ভিটামিনের কাজ ও গুরুত্ব (Functions and Importance of Vitamins)
ভিটামিন (Vitamins)
সংজ্ঞা (Definition of Vitamins) - যে বিশেষ জৈব পরিপোষক সাধারণ খাদ্য অতি অল্প পরিমানে থেকে দেহের স্বাভাবিক পুষ্টি ও বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধে শক্তি বৃদ্ধি করে, তাকে ভিটামিন বলে ।
ভিটামিনের বৈশিষ্ট্য (Feature of Vitamins)
১৷ রাসায়নিক প্রকৃতিঃ ভিটামিন এক প্রকার জৈব অনুঘটক ।
২৷ ক্রিয়া প্রকৃতিঃ ভিটামিন অল্প গাঢ়ত্যের কাজ করে এবং দৈনিক অল্প মাত্রায় প্রয়োজন হয় ।
৩৷ উৎসঃ ভিটামিনের প্রধান উৎস হল উদ্ভিদ। তবে ভিটামিন [tex]A,D,{B_{12}},K[/tex] প্রাণীদেহে সংশ্লেষিত হয় ।
৪৷ অন্যান্য বৈশিষ্ট্য- (1) ভিটামিন পচনে বিনষ্ট হয় না,কিন্তু বিপাকের সময় বিনষ্ট হয়। (2) ভিটামিন উৎসেচকের সঙ্গে সহ উৎসেচক রূপে কাজ করে ।
ভিটামিনের প্রয়োজনীয়তা (Importance of Vitamin)
১৷ স্বাভাবিক বৃদ্ধিতেঃ জীব দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ভিটামিন অপরিহার্য ।
২৷ রোগ প্রতিরোধেঃ ভিটামিনের প্রধান কাজ হল রোগ প্রতিরোধ করা ।
৩৷ খাদ্য প্রাণ হিসাবেঃ জীবের জীবন ধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান হল ভিটামিন সেই কারণে একে খাদ্য প্রাণ বলে ।
নিম্নলিখিত রোগ গুলি কোন ভিটামিনের অভাবে হয় ।
রোগের নাম | ভিটামিনের নাম |
টোড-স্কিন বা ফ্রিনোডার্মা | ভিটামিন A |
রাতকানা বা জেরপথ্যালমিয়া | ভিটামিন A |
কেরাটোম্যালেসিয়া | ভিটামিন A |
রেনাল স্টোন | ভিটামিন A |
বেরিবেরি | ভিটামিন [tex]{B_1}[/tex] |
পারনিসিয়াস অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা | ভিটামিন [tex]{B_{12}}[/tex] |
পেলেগ্রা | ভিটামিন [tex]{B_5}[/tex] |
স্টোমাটাইটিস | ভিটামিন [tex]{B_2}[/tex] |
গ্লসাইটিস | ভিটামিন [tex]{B_2}[/tex] |
স্কার্ভি | ভিটামিন C |
রিকেট | ভিটামিন D |
অস্টিওম্যালেসিয়া | ভিটামিন D |
হেমারেজ বা রক্তক্ষরণ | ভিটামিন K |
বিভিন্ন ভিটামিনের উৎস কাজ ও অভাব্জনিত ফল
ভিটামিনের নাম |
উৎস |
কাজ |
অভাবজনিত ফল |
১৷ ভিটামিন A বা রেটিনল |
কড্ ,হাঙর প্রভৃতি সামুদ্রিক মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, গাজর, লেটুস দুধ, ডিম ইত্যাদি । |
রেটিনার গঠন ও চোখের কর্মক্ষমতা রক্ষা, দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রন, ত্বকের কোমলতা স্বাভাবিক রাখে । |
ভিটামিন A –র অভাবে রাতকানা, ত্বক খসখসে হওয়া(টোডস্কিন) প্রভৃতি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় । |
২৷ ভিটামিন- বি কমপ্লেক্স [tex]{B_1} - [/tex] থিয়ামিন [tex]{B_2} - [/tex] রাইবোফ্ল্যাভিন [tex]{B_5} - [/tex] নিয়াসিন [tex]{B_{12}} - [/tex] সায়ানোকো-বালামিন |
ঢেঁকিছাটা চাল, লাল আটা, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, পালংশাক, টম্যাটো ইত্যাদি । |
দেহের স্বাভাবিক বৃদ্ধি, রক্ত কোশ গঠন, মিউকাস পর্দা সুস্থ রাখা, স্নায়ু কোশ সুস্থ রাখা ইত্যাদি । |
