আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান হিসেবে উষ্ণতার গুরুত্ব কী ?

Submitted by avimanyu pramanik on Fri, 12/31/2021 - 21:06

প্রশ্ন : আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান হিসেবে উষ্ণতার গুরুত্ব কী ?

আবহাওয়া ও জলবায়ুর উপাদান হিসেবে উষ্ণতার গুরুত্ব অপরিসীম । উষ্ণতার ওপরেই আবহাওয়া ও জলবায়ুর অন্যান্য উপাদান যেমন— বায়ুচাপ, বায়ুপ্রবাহ, আর্দ্রতা, বৃষ্টিপাত প্রভৃতি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে । উষ্ণতার তারতম্যে আবহাওয়া ও জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানগুলির যথেষ্ট তারতম্য লক্ষ করা যায়, যেমন—

(১) বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুর চাপ :-  বায়ুর উষ্ণতা কমে গেলে বায়ু সংকুচিত হয় এবং বায়ুর চাপ বেড়ে যায় । আবার উষ্ণতা বেড়ে গেলে বায়ু আয়তনে প্রসারিত হয় এবং বায়ুচাপ কমে যায় । কাজেই, উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুচাপ বিপরীত অনুপাতে পরিবর্তিত হয়, অর্থাৎ উষ্ণতা কমলে বায়ুচাপ বাড়ে এবং উষ্ণতা বাড়লে বায়ু চাপ কমে ।

(২) বায়ুর উষ্ণতা ও বায়ুপ্রবাহ:- বায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে বায়ুচাপের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে । ভুপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে বায়ুচাপের তারতম্যের ফলেই বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । যেখানে বায়ুর চাপ বেশি সেখান থেকে যেখানে বায়ুর চাপ কম, বায়ু সেদিকেই প্রবাহিত হয় । এইভাবে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বায়ু ধাবিত হলে বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয় । বায়ুচাপ উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে, তাই বায়ুপ্রবাহও উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীল ।

(৩) বায়ুর উষ্ণতা ও আর্দ্রতা:-  উষ্ণতা বেড়ে গেলে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বা আর্দ্রতা বাড়ে, আবার, উষ্ণতা কমে গেলে বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণের ক্ষমতা কমে যায় । অতএব বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণের ক্ষমতা বা আর্দ্রতা, বায়ুর উষ্ণতার ওপর নির্ভরশীল ।

(৪) বায়ুর উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাত:-  উচ্চচাপ অঞ্চল (শীতল অঞ্চল) থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের (উষ্ণ অঞ্চল) দিকে প্রবাহিত হওয়ার সময় বায়ুপ্রবাহের গতিপথে সাগর বা মহাসাগর থাকলে ওই বায়ু প্রচুর পরিমাণে জলীয়বাষ্প গ্রহণ করে । বায়ু যতই উষ্ণ অঞ্চলের দিকে যেতে শুরু করে ততই তার জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যেতে থাকে । জলীয়বাষ্প বিশুদ্ধ বায়ুর তুলনায় হালকা হওয়ায় জলীয় বাষ্পপূর্ণ সম্পৃক্ত বা পরিপৃক্ত বায়ু ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যেতে থাকে এবং উপরের শীতল বায়ুস্তরের প্রভাবে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় । এজন্য বায়ুর উষ্ণতার সঙ্গে বৃষ্টিপাত পরস্পর সম্পর্কযুক্ত ।

*****

Comments

Related Items

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effects of Global Warming)

বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব (Effects of Global Warming) : মানুষের বিভিন্ন প্রকার অবিবেচনাপ্রসূত ক্রিয়াকলাপ, যেমন— অত্যধিক পরিমাণে জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন ও অরণ্যবিনাশ, কৃষিকাজে প্রয়োজনের তুলনায় অধিক পরিমাণে নাইট্রোজেন

বিশ্ব উষ্ণায়নে গ্রিনহাউস গ্যাসের ভূমিকা

বিশ্ব উষ্ণায়নে গ্রিনহাউস গ্যাসের ভূমিকা (Role of Green House Gas) : কার্বন ডাই-অক্সাইড, ক্লোরোফ্লুরো কার্বন, নাইট্রাস অক্সাইড, মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড, ওজোন, জলীয় বাষ্প প্রভৃতি গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির দ্বারা বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা বৃদ্ধিই হল বিশ্ব উষ্ণায়নের

বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)

বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming) : পৃথিবীর স্বাভাবিক উষ্ণতা অপেক্ষা উষ্ণতার ক্রমবর্ধমান ও অস্বাভাবিক বৃদ্ধিকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন নামে অভিহিত করেন । সূর্যরশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গরূপে বায়ুমণ্ডল ভেদ করে এসে ভূপৃষ্ঠে পতিত হয়ে পৃথিবীপৃষ্ঠ ও বায়ুমন্ডলকে উত্

পৃথিবীর উষ্ণতার অনুভূমিক বন্টন

পৃথিবীর উষ্ণতার অনুভূমিক বন্টন : নিরক্ষরেখার (0° অক্ষাংশ ) নিকটবর্তী অঞ্চলে সূর্যরশ্মির তাপীয় ফল বা ইনসোলেশনের পরিমাণ সর্বাপেক্ষা বেশি হওয়ার জন্য এই অঞ্চলে গড় উষ্ণতা হয় ২৫° সে.

সমোষ্ণরেখা (Isotherm line)

সমোষ্ণরেখা (Isotherm line) : ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র তাপমাত্রা সমান নয় । ভূপৃষ্ঠের যে সকল স্থানের গড় উষ্ণতা সমান বা একই রকম থাকে, মানচিত্রে সেই সকল স্থানগুলিকে পরস্পর যোগ করে যে কাল্পনিক রেখা টানা হয়, তাকে সমোষ্ণরেখা বলে । অর্থাৎ, যে কাল্পনিক রেখা দিয়ে বছরে