উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন

Submitted by arpita pramanik on Wed, 05/22/2013 - 21:01

উদ্ভিদ দেহে ট্রপিক চলন (Tropic Movement in plants)

উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন উদ্দীপকের গতিপথ অনুসরন করে হয় তখন তাকে ট্রপিক চলন বা দিকনির্ণীত চলন বা ট্রপিজম বলে ।

 

ট্রপিক চলনের প্রকারভেদ ( Types of Tropic Movement )

১৷ ফটোট্রপিক চলন ( Phototropic Movement )

উদ্ভিদের যে ট্রপিক চলন আলোক উৎসের গতিপথ অনুসারে হয় তখন তাকে ফটোট্রপিক বা আলোকবর্তী চলন বলে । উদ্ভিদ অঙ্গের আলোকবর্তী চলন অক্সিন নামক এক রকম হরমোনের প্রভাবে ঘটে । উদ্ভিদের যে অংশে আলো পড়ে তার বিপরীত দিকে অর্থাৎ অন্ধকারের দিকে বেশি মাত্রায় অক্সিন সঞ্চিত হয়ে ঐ অঞ্চলের কোষ গুলিকে দ্রুত বিভাজিত করে । এর ফলে ঐ অংশটি বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায় । ফলে কাণ্ড আলোর দিকে বেঁকে যায় । কিন্তু মূলের ক্ষেত্রে অক্সিন আলোর অংশের দিকে বেশি কাজ করে । ফলে মূল আলোর বিপরীত দিকে বেঁকে যায় ।

ফটোট্রপিক চলনের পরীক্ষা

একটি টবে লাগানো তাজা চারাগাছকে একটি অন্ধকার ঘরের জানালার পাশে টেবিলের উপর রাখা হল । কয়েকদিন পর পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে, চারা গাছটি ক্রমশ খোলা জানালার দিকে বেঁকে বৃদ্ধি পাচ্ছে । এই পরীক্ষাটি থেকে প্রমাণিত হয় যে উদ্ভিদের কাণ্ডের চলন আলোক অনুকূলবর্তী ।

২৷ জিওট্রপিক চলন (Geotropic Movement)

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন অভিকর্ষের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে অভিকর্ষ বৃত্তি বা জিওট্রপিক চলন বলে ।

আমরা জানি (ক) উদ্ভিদের মূল সব সময় অভিকর্ষের টানে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের দিকে অগ্রসর হয়। সেই জন্য মূলকে অভিকর্ষের অনুকূল বর্তী বা পজিটিভ জিওট্রপিক বলা হয় । (খ) কাণ্ড মাটির উপরে পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের বিপরীত দিকে বৃদ্ধি পায়, তাই তাই কাণ্ডকে অভিকর্ষ প্রতিকুলবর্তী বা নেগেটিভ জিওট্রপিক বলা হয় । (গ) উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূল পৃথিবীর ভরকেন্দ্রের সঙ্গে লম্বভাবে বৃদ্ধি পায়, তাই উদ্ভিদের পার্শ্বীয় মূলকে তির্যক অভিকর্ষবর্তী বা ট্রান্সভার্স জিওট্রপিক বলে ।

জিওট্রপিক চলনের পরীক্ষা

একটি ভিজে ব্লটিং পেপারের উপরে একটি অঙ্কুরিত চারা গাছকে পিনের সাহায্যে ভূমির সমান্তরাল ভাবে আটকে ব্লটিং পেপারটিকে অন্ধকার স্থানে খাড়াভাবে রেখে দেওয়া হল । কয়েকদিন পরে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যাবে যে ভ্রূণমূলটি নীচের দিকে এবং ভ্রূণমুকুলটি উপরের দিকে বৃদ্ধি পেয়েছে । এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হয় যে উদ্ভিদের মূলের চলন অভিকর্ষ অনুকূলবর্তী ।

৩৷ হাইড্রোট্রপিক চলন (Hydrotropic Movement)

