ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 01/12/2021 - 15:38

ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স (Indian Association for the Cultivation of science) :-

কায়েমী স্বার্থরক্ষাকারী ও প্রভূত্ববাদী ঔপনিবেশিক বিজ্ঞানচর্চার প্রেক্ষাপটে ঊনিশ শতকে ব্রিটিশ শাসিত ভারতে ভারতীয়দের মধ্যে আধুনিক বিজ্ঞানচর্চা সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যে জাতীয় বিজ্ঞান গবেষণাগার নির্মাণে কলকাতা মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় এম. ডি. ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকারের জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি 'ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অব সায়েন্স' বা 'ভারতবর্ষীয় বিজ্ঞানসভা' (IACS) প্রতিষ্ঠা । তিনি অ্যালোপ্যাথির ডাক্তার হলেও অচিরেই হোমিওপ্যাথির একজন অগ্রগণ্য ডাক্তার হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন । তিনি কেশবচন্দ্র সেন, রামকৃষ্ণ পরমহংস প্রমূখ ব্যক্তিবর্গের চিকিৎসাও করেছিলেন । মহেন্দ্রলাল সরকার এমন একটি বিজ্ঞানসভা প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন যা দেশীয় ঐতিহ্যের পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণের পাশাপাশি আধুনিক বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলবে । এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য তিনি ১৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের ২৯শে জুলাই তৎকালীন বাংলার লেফটেন্যান্ট গভর্নর স্যার রিচার্ড টেম্পল -এর সভাপতিত্বে এবং ফাদার লাঁফো, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, ইশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রমুখ ব্যক্তির সহযোগিতায় ও কলকাতার বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দের উপস্থিতিতে বৌবাজার স্ট্রীটে প্রথম 'ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স' (IACS) প্রতিষ্ঠা করেন । মহেন্দ্রলাল সরকার নিজে এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হন । বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে অনুদান বা অর্থ সংগ্রহ করে তিনি এই প্রতিষ্ঠানের বিশ্বমানের গবেষণাগার ও একটি আধুনিক লেকচার থিয়েটার তৈরি করেন । সংগৃহীত অর্থে গবেষণাগারের প্রয়োজনীয় বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনা হয় । পদার্থবিদ্যা, রসায়নশাস্ত্র, জ্যোতির্বিজ্ঞান, উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণীবিদ্যা, শারীরবিজ্ঞান ভূতত্ত্বসহ বিজ্ঞানের সমস্ত বিভাগে গবেষণা বা বিজ্ঞানচর্চার উদ্যোগ নেওয়া হয় । IACS -তে পদার্থবিদ্যায় ফাদার লাঁফো, ডঃ সরকার স্বয়ং এবং পরে জগদীশচন্দ্র বোস, রসায়নে কানাইলাল দে, গণিতে আশুতোষ মুখোপাধ্যায়, ভূতত্ত্বে প্রমথনাথ বসু, জীববিজ্ঞানে নীলরতন সরকার এর মত দিকপাল পণ্ডিতেরা শিক্ষাদানে নিযুক্ত ছিলেন । ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দের ২৩শে ফেব্রুয়ারী মহেন্দ্রালাল সরকারের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র অমৃতলাল সরকার এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন । বিজ্ঞানী সি. ভি. রমন এই প্রতিষ্ঠানের গবেষণাগারে বিখ্যাত রমন এফেক্ট আবিষ্কার করেন ও ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন । ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে কে. এস. কৃষ্ণন 'Crystal Magnetism' -এর ওপর গবেষণা করে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেন । বর্তমানে IACS -এর মূল গবেষণাগার বউবাজার স্ট্রিট থেকে সরিয়ে যাদবপুরে স্থানান্তরিত করা হয়েছে ।

*****

Comments

Related Items

'হুতোম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায় ?

প্রশ্ন : 'হুতোম প্যাঁচার নকশা' গ্রন্থে উনিশ শতকের বাংলার কীরূপ সমাজচিত্র পাওয়া যায় ?

স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল ?

প্রশ্ন : স্বাধীনতার পরে ভাষার ভিত্তিতে ভারত কীভাবে পুনর্গঠিত হয়েছিল ?

দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখ ।

প্রশ্ন : দলিত আন্দোলন বিষয়ে গান্ধি-আম্বেদকর বিতর্ক নিয়ে একটি টীকা লেখ ।

কারিগরি শিক্ষার বিকাশে 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট' -এর কী ভূমিকা ছিল ?

প্রশ্ন : কারিগরি শিক্ষার বিকাশে 'বেঙ্গল টেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট' -এর কী ভূমিকা ছিল ?

ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর ।

প্রশ্ন : ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষাবিস্তারের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর ।