দুই বোন --- পৃষ্ঠা-১৫

Submitted by administrator on Fri, 04/27/2012 - 00:55
দুই বোন

শেষ যে নয় অনতিকাল পরেই আরো বড়ো অঙ্কে তার প্রমাণ হল। এবার প্রয়োজন স্বাস্থ্যের। ম্যানেজার গম্ভীরমুখে বললেন, “শশাঙ্কবাবুর সঙ্গে পরামর্শ করা ভালো।”

ঊর্মি শশব্যস্ত হয়ে বললে, “আর যাই কর, দিদিরা এ খবরটা যেন না পান।”

“একলা এই দায়িত্ব নিতে ভালো লাগছে না।”

“একদিন তো টাকা তাঁর হাতেই পড়বে।”

“পড়বার আগে দেখতে হবে যেন জলে না পড়ে।”

“কিন্তু ওঁর স্বাস্থের কথা তো ভাবতে হবে।”

“অস্বাস্থ্য নানা জাতের আছে, এটা ঠিক কোন্‌ জাতের বুঝে উঠতে পারছি নে। এখানে ফিরে এলে হয়তো হাওয়ার বদলে সুস্থ হতে পারেন। ফিরতি প্যাসেজের ব্যবস্থা করে পাঠানো যাক।”

ফেরবার প্রস্তাবে ঊর্মি এত যে বেশি বিচলিত হয়ে উঠল, ও নিজে ভাবলে তার কারণ পাছে নীরদের উচ্চ উদ্দেশ্য মাঝখানে বাধা পায়।

কাকা বললেন, “এবারকার মতো টাকা পাঠাচ্ছি, কিন্তু মনে হচ্ছে এতে ডাক্তারবাবুর স্বাস্থ্য আরো বিগড়ে যাবে।”

রাধাগোবিন্দ ঊর্মির অনতিদূর সম্পর্কের আত্মীয়। কাকার কথাটার ইঙ্গিত ওকে বাজল। সন্দেহ এল মনে। ভাবতে লাগল, “দিদিকে হয়তো বলতে হবে।” এ দিকে নিজেকে ধাক্কা দিয়ে বার বার প্রশ্ন করছে, ‘যথোচিত দুঃখ হচ্ছে না কেন।’

এই সময়ে শর্মিলার রোগটা নিয়ে ভাবনা ধরিয়ে দিয়েছে। ভাইয়ের কথা মনে পড়িয়ে ভয় লাগিয়ে দেয়। নানা ডাক্তার লাগল নানা দিক থেকে ব্যাধির আবাসগুহাটা খুঁজে বের করতে। শর্মিলা ক্লান্ত হাসি হেসে বললে, “সি. আই. ডি.দের হাতে অপরাধী যাবে ফসকে, খোঁচা খেয়ে মরবে নিরপরাধ।”

শশাঙ্ক চিন্তিতমুখে বললে, “দেহটার খানাতল্লাশি চলুক শাস্ত্রমতেই, কিন্তু খোঁচাটা কিছুতেই নয়।”

এই সময়টাতেই শশাঙ্কর হাতে দুটো ভারী কাজ এসেছিল। একটা গঙ্গার ধারে পাটকলে। আর-একটা টালিগঞ্জের দিকে, মীরপুরের জমিদারের নূতন বাগানবাড়িতে। পাটকলের কুলিবস্তির কাজটা শেষ করে দেবার মেয়াদ ছিল তিন মাসের। গোটাকতক টিউবওয়েলের কাজ ছিল নানা জায়গায়। শশাঙ্কর একটুও ফুরসুত ছিল না। শর্মিলার ব্যামোটা নিয়ে প্রায় তাকে আটকা পড়তে হয়, অথচ উৎকণ্ঠা থাকে কাজের জন্যে।

