অভিব্যক্তির সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা

Submitted by arpita pramanik on Thu, 12/20/2012 - 18:00

অভিব্যক্তির সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা (Definition and Explanation of Evolution)

জৈব বিবর্তন বা অভিব্যক্তি (Evolution)

সুচনা [Introduction]:- ল্যাটিন শব্দ 'Evolver' থেকে Evolution কথাটির উত্পত্তি হয়েছে । আর Evolution কথাটির অর্থ 'ক্রমবিকাশ' । পৃথিবীতে প্রথম উত্পন্ন জীব ছিল এককোশী এবং সরল প্রকৃতির । ওই এককোশী সরল জীব থেকে ধারাবাহিক পরিবর্তনের  মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত জটিল বহুকোশী জীবের সৃষ্টি হয় । এর পর যুগ যুগ ধরে ক্রমাগত পরিবর্তনের মাধ্যমে ধাপে ধাপে আধুনিক কালের জীবসমূহের উত্পত্তি হয়েছে । ধারাবাহিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সরল জীব থেকে জটিল জীব সৃষ্টি হওয়ার এই পদ্ধতিই হল জৈব বিবর্তন বা জৈব অভিব্যক্তি । ইংরেজ দার্শনিক ও শিক্ষাবিদ হাবার্ট স্পেন্সারের [Herbert Spencer] মতে, কোনও সত্তার বিকাশ যখন মন্থর অথচ গতিশীল ও পর্যায়ক্রমিকভাবে ঘটে এবং নির্দিষ্ট সত্তা সরল অবস্থা থেকে জটিল অবস্থায় পরিণত হয়, তখন ওই রকম পরিবর্তনকে 'ইভোলিউশন' [Evolution] বা অভিব্যক্তি বলে ।

অভিব্যক্তির সংজ্ঞা:- যে মন্থর গতিশীল প্রক্রিয়ায় ধারাবাহিক পরিবর্তন ও ক্রমিক রুপান্তরের মাধ্যমে পূর্বপুরুষ অর্থাৎ সরল উদবংশীয়  জীব থেকে নতুন ও অপেক্ষাকৃত জটিল জীবের উদ্ভব এবং ক্রমবিকাশ ঘটে, তাকে জৈব অভিব্যক্তি বা জৈব বিবর্তন বলে

চার্লস ডারউইন অভিব্যক্তিকে "পরিবর্তনসহ বংশক্রম" বলে অভিহিত করেছেন ।

অভিব্যক্তির ব্যাখ্যা (Explanation of Evolution)

[ক]  জীব সৃষ্টির বিভিন্ন পর্যায় [Different Stages of Origin of Life]:- পৃথিবীতে জীব সৃষ্টি সম্পর্কে সাধারণ ধারনা হল :

[i]  সৃষ্টির শুরুতে পৃথিবী ছিল সূর্যের মতোই জ্বলন্ত বাষ্পের গোলক । পৃথিবী ক্রমশ শীতল হওয়ার ফলে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন ইত্যাদি উপাদানগুলি আবহাওয়া মন্ডলে মুক্তভাবে অবস্থান করতে থাকল ।

[ii]  পৃথিবী যখন আরও শীতল হাতে থাকল তখন ওই মৌলিক উপাদানগুলি থেকে সৃষ্টি হল জল, অ্যামোনিয়া, মিথেন ইত্যাদি যৌগ । এর পরবর্তী সময়ে জীব সৃষ্টির উপযোগী নানান যৌগ, যেমন : শর্করা, প্রোটিন, ফ্যাট, পলিস্যাকারাইড, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতির সৃষ্টি হয় ।

[iii]  সৃষ্টির পরবর্তী ধাপে প্রোটিন ও নিউক্লিক অ্যাসিড মিলিত হয়ে নিউক্লিও প্রোটিন সৃষ্টি হয়, যা ছিল জীব সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান ।

[iv]  অনেকের মতে নিউক্লিও প্রোটিন থেকে প্রোটোভাইরাস এবং প্রোটোভাইরাস থেকে ভাইরাস সৃষ্টি হয়েছিল, ভাইরাস থেকে সৃষ্টি হয়েছিল ব্যাকটিরিয়া এবং  ব্যাকটিরিয়া থেকে প্রোটোজোয়া অর্থাৎ এক কোশী  জীব । এক কোশী জীব থেকে যে ধারাবাহিক পরিবর্তন ও ক্রমিক রুপান্তরের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বহুকোশী উদ্ভিদ ও প্রাণীর সৃষ্টি হয়, এক কথায় সেই প্রক্রিয়াটিকে জৈব বিবর্তন বা অভিব্যক্তি  বলা যেতে পারে ।

পৃথিবীতে জীব সৃষ্টির পর্যায় গুলি :-

Stages of Life

 

