প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোত (Pacific Ocean Current)

Submitted by avimanyu pramanik on Thu, 11/07/2013 - 12:09

প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোত (Pacific Ocean Current) :- প্রশান্ত মহাসাগর হল পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগর । এর মোট আয়তন পৃথিবীর সমস্ত স্থলভাগের মিলিত আয়তনের চেয়েও বেশি । প্রশন্ত মহাসাগরকে দেখতে অনেকটা ত্রিভূজের মতো । প্রশান্ত মহাসাগরের স্রোতগুলির বৈশিষ্ট্য লক্ষ করলে দেখা যায় (i) এই মহাসাগরের উত্তরভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার দিকে আবর্তিত হয় ।  (ii) কিন্তু দক্ষিণভাগের স্রোতসমূহ ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে আবর্তিত হয় ।  

প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান প্রধান সমুদ্রস্রোতের নাম হল : (১) কুমেরু স্রোত,  (২) পেরু স্রোত বা হামবোল্ড স্রোত, (৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, (৪) নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত, (৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, (৬) জাপান স্রোত বা কুরোশিও স্রোত, (৭) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত, (৮) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত, (৯) আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত, (১০) বেরিং স্রোত, (১১) নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত ।

(১) কুমেরু স্রোত (শীতল) : কুমেরু মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরে শীতল কুমেরু স্রোত রূপে পশ্চিমদিক থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয় ।

(২) পেরু স্রোত বা হ্যামবোল্ড স্রোত (শীতল) : পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে পূর্ব অষ্ট্রেলীয় স্রোত বা নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত দক্ষিণ আমেরিকার পশ্চিম উপকূলে পৌঁছায় এবং দক্ষিণ আমেরিকার দক্ষিণ প্রান্তে বাধা পেয়ে চিলির উপকূল ধরে উত্তরদিকে পেরু উপকূলে এসে পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড-স্রোত নামে উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

(৩) দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): পেরু স্রোত বা শীতল হ্যামবোল্ড স্রোত ক্রমশ উত্তরদিকে এগিয়ে নিরক্ষরেখার কাছাকাছি পৌঁছুলে দক্ষিণ-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত নামে দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে পশ্চিমদিকে অস্ট্রেলিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয় ।

(৪) নিঊ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত (ঊষ্ণ) : উষ্ণ দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত পশ্চিমদিকে গিয়ে ওশিয়ানিয়ার কাছে পৌঁছোলে এই স্রোত দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে এর একটি শাখা দক্ষিণদিকে ঘুরে অস্ট্রেলিয়ার পূর্ব উপকূল ও নিঊজিল্যান্ডের মধ্যে দিয়ে নিউ সাউথ ওয়েলস স্রোত বা পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত নামে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়ে কুমেরু স্রোতের সঙ্গে মিশে যায় । এর অপর শাখাটি উত্তর-পশ্চিমদিকে গিয়ে এশিয়ায় দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে এবং পূর্ব-ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে বাধা পায় এবং উত্তর দিকে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

(৫) উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ):  উত্তর-পূর্ব আয়নবায়ুর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে উষ্ণ উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের উৎপত্তি হয়েছে । এই স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল থেকে এশিয়া মহাদেশের দিকে প্রবাহিত হয় ।

(৬) জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো (উষ্ণ): উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ইন্দোনেশিয়ার কাছে এসে উত্তরমুখী হয়ে এশিয়া মহাদেশের জাপান ও তাইওয়ানের পূর্ব উপকূল ধরে উষ্ণ জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোত নামে উত্তরে প্রবাহিত হয় । জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের একটি শাখা জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূল বরাবর উত্তর দিকে সুসিমা স্রোত নামে অগ্রসর হয় ।

(৭) উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ): পশ্চিমাবায়ুর প্রভাবে জাপান স্রোত বা কুরোশিয়ো স্রোতের অপর শাখাটি উষ্ণ উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত নামে জাপানের পূর্ব উপকূল থেকে উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলের দিকে প্রবাহিত হয় ।

(৮) ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত (শীতল): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতটি উত্তর আমেরিকা মহাদেশের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছানোর পর ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে দক্ষিণমুখী হয়ে শীতল ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত নামে প্রবাহিত হয় ।

