আইন অমান্য আন্দোলন : প্রথম পর্যায় (The First Phase of The Civil Disobedience Movement)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 04/23/2012 - 19:40

আইন অমান্য আন্দোলন : প্রথম পর্যায় (১৯৩০-৩১ খ্রিঃ) [The First Phase of The Civil Disobedience Movement] :

নেহরু রিপোর্ট কার্যকর করতে ব্রিটিশ সরকারের সদিচ্ছার অভাব ও দেশের সর্বত্র ব্রিটিশ বিরোধী বিক্ষোভ ও অসন্তোষ হেতু আইন অমান্য আন্দোলন অনিবার্য হয়ে উঠেছিল । বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ভারতীয় অর্থনীতিকে গ্রাস করে । ক্রমে ব্যবসায়ী, কৃষক, মজুর সকলেই চরম দুর্দশার মধ্যে পড়ে । এসময়ে সর্বত্র কৃষক এবং শ্রমিকদের ট্রেড-ইউনিয়ন কংগ্রেস স্থাপিত হয় । ট্রেড-ইউনিয়নগুলির নেতৃত্বে সর্বত্র সরকারি নীতি ও কর্মপদ্ধতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শিত হতে থাকে । সব মিলিয়ে জনমনে এক চরম অস্থিরতার সৃষ্টি হয় । ব্রিটিশ সরকার দমনমূলক নীতি প্রয়োগ করে বিক্ষোভ দমনে সচেষ্ট হন । এই পরিস্থিতিতে ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৪ থেকে ১৬ই ফেব্রুয়ারি জাতীয় কংগ্রস সবরমতী আশ্রমে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং করে ও গান্ধিজির সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে অহিংস আইন অমান্য আন্দোলন শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং এই আন্দোলনের যাবতীয় দায়িত্ব গান্ধিজির ওপর অর্পণ করে ।

গান্ধিজি প্রথমেই ঠিক করেছিলেন লবণ সত্যাগ্রহের দ্বারা আইন অমান্য আন্দোলনের সূচনা করবেন । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে লবণের ওপর দ্বিগুণ কর বসিয়ে ব্রিটিশ সরকার জনসাধারণের দুরবস্থা বাড়িয়ে দেয় । এছাড়া সমুদ্রের জল থেকে লবণ প্রস্তুত করার ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল এবং এই নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করা ছিল দণ্ডনীয় অপরাধ । ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২রা মার্চ গান্ধিজি ভাইসরয় লর্ড আরউইনকে এক চিঠি লিখে লবণ উৎপাদনের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিতে বলেন, অন্যথায় তিনি লবণ আইন অমান্য করবেন । এর আগে গান্ধিজি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ৩০শে জানুয়ারি 'ইয়ং ইন্ডিয়া' পত্রিকাতে সরকারের কাছে 'এগারো দফা দাবি' তুলে ধরেন । এই দাবিগুলির মধ্যে মাদক দ্রব্য বর্জন, বন্দিমুক্তি, লবণকর রদ, খাজনা হ্রাস প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য । ভাইসরয় লর্ড আরউইন গান্ধিজির দাবি অগ্রাহ্য করলেন ও এই প্রসঙ্গে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে অসম্মত হলেন । ক্ষুব্ধ ও অপমানিত হয়ে গান্ধিজি বড়লাটকে এক পত্রে লেখেন যে নতজানু হয়ে তিনি কেবলমাত্র এক টুকরো রুটি চেয়েছিলেন, বিনিময়ে তিনি পেলেন পাথর । এর পর থেকেই গান্ধিজি লবণ আইন ভঙ্গের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন ।

*****

Related Items

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

ইতিহাসের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট ব্যবহারের যেমন বিভিন্ন সুবিধা রয়েছে তেমন অনেক ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধাও রয়েছে ।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্রের গুরুত্ব:-

আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনায় সমসাময়িক গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল 'বঙ্গদর্শন' ও সোমপ্রকাশ পত্রিকা ।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে চিঠিপত্রের গুরুত্ব

আমাদের স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরু তাঁর কন্যা ইন্দিরাকে যে চিঠিগুলি লিখেছেন, সেখান থেকে প্রাপ্ত বহু তথ্য ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসাবে বিবেচিত হয় ।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসের উপাদান হিসাবে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথার গুরুত্ব

আধুনিক ভারতের ইতিহাস রচনার ক্ষেত্রে আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ।

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদান হিসাবে সরকারি নথিপত্রের গুরুত্ব

আধুনিক ভারতের ইতিহাসচর্চার উপাদানগুলির মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ হল— (১) সরকারি নথিপত্র, (২) আত্মজীবনী ও স্মৃতিকথা, (৩) চিঠিপত্র এবং (৪) সাময়িকপত্র ও সংবাদপত্র ।