ভিটামিন বি-কমপ্লেক্সের অভাবে বেরিবেরি, রক্তিল্পতা, মুখে ঘা, পেলেগ্রা, স্নায়ু-দৌর্বল্য ইত্যাদি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় । [tex]{B_1} - [/tex] বেরিবেরি, [tex]{B_2} - [/tex] মুখে ঘা বা স্টোমাটাইটিস, [tex]{B_5} - [/tex] (নিয়াসিন)- পেলেগ্রা, [tex]{B_{12}} - [/tex] রক্তাল্পতা । |
৩৷ ভিটামিন-C বা অ্যাসকরবিক অ্যাসিড |
সব রকম টাটকা ও টক ফল-লেবু, আম, আমলকি, মাতৃ-স্তনদুগ্ধ ইত্যাদি । |
রড কোশ গঠন, রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধি, দাঁতের মাড়ি সুস্থ রাখাইত্যাদি । |
ভিটামিন-C এর অভাবে স্কার্ভি রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায় । |
৪৷ ভিটামিন-D বা ক্যালসিফেরল |
কড ও হ্যালিবাট, মাছের যকৃৎ নিঃসৃত তেল, ডিম, দুধ, উদ্ভিজ তেল ইত্যাদি । |
অস্থি গঠনে সহায়তা করা এবং ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস বিপাক নিয়ন্ত্রণ করা । |
ভিটামিন-D এর অভাবে শিশুদের রিকেট ও বড়োদের অস্টিওম্যালেসিয়া রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়। |
৫৷ ভিটামিন-E বা টোকোফেরল |
লেটুস শাক, মটরশুঁটি, গমের অঙ্কুর নিঃসৃত তেল,দুধ, ডিম ইত্যাদি । |
স্তনদুগ্ধ ক্ষরণ, বন্ধ্যাত্ব প্রতিরোধ, ভ্রূণের বৃদ্ধি ইত্যাদিতে সাহায্য করা। |
ভিতামিন-E এর অভাবে বন্ধ্যাত্ব, স্তনদুগ্ধ ক্ষরণ হ্রাস পাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ প্রকাশ পায় । |
৬৷ ভিটামিন-K বা ফাইলোকুইনন |
টম্যাটো, বাঁধাকপি, পালংশাক, আলফা-আলফা শাক, দুধ, মাখন, শূকরের যকৃৎ নিঃসৃত তেল ইত্যাদি । |
রক্তে প্রোথ্রম্বিন এর পরিমাণ স্বাভাবিক রাখা এবং রক্ত-তঞ্চনে সহায়তা করা । |
ভিটামিন-K এর অভাবে রক্ত তঞ্চন ব্যাহত হয়, এর ফলে রক্ত ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় । |
অ্যান্টিভিটামিন ( Antivitamin ) - যে সব পদার্থ ভিটামিনের অনুরূপে রাসায়নিক শ্রেণীভুক্ত হয়েও ভিটামিনের কার্যকারিতা হ্রাস করে বা ভিটামিনের ক্রিয়া বিনষ্ট করে, তাদের অ্যান্টিভিটামিন বলে । যেমন থিয়ামিন [tex]\left( {{B_1}} \right)[/tex] এর অ্যান্টিভিটামিন হল পাইরিথিয়ামিন । বায়োটিনের অ্যান্টিভিটামিন হল অ্যাভিডিন ।
প্রোভিটামিন ( Provitamin ) - যে সব পদার্থ থেকে ভিটামিন সংশ্লেষিত হয় তাদেরকে প্রোভিটামিন বলে । যেমন আর্গোস্টেরল হল ভিটামিন D এর প্রোভিটামিন। ক্যারোটিন হল ভিটামিন A এর প্রোভিটামিন ।
সিউডোভিটামিন ( Psedovitamin ) - যে সব জৈব যৌগের গঠন ভিটামিনের মত কিন্তু ভিটামিনের গুন সম্মত নয়, তাদের সিউডোভিটামিন বলে । যেমন মিথাইলকোবালামিডন ভিটামিন [tex]{B_{12}}[/tex] এর সিউডোভিটামিন ।
ভিটামিন সংশ্লেষ
একমাত্র উদ্ভিদরাই নিজেদের দেহে ভিটামিনের সংশ্লেষ করতে পারে । উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন গ্লুকোজ থেকে ভিটামিন সংশ্লেষ করে । প্রাণীদেহে সরাসরি ভিটামিন সংশ্লেষ হয় না । ত্বকে ভিটামিন D সূর্যালোকের অতি বেগুনী রশ্নির প্রভাবে আর্গেস্টরল থেকে সংশ্লেষিত হয় । ভিটামিন A যকৃতে ক্যারোটিন থেকে সংশ্লেষিত হয় । ভিটামিন [tex]{B_{12}},K[/tex] ইত্যাদি অন্ত্রে জীবাণু কর্তৃক সংশ্লেষিত হয় । ভিটামিন C ইঁদুরের অ্যাভরিনাল কটেক্স সংশ্লেষিত হয় ।
*****
- 25750 views