ভরা জোয়ার ও মরা জোয়ার (Spring Tide and Neap Tide)

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/09/2013 - 09:57

ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার (Spring Tides) : পৃথিবীর সব জায়গায় সব দিন জোয়ারের পরিমাণ একই থাকে না । তিথি অনুসারে জোয়ারভাটা বাড়ে ও কমে । পৃথিবীর ওপর সূর্যের আকর্ষণ শক্তি চাঁদের আকর্ষণ শক্তির প্রায় অর্ধেক হলেও ভূপৃষ্ঠে জোয়ার ভাটা সৃষ্টিতে সূর্যের প্রভাবও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে সমুদ্রে যে প্রবল জোয়ারের সৃষ্টি হয়, তাকে ভরা কোটাল বা ভরা জোয়ার বলে ।

পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবী, সূর্য ও চন্দ্রের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে । এই দিনে চাঁদের আকর্ষণে ভূপৃষ্ঠের যে স্থানে মুখ্য জোয়ার হয়, একই স্থানে তখন সূর্যের আকর্ষণে গৌণ জোয়ারের সৃষ্টি হয় । এর প্রতিপাদস্থানে সেই সময় মুখ্য সৌর জোয়ার ও গৌণ চান্দ্র জোয়ার হয় । চাঁদ ও সূর্যের এরূপ অবস্থানের ফলে পূর্ণিমার দিন উক্ত দুই স্থানেই জোয়ারের বেগ প্রবল হয় । একে পূর্ণিমা তিথির ভরা কোটাল বলে । আবার অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর একই দিকে সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর সঙ্গে একই সরলরেখায় অবস্থান করে । ফলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ শক্তি একই দিকে ও একই সঙ্গে কার্যকর হয় । এই দিনে উভয়ের মিলিত আকর্ষণে পৃথিবীপৃষ্ঠে জোয়ারের বেগ অত্যন্ত প্রবল হয় । একে অমাবস্যা তিথির ভরা কোটাল বলে । তবে অমাবস্যা তিথিতে ভরা কোটালের বেগ সর্বাধিক হয় । প্রতি মাসে দুবার করে ভরা জোয়ার সংঘটিত হয় ।

মরা জোয়ার (Neap Tide) : সূর্যের আকর্ষণ শক্তি চন্দ্রের আকর্ষণ শক্তির প্রায় অর্ধেক । কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে, সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর সঙ্গে একই সরলরেখায় না থেকে সমকোণে অবস্থান করে । পৃথিবীর যে স্থানটি চন্দ্রের সবচেয়ে কাছে থাকে, সেই স্থানকে চন্দ্র যখন আকর্ষণ করে, তখন ভূপৃষ্ঠের যে স্থানটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে, সূর্যও সেই স্থনটিকে আকর্ষণ করে । কাজেই ওই অবস্থায় চন্দ্রের প্রভাবে যেখানে জোয়ার হয়, তার প্রায় সমকোণী স্থানে সূর্যের প্রভাবেও জোয়ার হয় । এর ফলে চন্দ্রের আকর্ষণে যে দুই স্থানের জল ফুলে উঠতে চেষ্টা করে, সূর্যের আকর্ষণ সেই দুই স্থানের জলের উচ্চতা কমাতে চেষ্টা করে । এর ফলে জোয়ারের তীব্রতা কমে যায় এবং ভাটার ফলে জলের অবনমনও কিছুটা কমে যায়, ফলে জোয়ার এবং ভাটার জলতলের পার্থক্য অস্বাভাবিক হ্রাস পায় । এই রকম জোয়ারকে মরা জোয়ার বা মরা কোটাল বলে । সাধারণত প্রতিমাসে দু-বার মরা জোয়ার দেখা যায় ।

ভরা জোয়ারের তুলনায় মরা জোয়ারে জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয়

(১) অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে ভরা জোয়ারের সময় সূর্য, চন্দ্র ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করায় এই দুই তিথিতে সূর্য ও চন্দ্রের মিলিত বলের টানে জোয়ারের স্থানে খুব বেশি মাত্রায় জলস্ফীতি হয় । অন্যদিকে,

(২) কৃষ্ণ ও শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে মরা জোয়ারের সময় সূর্য ও চন্দ্র পৃথিবীর সঙ্গে পরস্পর লম্বভাবে অবস্থান করায় পৃথিবীর যে স্থানটি চন্দ্রের সবচেয়ে কাছে থাকে, সেই স্থানকে চন্দ্র যখন আকর্ষণ করে, ভূপৃষ্ঠের যে স্থানটি সূর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে, সূর্যও সেই স্থানটিকে আকর্ষণ করে । কাজেই ওই অবস্থায় চন্দ্রের প্রভাবে যেখানে জোয়ার হ্য়, তার প্রায় সমকোণী স্থানে সূর্যের প্রভাবেও জোয়ার হয় । এর ফলে চন্দ্রের আকর্ষণে যে দুই স্থানে জল ফুলে উঠতে চেষ্টা করে, সূর্যের আকর্ষণ সেই দুই স্থানের উচ্চতা কমাতে চেষ্টা করে যার ফলে মরা জোয়ারের সময় জলস্ফীতি কমে যায় । এই কারণে ভরা জোয়ায়্রের তুলনায় মরা জোয়ারের জলস্ফীতি অপেক্ষাকৃত কম হয় ।

*****

 

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত