আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত (Atlantic Ocean Current)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 11/07/2013 - 16:57

আটলান্টিক মহাসাগরের স্রোত (Atlantic Ocean Current) :- আটলান্টিক মহাসাগর হল পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম মহাসাগর । এর আকৃতি অনেকটা ইংরেজি ‘S’ অক্ষরের মতো । আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্বে ইউরোপ ও আফ্রিকা মহাদেশ, পশ্চিমে উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ, উত্তরে সুমেরু মহাসাগর এবং দক্ষিণে কুমেরু মহাসাগর অবস্থিত । এই মহাসাগরের স্রোতগুলির নাম :- (১) কুমেরু স্রোত, (২) বেঙ্গুয়েলা স্রোত,  (৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, (৪) ব্রাজিল স্রোত,  (৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত,  (৬) উপসাগরীয় স্রোত,  (৭) উত্তর আটলান্টিক স্রোত,  (৮) ক্যানারী স্রোত  (৯) ল্যাব্রাডার স্রোত  ইত্যাদি । 

(১) কুমেরু স্রোত (শীতল) :-  কুমেরু মহাসাগর থেকে শীতল কুমেরু স্রোতটি দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে এবং উওর দিকে প্রবাহিত হয়ে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় । (i) অপ্রধান শাখাটি ফকল্যান্ড স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং  (ii) প্রধান শাখাটি কুমেরু স্রোত নামে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় ।

(২) বেঙ্গুয়েলা স্রোত (Benguela Current): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে কুমেরু স্রোতের প্রধান শাখাটি উত্তর-পূর্বদিকে বেঁকে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে প্রতিহত হয়ে শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোত নামে আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে প্রবাহিত হয় এবং অবশেষে উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

(৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ) : দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ুর প্রভাবে শীতল বেঙ্গুয়েলা স্রোত আটলান্টিক মহাসাগরে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । এই স্রোত মোটামুটি পশ্চিমমুখী ।

(৪) ব্রাজিল স্রোত (উষ্ণ) : বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত শাখা পশ্চিমমুখী হয়ে দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের সেন্ট রক অন্তরীপে বাধা পেয়ে দুটি শাখায় ভাগ হয়ে যায়, একটি শাখা ব্রাজিল স্রোত নামে ব্রাজিলের পূর্ব উপকূল বরাবর দক্ষিণদিকে অগ্রসর হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে পুনরায় মিলিত হয় ।

(৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত :- বেঙ্গুয়েলা স্রোত ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত অপর শাখাটি দক্ষিণ আমেরিকার উত্তর-পূর্ব উপকূল ধরে ক্যারিবিয়ান সাগরে প্রবেশ করে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় ।

(৬) উপসাগরীয় স্রোত (Gulf Stream Current):- বেঙ্গুয়েলা স্রোত, দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত ও উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের মিলিত প্রবাহ মেক্সিকো উপসাগরে প্রবেশ করে উপসাগরীয় স্রোত নামে প্রবাহিত হয় । সংকীর্ণ ফ্লোরিডা প্রণালী দিয়ে এই স্রোত বেগে প্রবাহিত হয় । এই সময় এর গতিবেগ হয় ঘন্টায় ৪ কিমি ও জলের উষ্ণতা হয় 27° সে. ও রং হয় গাঢ় নীল ।

(৭) উত্তর আটলান্টিক স্রোত :- উপসাগরীয় স্রোত উত্তর-পূর্বদিকে গিয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে তিনটি শাখায় বিভক্ত হয় । প্রধান শাখাটি উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জ ও উত্তর-পশ্চিম ইউরোপের পাশ দিয়ে নরওয়ের উত্তরে চলে যায় । 

(৮) ক্যানারী স্রোত :- উপসাগরীয় স্রোতের দক্ষিণ শাখাটি পর্তুগাল উপকূলে বাধা প্রাপ্ত হয়ে ক্যানারী স্রোত (শীতল) নামে প্রথমে দক্ষিণে ও পরে পশ্চিমে বেঁকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।  

(৯) ল্যাব্রাডার স্রোত (Labrador Current):- মেরু বায়ুর প্রভাবে সুমেরু অঞ্চলের উত্তর মহাসাগর থেকে একটি শীতল স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে ও আর একটি স্রোত গ্রীণল্যান্ডের পূর্ব উপকূল দিয়ে গ্রীণল্যান্ড স্রোত নামে প্রবাহিত হয়ে উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশ করে । উভয় স্রোত দুটি ল্যাব্রাডার উপদ্বীপের কাছে মিলিত হয় এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোত নামে উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকুল দিয়ে দক্ষিণদিকে কড অন্তরীপ পর্যন্ত প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় । এই দুই স্রোতের মিলনস্থলকে হিমপ্রাচীর বলে ।

উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু এবং শীতল ল্যাব্রাডার স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত শীতল ও শুষ্ক বায়ু পরস্পর সংমিশ্রণের ফলে এই অঞ্চলে প্রবল ঝড় ও ঘন কুয়াশার সৃষ্টি হয় । ফলে এই অঞ্চলে জাহাজ চলাচলে অসুবিধার সৃষ্টি হয় ।              

*****

Related Items

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river)

ভাগীরথী-হুগলী নদীর ওপর বর্জ্যের প্রভাব (Effects of waste disposal on Bhagirathi-Hooghly river) : প্রায় 2500 কিমি দীর্ঘ গঙ্গা নদী ভারতের জীবন রেখা । গঙ্গা নদীর পার্শ্ববর্তী কলকারখানার বর্জ্য, পৌরসভার বর্জ্য, কৃষি ক্ষেত্রের কীটনাশক বাহিত জল ইত্যাদি এই নদ

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of Students in Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীর ভূমিকা (Role of students in waste management) : সুন্দর ও স্বচ্ছ মন এবং সুস্থশিক্ষা পারিপার্শ্বিক পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল । পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সুন্দর না থাকলে, সুন্দর স্বচ্ছ মন ও সুস্থশিক্ষা সম্ভব নয় । তাই বর্জ্য ব্যবস্

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা (Need for waste management) : ভূপৃষ্ঠস্থ জলের কলুষিতকরণ, মৃত্তিকা সংক্রমণ, দূষণ, লিশেট ইত্যাদির মাধ্যমে বর্জ্য পরিবেশকে প্রভাবিত করে থাকে । বর্জ্যপদার্থ কঠিন বা তরলরূপে জলাশয়ে এসে পড়লে তা জলের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি (Method of waste management) : বর্জ্যপদার্থ সংগ্রহ, বর্জ্যের পরিবহন, আবর্জনার বিলিব্যবস্থা, নর্দমার জল ও অন্যান্য বর্জ্যের নিকাশ প্রভৃতি হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অন্যতম দিক । বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল— (১) বর্জ্য

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management)

বর্জ্য ব্যবস্থাপনা (Waste Management) : যে কার্যকরী পরিচালন পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থের সংগ্রহ, অপসারণ, পরিবহণ, শোধন, ক্ষতিকর প্রভাব হ্রাস ও পুনরায় বর্জ্য পদার্থকে ব্যবহারের উপযোগী করে তোলা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলা হয় । অন্যভাবে বলা যায়, বর্জ