নদীর বহন কাজ কী কী প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় এবং নদীর অবঘর্ষ ক্ষয় ও ঘর্ষণ ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য কী ?

Submitted by avimanyu pramanik on Tue, 12/28/2021 - 17:30

প্রশ্ন : নদীর বহন কাজ কী কী প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় এবং নদীর অবঘর্ষ ক্ষয় ও ঘর্ষণ ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য কী ?

নদীর তার বহন কাজ নিম্নলিখিত চারটি প্রক্রিয়ায় সংঘটিত করে থাকে, যথা— (১) দ্রবণ প্রক্রিয়া,  (২) ভাসমান প্রক্রিয়া, (৩) লম্ফদান প্রক্রিয়া, (৪) আকর্ষণ প্রক্রিয়ায় ।

(১) দ্রবণ প্রক্রিয়া (Solution) :  অনেক সময় নদী তার গতিপথে কোনো কোনো প্রস্তরখন্ডকে দ্রবিভূত করে তার জলস্রোতের সঙ্গে বহন করে থাকে । লবণ, চুনাপাথর প্রভৃতি নদীর জলে দ্রবিভূত হয়ে বাহিত হয় ।

(২) ভাসমান প্রক্রিয়া (Suspension) : অনেক সময় ক্ষুদ্রাকার ও কম ওজনের পাথর, বালি বা কাদার কণা নদী-স্রোত চক্রাকারে ঘুরতে ঘুরতে এক স্থান থেকে অন্যত্র ভেসে যায় এবং নদী এগুলিকে ভাসমান অবস্থায় বহন করে থাকে ।

(৩) লম্ফদান প্রক্রিয়া (Saltation) : নদীর স্রোতের টানে কিছু কিছু শিলাখন্ড নদীখাতে বারবার ধাক্কা খেয়ে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে চলে এবং কালক্রমে নদীপথে বাহিত হয় ।

(৪) আকর্ষণ প্রক্রিয়া (Traction) : নদীগর্ভে পতিত বিভিন্ন রকম ভারী প্রস্তরখন্ড স্রোতের টানে নদীর তলদেশ দিয়ে বোঝা হিসাবে (Bed-load) গড়িয়ে গড়িয়ে অন্যত্র বাহিত হয় । নদীবাহিত বিভিন্ন বস্তুর মধ্যে আকর্ষণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে পরিবাহিত বস্তুর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ।

অবঘর্ষ ক্ষয় ও ঘর্ষণ ক্ষয়ের মধ্যে পার্থক্য : নদীর অবঘর্ষ ক্ষয় ও ঘর্ষণ ক্ষয়ের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল এই যে— পার্বত্য অঞ্চলে প্রবল স্রোতের জন্য নদীবাহিত নানান আকারের ও বিভিন্ন আয়তনের পাথরগুলির সঙ্গে নদীখাতে ঘর্ষণের আঘাতের ফলে নদী খাতে ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয় । এই প্রক্রিয়াকে অবঘর্ষ ক্ষয় বলে । এই গর্তগুলির জন্য নদীখাত আরও দ্রুত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে যায় । অর্থাৎ অবঘর্ষ ক্ষয়ের ফলে নদীখাতে ছোটো ছোটো গর্তের সৃষ্টি হয় ।

পক্ষান্তরে, ঘর্ষণ ক্ষয়ের সময় নদীবাহিত পাথরগুলি পরস্পরের সঙ্গে ক্রমাগত ঘর্ষণে ও ঠোকাঠুকির ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে অবশেষে বালি কণায় পরিণত হয় । অর্থাৎ নদীর ঘর্ষণ ক্ষয়ের ফলে পাথরখন্ডগুলি বালি কণায় রূপান্তরিত হয় ।

*****

Comments

Related Items

ঘনীভবন (Condensation)

ঘনীভবন (Condensation) : যে প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প জলকণায় পরিণত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে । আর্দ্র বায়ুর উষ্ণতা শিশিরাঙ্কের নীচে নেমে গেলে বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জলকণায় পরিণত হয় । এই জলকণাসমূহ বিভিন্ন

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity)

বায়ুর আর্দ্রতা (Humidity) : বায়ুতে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতিকে বা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাসকে বায়ুর আর্দ্রতা বলে । বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকলে তাকে আর্দ্র বায়ু এবং কম থাকলে তাকে শুষ্ক বায়ু বলে । বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা প্রধানত বায়ুর উষ

বায়ুর আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ (Humidity and Precipitation)

বায়ুর আর্দ্রতা ও অধঃক্ষেপণ (Humidity and Precipitation):

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ

বায়ুপ্রবাহের পরিমাপ : বায়ু কোনদিক থেকে প্রবাহিত হচ্ছে, তা বাতপতাকার (Windvane)-এর সাহায্যে সহজেই নির্ণয় করা যায় । অ্যানিমোমিটার (Anemometer) নামক যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ পরিমাপ করা হয় । বায়ুপ্রবাহের গতিবেগ মাপার একক হল নট (১ নট = ১.৮ ক

সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds)

সাময়িক বায়ু (The Periodic Winds) : দিনের বিভিন্ন সময়ে এবং বছরের বিভিন্ন ঋতুতে স্থল ও জলভাগের বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুচাপের পার্থক্যের ফলে সাময়িকভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তাকে সাময়িক বায়ু বলে । এই বায়ু কয়েক প্রকারের হয়, যেমন— (১)