement):-

মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, দমনমূলক রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকান্ড, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক অপশাসন প্রভৃতি বিভিন্ন কারণে গান্ধিজির নেতৃত্বে জা

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি (Anti-Circular Society)

অ্যান্টি সার্কুলার সোসাইটি (Anti-Circular Society):-

বাঙালিদের ব্রিটিশ বিরোধিতাকে দুর্বল করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শাসক লর্ড কার্জন প্রশাসনিক অজুহাত দেখিয়ে ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দের ২০শে জুলাই সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের পরিকল্পনা ঘোষণা কর