উদ্ভিদ অঙ্গের চলন যখন জলের উৎসের গতিপথ অনুসারে হয়, তখন তাকে জলবর্তী বা হাইড্রোট্রপিক বলে ।

 

হাইড্রোট্রপিক চলনের পরীক্ষা :

একটি চালুনির মধ্যে কিছু ভিজে কাঠের টুকরো রেখে কয়েকটি ছোলা বীজ রাখা হল । কয়েকদিন পর দেখা যাবে যে, বীজ গুলি অঙ্কুরিত হয়েছে এবং ভ্রূণমূল গুলি চালুনির ছিদ্রের মধ্যে দিয়ে চালুনির বাইরে ঝুলে আছে । আরও কয়েকদিন পর লক্ষ্য করা গেল যে, ভ্রূণমূল গুলি পুনরায় বেঁকে চালুনির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করছে । এর কারণ কিছুই নয়, ভ্রূণমূল গুলি প্রথমে অভিকর্ষের টানে চালুনির ছিদ্র দিয়ে বেরিয়ে ঝুলছিল । কিন্তু পরে জল পাওয়ার জন্য আবার চালুনির ছিদ্রের মধ্যে প্রবেশ করেছে । এই পরীক্ষা থেকে প্রমাণিত হল যে মূলের চলন জল অনুকূলবর্তী ।

*****

Related Items

লসিকা সংবহন (Lymph Circulation)

লসিকা সংবহন তন্ত্র - লসিকা সংবহনে সাহায্যকারী অঙ্গ গুলি মিলিত হয়ে যে তন্ত্র গঠন করে, তাকে লসিকা সংবহন তন্ত্র বলে।, লসিকা - লসিকা একরকম হালকা হলুদ বর্ণের স্বচ্ছ ক্ষারীয় তরল যোগ কলা , লসিকার কাজ ও গুরুত্ব , লসিকা সংবহন.....

মানব দেহে রক্ত ও রক্ত কণিকা

রক্ত এক প্রকার অসচ্ছ, লমনাক্ত, ক্ষার ধর্মী তরল যোগ কলা। রক্তের কাজ , রক্তের বিভাগ, মেরুদণ্ডী প্রাণীর শরীরে রক্ত প্রবাহের কারণ কি, রক্তের মাধ্যমে বিভিন্ন কোষ সরাসরি রোগ জীবাণু কে ধ্বংস করে দেহের সুরক্ষায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ...

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন

মানুষের হৃৎপিণ্ডের মধ্যে দিয়ে রক্ত সংবহন তন্ত্র, হৃৎপিণ্ডের গঠন, প্রকোষ্ঠ, অলিন্দ, নিলয়, কপাটিকা, ট্রাইকাসপিড কপাটিকা , বাইকাস পিড কপাটিকা, পালমনারি কপাটিকা, অ্যাওটিক কপাটিকা সম্পর্কিত আলোচনা। ডান অলিন্দ, ডান নিলয়, বাম অলিন্দ, বাম নিলয় ....

উদ্ভিদ সংবহনের পার্থক্য সমূহ

উদ্ভিদ সংবহনর কয়েকটি পার্থক্য সমূহ ছক আকারে দেওয়া হলো - 1. জাইলেম ও ফ্লোয়েম, 2. ব্যাপন ও অভিস্রাবন, 3. পরিবহণ ও সংবহন, 4. ঊর্ধ্বমুখী সংবহন ও নিম্নমুখী সংবহন ..

বাষ্পমোচন (Transpiration)

যে শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় উদ্ভিদ তার মূল দ্বারা শোষিত জলের অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত অংশ লেন্টিসেল, কিউটিকল, পত্ররন্ধ্র ইত্যাদি বায়বীয় অংশের মাধ্যমে দেহ থেকে বাস্পের আকারে বের করে দেয়, প্রোটোপ্লাজম নিয়ন্ত্রিত ওই শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়াকে বাষ্পমোচন বলে। ...