[খ]  ধারাবাহিক জটিলতা [Gradual Complexity]:-  সৃষ্টির প্রথম আদিম জীবটি ছিল এককোশী, সরল এবং অনুন্নত প্রকৃতির । এরপর ধারাবাহিক পরিবর্তন ও ক্রমিক রুপান্তরের মাধমে জীবের বিবর্তন দুটি ধারায় সম্পন্ন হতে থাকে । একদিকে উদ্ভিদরাজ্য এবং অপর দিকে প্রাণীরাজ্যের উদ্ভব হয় ।

[i] উদ্ভিদ রাজ্যের অভিব্যক্তি বা বিবর্তন:- উদ্ভিদ বিবর্তনের প্রথম পর্যায়ে সরল এককোশী উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছিল । এরপর বহু কোশী সমাঙ্গদেহী উদ্ভিদের সৃষ্টি হয় । পরবর্তী সময়ে এরা ছত্রাক ও শৈবাল দুটি ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়ে । এর পরে ধাপে ধাপে মসবর্গ, ফার্ণবর্গ, ব্যক্তবীজী ও গুপ্তবীজী উদ্ভিদের আবির্ভাব ঘটে ।

[ii] প্রাণী রাজ্যের অভিব্যক্তি বা বিবর্তন:- প্রাণী বিবর্তনের প্রথম ধাপে এককোশী প্রোটোজোয়া প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটে । এককোশী প্রাণী থেকে ধাপে ধাপে ছিদ্রাল প্রাণী, একনালীদেহী প্রাণী, কৃমি জাতীয় প্রাণী, অঙ্গুরীমাল, সন্ধিপদ, কম্বোজ ও কন্টকত্বকী প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটে । এরপর সৃষ্টি হয় কর্ডাটা পর্বভুক্ত প্রাণীদের । নিম্নশ্রেণির কর্ডাটা থেকে ধারাবাহিকভাবে মত্স্য, উভচর, সরীসৃপ, পক্ষী ও স্তন্যপায়ী প্রাণীদের আবির্ভাব ঘটে । অভিব্যক্তির ইতিহাসে মানুষের সৃষ্টি হয় একেবারে শেষ ধাপে

*****

Related Items

টীকাকরণ এবং অনাক্রম্যতাকরণ

দেহে জীবাণু বা জীবাণুসৃষ্ট পদার্থ কৃত্রিমভাবে প্রবেশ করিয়ে ওই রোগের সাপেক্ষে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি করার প্রক্রিয়াকে টীকাকরণ বলে, এবং যে পদার্থকে দেহে প্রবেশ করানো হয়, তাকে টীকা বলে। ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে অথবা খাওয়ানোর দ্বারা প্রতিষেধক টীকা দেহে প্রবেশ ...

সাধারণ জীবাণু নাশকের ব্যবহার

বিভিন্ন রোগ-জীবাণু প্রতিরোধের জন্য নানা ধরনের জীবাণুনাশক ব্যবহার করা হয় । সাধারণত জীবাণুনাশকগুলি প্রধানত তিন ধরনের হতে পারে, যেমন : প্রাকৃতিক, ভৌত এবং রাসায়নিক। সূর্যালোক এবং বাতাস স্বাভাবিক জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে । সূর্যালোকের অতিবেগুনি রশ্মির ...

রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগ সমূহ

কোনো রোগের কারণে অথবা ক্ষতের মাধ্যমে দেহ থেকে অতিরিক্ত রক্ত নির্গত হয়ে গেলে, রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে তা প্রতিস্থাপিত করা যেতে পারে । বর্তমানে বিভিন্ন বড় বড় হাসপাতালের ব্লাড ব্যাঙ্ক, নার্সিং হোম অথবা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে রক্ত সঞ্চালনের জন্য রক্ত পাওয়া যায় ...

পতঙ্গ বাহকের মাধ্যমে সংক্রামিত রোগসমূহ

রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুদের সংক্রমণের ধরন বিভিন্ন রকম হতে পারে । মানবদেহে খাদ্যের সাথে, জলের সাথে, বাতাসের মাধ্যমে, বিভিন্ন পতঙ্গ অথবা অপর জীবের দেহের সাথে সংলগ্ন হয়ে অথবা তাদের দংশনের মাধ্যমে জীবাণু সংক্রমণ হয় । এছাড়াও রোগাক্রান্ত অথবা প্রাণীর প্রত্যক্ষ সংস্পর্শ ...

প্রোটোজোয়া (Protozoa)

এককোশী আণুবীক্ষণিক প্রাণীদের প্রোটোজোয়া বা আদ্যপ্রাণী বলা হয় । আদ্যপ্রাণীদের মধ্যে কিছু প্রাণী মানবদেহে পরজীবীরূপে বসবাস করে এবং নানারকম রোগ সৃষ্টি করে । এখানে পাঠক্রমভুক্ত কয়েকটি আদ্যপ্রাণীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় উল্লেখ করা হল - প্লাসমোডিয়াম ভাইভ্যাক্স