Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 01/11/2021 - 09:52

ছাপাখানার ব্যবসায়িক উদ্যোগ (Press as a Commercial Venture) :

অষ্টাদশ শতকের শেষভাগ থেকে উনবিংশ শতকের প্রথমভাগ পর্যন্ত সময়ে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে অসংখ্য ছাপাখানা স্থাপিত হয় । ছাপাখানার প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে ছাপাখানা কেন্দ্রিক মুদ্রণশিল্প একটি পেশাদারি ব্যবসা হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে । কলকাতার নিকটে হুগলির শ্রীরামপুরে ছাপাখানাকে কেন্দ্র করে মুদ্রণ ব্যবসা গড়ে ওঠে । ছাপার কাজের ব্যবসায়িক চাহিদা ক্রমাগত বাড়তে থাকায় উনিশ শতকের প্রথমদিকে কলকাতায় একের পর এক ছাপাখানা গড়ে উঠতে থাকে । কলকাতার পাথুরিয়াঘাটার আনন্দচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ছাপাখানা তৈরি করে বইয়ের ব্যবসা শুরু করেন । উনিশ শতকের শেষের দিকে কিশোরী মোহন বাগচি তাঁর পিতা প্যারীমোহন বাগচির নামে 'পি এন বাগচি অ্যাণ্ড কোম্পানি' নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা স্থাপন করে পঞ্জিকা ছাপার ব্যবসা শুরু করেন । ১৮১৮ খ্রিস্টাব্দে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য ব্যবসায়িক লক্ষ্যে ' বঙ্গালি গেজেটি প্রেস' প্রতিষ্ঠা করেন । প্রথম বাঙালি মুদ্রাকর ও বই বিক্রেতা ছিলেন গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য । মুদ্রণশিল্পের বিকাশে গঙ্গাকিশোর ভট্টাচার্য উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বাক্ষর রাখেন । তাঁর ব্যবসায়িক সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে বহু বাঙালি নিজেদের উদ্যোগে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করে বই ও সংবাদপত্রের ব্যবসা শুরু করেন । কৃষ্ণগোপাল ভক্ত শিমুলিয়া মানিকতলা স্ট্রিটে 'নিউ বেঙ্গল প্রেস' গড়ে তোলেন । ৩৭নং মেছুয়াবাজার স্ট্রিটে ঠনঠনিয়ায় রাজকৃষ্ণ রায় 'বীণা যন্ত্র' নামে ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । এই সমস্ত প্রেসগুলি ছাপাখানা কেন্দ্রিক ব্যবসার প্রসার ঘটায় । বাংলা ছাপাখানার ব্যবসাতে কলকাতার বটতলা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করে । বটতলার প্রকাশ করা ছাপা বই গ্রামেগঞ্জে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফেরিওয়ালা নিযুক্ত করা হত । ফেরিওয়ালারা বইয়ের বোঝা পিঠে নিয়ে শহর ও দূর দূর গ্রামে বই ফেরি করত । বটতলার ফেরিওয়ালারা গ্রামে বই বিক্রি করতে গিয়ে অনেক সময় নগদ দাম না নিয়ে ছাপা বইয়ের বদলে পুরোনো পুঁথি নিয়ে আসত । পুঁথিগুলি তারা ভালো দামে কলকাতার বিভিন্ন ছাপাখানায় বিক্রি করত । বটতলার ছাপা বইগুলি দামে সস্তা হওয়ায়, সেগুলির ব্যবসায়িক বাজার ভালোই ছিল । ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে বিদেশ থেকে আধুনিক উন্নত মুদ্রণযন্ত্র এনে উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী কলকাতার শিবনারায়ণ দাস লেনে একটি ছাপাখানা প্রতিষ্ঠা করেন । ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে এই প্রতিষ্ঠানের নাম হয় 'ইউ রায় অ্যান্ড সন্স' । এভাবে ছাপাখানাকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়িক বিকাশ শুরু হয় ।

*****

Comments

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।