এত দিন ওদের বিবাহ হয়েছে, কিন্তু এমন কোনো ব্যামো শর্মিলার হয় নি যা নিয়ে শশাঙ্ককে কখনো বিশেষ করে ভাবতে হয়েছে। তাই এবারকার এই রোগটার উদ্‌বেগে ছেলেমানুষের মতো ছট্‌ফট্‌ করছে ওর মন। কাজ কামাই করে ঘুরে ফিরে বিছানার কাছে নিরুপায়ভাবে এসে বসে। মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, জিজ্ঞাসা করে, ‘কেমন আছ?’ তখনই শর্মিলা উত্তর দেয়, ‘তুমি মিথ্যে ভেবো না, আমি ভালোই আছি।” সেটা বিশ্বাস্য নয়, কিন্তু বিশ্বাস করতে একান্ত ইচ্ছা বলেই শশাঙ্ক অবিলম্বে বিশ্বাস করে ছুটি পায়।

শশাঙ্ক বললে, “ঢেঙ্কানলের রাজার একটা বড়ো কাজ আমার হাতে এসেছে। প্ল্যানটা নিয়ে দেওয়ানের সঙ্গে আলাপ করতে হবে। যত শীঘ্র পারি ফিরে আসব, ডাক্তার আসবার আগেই।”

শর্মিলা অনুযোগ করে বললে, “আমার মাথার দিব্যি রইল, তাড়াতাড়ি করে কাজ নষ্ট করতে পারবে না। বুঝতে পারছি ওদের দেশে তোমার যাবার দরকার আছে। নিশ্চয় যেয়ো, না গেলে আমি ভালো থাকব না। আমাকে দেখবার লোক ঢের আছে।”

প্রকাণ্ড একটা ঐশ্বর্য গড়ে তোলবার সংকল্প দিন-রাত জাগছে শশাঙ্কের মনে। তার আকর্ষণ ঐশ্বর্যে নয়, বড়োত্বে। বড়ো

Related Items

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-৩২

দুই বোন

“শর্মি, ভেবো না আমি কাপুরুষ। দায়িত্ব ফেলে পালাব আমি, এত অধঃপতন কল্পনা করতেও পার?”

শর্মিলা কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে বললে, “কী হয়েছে আমাকে বুঝিয়ে বলো।”

শশাঙ্ক বললে, “আবার ঋণ করেছি তোমার কাছে, সে কথা ঢাকা দিয়ো না।”

শর্মিলা বললে, “আচ্ছা, বেশ।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-৩১

দুই বোন করে আমাকে লুকিয়ে পাথুরে কয়লার হাটে তেজিমন্দি খেলা শুরু করলে। চড়ার বাজারে যা কিনেছে সস্তার বাজারে তাই বেচে দিতে হল। হঠাৎ আজ দেখলে হাউইয়ের মতো ওর সব গেছে উড়ে পুড়ে, বাকি রইল ছাই। এখন ভগবানের কৃপায় নেপালে কাজ পেলে তোমাদের ভাবতে হবে না।”

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-৩০

দুই বোন

নার্স বাইরে থেকে বললে, “ডাক্তারবাবু এসেছেন।”

শর্মিলা বললে, “ডেকে দাও।”

কথাটা বন্ধ হয়ে গেল।

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-২৯

দুই বোন

এ কথা দিদি বার বার করে ঊর্মিকে স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছে যে, তার অবর্তমানে সব চেয়ে যেটা সান্ত্বনার বিষয় সে ঊর্মিকে নিয়েই। এ সংসারে অন্য কোনো মেয়ের আবির্ভাব কল্পনা করতেও দিদিকে বাজত, অথচ শশাঙ্ককে যত্ন করবার জন্যে কোনো মেয়েই থাকবে না এমন লক্ষ্মীছাড়া অবস্থাও দিদি মনে মনে সইতে পারত না। ব্যাবসার

দুই বোন --- পৃষ্ঠা-২৮

চতুর্থ পরিচ্ছেদ : শশাঙ্ক

দুই বোন | ২৮