তড়িৎ-বিশ্লেষণ (Electrolysis)

Submitted by arpita pramanik on Thu, 05/26/2011 - 10:54

তড়িৎ-বিশ্লেষণ (Electrolysis)

যে প্রক্রিয়ায় গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায়, তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহ চালনা করলে পদার্থটির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে এবং নতুন পদার্থ উৎপন্ন হয় তাকে তড়িৎ বিশ্লেষণ (Electrolysis) বলে ।

তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থ দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় কিভাবে তড়িৎ পরিবহন করে এবং কিভাবে এদের তড়িৎ বিশ্লেষণ ঘটে তা ব্যাখ্যা করার জন্য সুইডিশ বিজ্ঞানী আরহেনিয়াস 1887 খ্রিস্টাব্দে তার সুবিখ্যাত তড়িৎ-বিয়োজনবাদ তত্ব (Theory of electrolytic dissociation) প্রকাশ করেন তার তত্ব অনুযায়ী জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎ বিশ্লেষ্য পদার্থের অনুগুলির বেশ কিছু সংখ্যক আপনার থেকে ভেঙে দুটি বিপরীত তড়িৎ গ্রস্ত কণায় বিয়োজিত হয়ে যায় । এরূপ তড়িৎ গ্রস্ত কনা গুলিকে আয়ন (ion) বলে ।

তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ (Electrolytes)

সংজ্ঞা:- যেসব পদার্থ জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয়ে তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহনের ফলে নিজেরা রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়ে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই সব পদার্থকে তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে ।

[i] অ্যাসিড:- সালফিউরিক, নাইট্রিক, হাইড্রোক্লোরিক প্রভৃতি ।

[ii] ক্ষার:- কস্টিক সোডা, কস্টিক পটাশ ইত্যাদি ।

[iii] লবণ:- সোডিয়াম ক্লোরাইড, জিঙ্ক সালফেট, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি । 

এই জাতীয় পদার্থগুলি গলিত অবস্থায় বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহন করে এবং তড়িৎ পরিবহন করার সঙ্গে সঙ্গে পদার্থগুলির রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন পদার্থ উত্পন্ন হয় । এইগুলি সব তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থ

তড়িৎ-বিশ্লেষণ (Electrolysis): যে পদ্ধতিতে উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় কিংবা বিগলিত অবস্থায় তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ওই পদার্থের রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উত্পন্ন হয়, সেই পদ্ধতিকে তড়িৎবিশ্লেষণ বলে । তড়িৎবিশ্লেষণে তড়িৎ শক্তি রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয় ।

আয়ন (Ions): জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় তড়িৎবিশ্লেষ্য পদার্থের অণুগুলি বেশ কিছু সংখ্যক বিয়োজিত হয়ে ধনাত্মক (positive) এবং ঋণাত্মক (negative) তড়িৎগ্রস্থ কণায় পরিণত হয় । এই তড়িৎগ্রস্থ কণাগুলিকে আয়ন বলে ।

ক্যাটায়ন (Cations)ধনাত্মক তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলিকে ক্যাটায়ান বলে । যেমন— H+,  Ca2+,  Al3+, NH4+   ইত্যাদি ।

অ্যানায়ন (Anions):  ঋণাত্মক তড়িৎগ্রস্থ আয়নগুলিকে অ্যানায়ন বলে । যেমন—  Cl- ,  NO3- , SO42-,  PO43-  ইত্যাদি ।

 

ভোল্টামিটার (Voltameter):- কোনো তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের ভিতর দিয়ে তড়িৎ চালনা করার সময় পদার্থটিকে জলে দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় একটি পাত্রের মধ্য রেখে তড়িৎ-বিশ্লেষণ করা হয় । এই পাত্রটিকে ভোল্টামিটার বলে ।

তড়িদ্দ্বার (Electrodes) : ভোল্টামিটারে রাখা গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব পাতকে আংশিক ডুবিয়ে রাখা হয় এবং এদের সাহায্যে তড়িৎ-বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালানো হয় । এই পাত দুটিকে তড়িদ্দ্বার বলে । প্ল্যাটিনাম, নিকেল, কপার, আয়রন, গ্যাস কার্বন, গ্রাফাইট প্রভৃতি তড়িদ্দ্বাররূপে ব্যবহৃত হয় ।

অ্যানোড : যে তড়িদ্দ্বারের সঙ্গে ব্যাটারির ধনাত্মক মেরু যুক্ত থাকে, সেই তড়িদ্দ্বারটিকে অ্যানোড বলে ।

ক্যাথোড : যে তড়িদ্দ্বারের সঙ্গে ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরু যুক্ত থাকে, সেই তড়িদ্দ্বারটিকে ক্যাথোড বলে । ব্যাটারির সঙ্গে তড়িৎ পরিবহনে সক্ষম পদার্থটিকে যোগ করলে তড়িৎপ্রবাহ অ্যানোডের মধ্য দিয়ে তড়িৎ-বিশ্লেষ্যে প্রবেশ করে ক্যাথোডের মধ্য দিয়ে ব্যাটারিতে ফিরে যায় । তড়িৎ-বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চলার সঙ্গে সঙ্গে ওর রাসায়নিক বিয়োজন ঘটে; যেমন— প্ল্যাটিনাম তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে গলিত NaCl -এর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ করা হলে, ক্যাথোডে সোডিয়াম ও অ্যানোডে ক্লোরিন উত্পন্ন হয় ।

 

তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ (Non-Electrolytes) :  যে সমস্ত পদার্থগুলি গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিশ্লিষ্ট হয় না এবং তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না, তাদের তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে । যেমন— চিনির দ্রবণ, গ্লিসারিন, পেট্রোল, কেরোসিন, ইথার, বেঞ্জিন, অ্যালকোহল তড়িৎ পরিবহন করে না । এরা সব তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ । তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নিত হয় না, তাই তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না । 

 

Related Items

কার্য ক্ষমতা ও শক্তি (Work, Power and Energy)

কার্য ক্ষমতা ও শক্তি (Work, Power and Energy)

 

জৈব রসায়ন (Organic Chemistry)

জৈব রসায়ন (Organic Chemistry)

কার্বনের যে সমস্ত যৌগ প্রধানত জীবজগতে উত্পন্ন হয় এবং যে সমস্ত যৌগে কার্বন পরমাণুগুলি পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত এবং বৃত্তাকার শৃঙ্খলে যুক্ত থেকে বিভিন্ন সমধর্মী যৌগের শ্রেণি গঠন করতে পারে, সেই সমস্ত যৌগকে সামগ্রিকভাবে জৈব যৌগ (Organic Compounds) বলে এবং রসায়নের য

অনুপাত ও সমানুপাত (Ratio and Proportion)

জেক্সপো এক্সামের ম্যাথমেটিক্স বিষয়: অনুপাত ও সমানুপাত ; গুরু অনুপাত ও লঘু অনুপাত , যৌগিক বা মিশ্র-অনুপাত, ক্রমিক সমানুপাতী, সমানুপাতের কয়েকটি প্রয়োজনীয় ধর্ম, উদহারণ সহ বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান ও বিগত বছর গুলিতে আগত প্রশ্নের সমাধান আলোচনা করা হলো ...

জারণ ও বিজারণ (Oxidation and Reduction)

জারণ ও বিজারণ (Oxidation and Reduction)

চক্রবৃদ্ধি সুদ ও সমাহার বৃদ্ধি বা হ্রাস

চক্রবৃদ্ধি সুদ ও সমাহার বৃদ্ধি বা হ্রাস