ইলবার্ট বিল আন্দোলন (The Ilbert Bill Controversy)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 08:08

ইলবার্ট বিল আন্দোলন (The Ilbert Bill Controversy) :

১৮৭৩ খ্রিস্টাব্দের ফৌজদারি আইন অনুসারে ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করার ক্ষমতা ভারতীয় বিচারকের ছিল না । একমাত্র ইউরোপীয় বিচারকগণই ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারতেন । ইতিমধ্যে অনেক ভারতীয় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়রা বিচারকের পদে উন্নীত হয়েছিলেন । ব্রিটিশ ভারতের বিচারব্যবস্থায় জাতিভেদমূলক বৈষম্য দূর করার জন্য বড়লার্ট (ভাইসরয়) লর্ড রিপনের পরামর্শ অনুসারে ভাইসরয়ের কাউন্সিলের আইন সদস্য ইলবার্ট একটি আইনের খসড়া তৈরি করেন, এই খসড়া আইনই ইলবার্ট বিল (Ilbert Bill) নামে পরিচিত । ইলবার্টের নাম অনুসারে এই বিলটির নাম হয় ইলবার্ট বিল । এই খসড়া আইনে ভারতীয় বিচারকদের ইউরোপীয় বিচারকদের সমতুল্য মর্যাদা ও ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয় এবং বলা হয় যে, ভারতীয় বিচারকরাও শ্বেতাঙ্গদের বিচার করতে পারবেন ।

ইলবার্টের খসড়া আইনটি প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইউরোপীয়রা ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন শুরু করে, কারণ এই খসড়া আইনটি ব্রিটিশ পার্লামেন্টে পাস হলে ভারতীয় বিচারকরাও ইউরোপীয়দের বিচার করতে পারতেন এবং সেক্ষেত্রে তাদের মর্যাদা ইউরোপীয় বিচারকদের সমতুল্য হত । ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের এই আন্দোলন 'শ্বেতাঙ্গ বিদ্রোহ' (White mutiny) নামে খ্যাত । বিলটি প্রত্যাহারের জন্য ইংরেজ আইনজীবী কেসুয়িক, মিলার ব্রানসন -এর নেতৃত্বে ‘ডিফেন্স অ্যাসোসিয়েশন’ নামে এক সংস্থা গঠন করে আন্দোলন চালায় । ভারতের বিভিন্ন স্থানে তারা শাখা স্থাপন করে এবং ভারতীয়দের বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকে । তারা এই অভিমত প্রকাশ করেন যে, ইউরোপীয়দের বিচার করার যোগ্যতা ও উপযুক্ত ক্ষমতা ভারতীয়দের নেই । সমকালীন ‘স্পেকটেটর’ ও ‘টাইমস’ পত্রিকাও এই বিলের সমালোচনা করে ।

প্রতি-আন্দোলন :

১৮৮৩-৮৪ খ্রিস্টাব্দে ইলবার্ট বিলের বিরুদ্ধে ইউরোপীয়দের আন্দোলন ও বিক্ষোভের প্রত্যুত্তরে সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ভারতসভা প্রতি-আন্দোলন গড়ে তোলে । ইলবার্ট বিলের সমর্থনে ভারতসভা দেশের নানা স্থানে জনসভা করে এবং সংবাদপত্রে মতামত জানাতে থাকে । কিন্তু সরকার শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয়দের দাবির কাছে মাথা নত করে । প্রস্তাবিত আইনের খসড়াটি  বাতিল করা হল না বটে, কিন্তু তার কয়েকটি উদারনৈতিক ধারা এমন ভাবে সংশোধন করা হয় যাতে ইলবার্ট বিলের আসল উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায় । সংশোধনীতে বলা হয়, ভারতীয় বিচারক ইউরোপীয় অপরাধীদের বিচার করতে পারবেন কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁকে ইউরোপীয়দের মনোনীত জুরির সাহায্য নিতে হবে ইত্যাদি ।

ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব (Importance of Ilbert Bill Agitation) :

ভারতের জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে ইলবার্ট বিল আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম ।

(১) এই আন্দোলন ভারতীয়দের কাছে ছিল শাপে বর । তখনও পর্যন্ত বেশ কিছু সংখ্যক ভারতীয়দের ইংরেজদের অভিপ্রায় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ছিল না । ইলবার্ট বিল আন্দোলনে ইউরোপীয়দের বর্ণবিদ্বেষ ও ভারতীয়দের প্রতি ঘৃণা তাঁদের চোখ খুলে দেয় । তাঁরা উপলবদ্ধি করেন ভারতবাসী মাত্রেই ইংরেজদের চোখে ঘৃণার পাত্র ও নিজেদের সম্মান সম্পর্কে সচেতন হন ।

(২) ইলবার্ট বিল আন্দোলন ভারতীয়দের নিজেদের দেশে নিজেদের অসম্মানজনক অবস্থান সম্পর্কে সচেতন করে তোলে এবং পরবর্তীকালে চরমপন্থী আন্দোলনের পথ প্রশস্ত করে ।

(৩) এতকাল ভারতীয় সংবাদপত্রগুলি সুনির্দিষ্ট কর্মসূচির ভিত্তিতে যে সংঘবদ্ধ আন্দোলনের কথা বলে আসছিল ইলবার্ট বিল আন্দোলন সেদিকে ভারতীয়দের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সমর্থ হয় ।

(৪) ইলবার্ট বিল বিতর্ক ভারতীয়দের আত্মাভিমানে প্রচন্ড আঘাত হানে যার পরিণতিতে তাঁরা দ্রুত রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হতে প্রয়াসী হন ।

******

Related Items

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

প্রশ্ন:-  আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান সম্পর্কে সংক্ষেপে লেখ । কী কারণে শেষ পর্যন্ত আজাদ হিন্দ ফৌজ আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়ে ছিল ?

আজাদ হিন্দ ফৌজের ভারত অভিযান—

’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

প্রশ্ন:-  ’করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে’ -কোন আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল ? এই আন্দোলনে কৃষক ও শ্রমিকরা কীরূপ ভূমিকা নিয়েছিল ?

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দের ভারত ছাড়ো আন্দোলনের রণধ্বনি ছিল 'করেঙ্গা ইয়া মরেঙ্গে' ।

ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারত ছাড়ো আন্দোলনের প্রসার আলোচনা কর ।

১৯৪২ সালের ৮ই আগষ্ট ‘ভারত-ছাড়ো প্রস্তাব’ গৃহীত হলে পরদিন অর্থাৎ ৯ই আগষ্ট, ১৯৪২ এর ভোর থেকেই আন্দোলন শুরু হয়, যেমন—

১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাস্ট্যাস্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

প্রশ্ন:-  ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে কোন ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রিপ্‌স ভারতে এসেছিলেন ?

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

প্রশ্ন:- ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান আলোচনা কর ।

ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে মাতঙ্গিনী হাজরার অবদান বিশেষভাবে স্মরনীয় ।