(৯) আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত (উষ্ণ): উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোতের একটি শাখা আরও উত্তরে অগ্রসর হয়ে আলাস্কা বা অ্যালুশিয়ান স্রোত নামে আলাস্কা উপকূল ও অ্যালুশিয়ান দ্বীপপুঞ্জ বরাবর প্রবাহিত হয় । এই স্রোত পরে শীতল বেরিং স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয় ।

(১০) বেরিং স্রোত (শীতল): অতি শীতল মেরুবায়ুর প্রভাবে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের সুমেরু অঞ্চল থেকে আগত শীতল বেরিং স্রোতটি বেরিং প্রণালীর মধ্যে দিয়ে দক্ষিণ দিকে প্রবাহিত হয়ে উষ্ণ কুরোশিয়ো স্রোতের উত্তর শাখার সঙ্গে মিলিত হয় । দুটি আলাদা উষ্ণতার বাঊর মিলনে এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয় ।

(১১) নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতিস্রোত (উষ্ণ): উত্তর ও দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোতের মধ্যবর্তী অঞ্চল দিয়ে একটি অপেক্ষাকৃত উষ্ণ ও ক্ষীণ স্রোত পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় যা নিরক্ষীয় বিপরীত স্রোত বা প্রতি স্রোত নামে পরিচিত ।

(১২) প্রশান্ত মহাসাগরীয় শৈবাল সাগর :- উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, জাপান স্রোত, উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় স্রোত এবং ক্যালিফোর্নিয়া স্রোতের ডিম্বাকৃতি গতিপথের বিশাল অঞ্চল জুড়ে সৃষ্টি হওয়া সারকুলার কারেন্ট বা ঘূর্ণস্রোতের অভ্যন্তর ভাগের জলাবর্ত একেবারে স্রোতবিহীন সমুদ্রের সৃষ্টি হয়েছে । এই স্রোতহীন সমুদ্রের স্থির জলে নানারকম শৈবাল, আগাছা, তৃণ, উদ্ভিদ এবং অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ জন্মায় । স্রোতহীন শৈবালে পরিপূর্ণ অঞ্চলকে শৈবাল সাগর বলে ।

*****

Related Items

কাবেরী নদী (The Kaveri)

কাবেরী নদী (The Kaveri) : কর্ণাটক রাজ্যের তালাকাভেরি উচ্চভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে কাবেরী নদী কর্ণাটক ও তামিলনাড়ুর মধ্য দিয়ে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । কাবেরী নদীর দৈর্ঘ্য ৭৬৫ কিমি.

কৃষ্ণা নদী (The Krishna)

কৃষ্ণা নদী (The Krishna) : পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মহাবালেশ্বরের শৃঙ্গের কিছুটা উত্তরে প্রায় ১৪০০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হওয়ার পর কৃষ্ণা নদী দক্ষিণ-পূর্বে তেলেঙ্গানা ও অন্ধপ্রদেশ রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিশাল বদ্বীপ সৃষ্টি করে

গোদাবরী নদী (The Godavari)

গোদাবরী নদী (The Godavari) : গোদাবরী নদী 'দক্ষিণ ভারতের গঙ্গা' নামে পরিচিত । মহারাষ্ট্রের ব্রম্ভগিরি পাহাড়ের ত্র্যম্বক শৃঙ্গ থেকে উৎপন্ন হয়ে এবং পরে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে গোদাবরী নদী মহারাষ্ট্র, ছত্তিশগড়, তেলেঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশ

মহানদী (The Mahanadi)

মহানদী (The Mahanadi) : ছত্তিসগড় রাজ্যের রায়পুর জেলার দক্ষিণাংশের সিয়াওয়া মালভূমি থেকে উৎপন্ন হয়ে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়ে মধ্যপ্রদেশ ও ওড়িশা রাজ্য অতিক্রম করার পর বদ্বীপ সৃষ্টি করে বঙ্গোপসাগরে মিলিত হয়েছে । মহানদী

তাপী নদী (The Tapti)

তাপী বা তাপ্তি নদী (The Tapti) : মধ্যপ্রদেশের মহাদেব পর্বতের মুলতাই উচ্চভূমির প্রায় ৭৭০ মিটার উচ্চতা থেকে উৎপন্ন হয়ে তাপী নদী মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও গুজরাটের ওপর দিয়ে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়ে সাতপুরা ও অজন্তার মধ্যবর্তী সংকীর্ণ উপত