কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutb-ud-din Aibak)

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 05/07/2012 - 11:24

কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutb-ud-din Aibak) :

১১৯১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম যুদ্ধে (The First Battle of Tarain) পৃথ্বীরাজ ভারতের অন্যান্য রাজপুত রাজাদের সাহায্য নিয়ে মহম্মদ ঘুরি -কে পরাস্ত করেন । এর প্রতিশোধ নিতে পরের বছর অর্থাৎ ১১৯২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ ঘুরি বিশাল সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে তরাইনের দ্বিতীয় যুদ্ধে (The Second Battle of Tarain) পৃথ্বীরাজকে পরাজিত ও নিহত করে দিল্লী ও আজমীর দখল করেন । পরে মিরাট, বুলান্দগড়, এবং আলিগড় অধিকার করেন । পরের বার ভারত অভিযানে এসে মহম্মদ ঘোরী কনৌজ রাজ্যও জয় করে নেয় । ধীরে ধীরে গুজরাট, গোয়ালিয়র, বারাণসী, বুন্দেলখন্ড, প্রভৃতি অধিকার করেন । এমনকি বাংলা পর্যন্তও তাঁর অধিকার বিস্তৃত হয় । এই সব বিজিত স্থানের দায়িত্ব তিনি ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে তাঁর বিশ্বস্ত অনুচর কুতুবউদ্দিন আইবক (Qutbuddin Aibek) -এর হাতে অর্পণ করে মহম্মদ ঘুরি দেশে ফিরে যান । মহম্মদ ঘুরির মৃত্যুর পর কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লির সিংহাসনে বসেন । তিনি মহম্মদ ঘুরির বিশ্বস্ত অনুচর ছিলেন । কুতুবউদ্দিন আইবক ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২১০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজত্ব করেন । ১২০৮ সালে তিনি সুলতান উপাধি গ্রহণ করেছিলেন । কুতুবউদ্দিনকেই দিল্লির প্রথম সুলতানের মর্যাদা দেওয়া হয়ে থাকে । তাঁর সময় থেকেই মুসলমানরা ভারতে অভিযান প্রেরণ করার পরিবর্তে স্থায়ীভাবে রাজ্যশাসনের দিকে নজর দেন । তিনি ও তাঁর উত্তরাধিকারীরা 'ইলবেরি তুর্কি' গোষ্ঠীভুক্ত ছিলেন বলে এদের রাজত্বকাল ইতিহাসে 'ইলবেরি তুর্কি' আমল হিসাবে পরিচিত । সুলতান কুতুবউদ্দিন নিজে এবং তাঁর পরবর্তী আরও দুই জন সুলতান প্রথম জীবনে ক্রীতদাস ছিলেন, তাই কুতুবউদ্দিন থেকে কায়েকাবাদ পর্যন্ত অর্থাৎ ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১২৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লির সুলতানদের দাসবংশ (Slave Dynasty) বলা হয়ে থাকে । ১২০৬ খ্রিস্টাব্দ থেকেই ভারতে দিল্লির সুলতানি যুগের সূচনা হয় । কুতুবউদ্দিনের মৃত্যুর পর ১২১০ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পুত্র আরাম শাহ নিজেকে দিল্লির সুলতান ঘোষণা করে দিল্লির সিংহাসনে আরোহণ করেন । কিন্তু তার অপদার্থতা লক্ষ্য করে দিল্লির আমির-ওমরাহগণ ইলতুৎমিসকে দিল্লির সিংহাসন দখল করতে আহ্বান জানান । এই আবেদনে সাড়া দিয়ে ইলতুৎমিস আরাম শাহকে পরাজিত করে দিল্লির সিংহাসন দখল করেন । কুতুবউদ্দিন আইবক দিল্লির বিখ্যাত কুতুবমিনার -এর নির্মাণ পরিকল্পনা ও নির্মাণকার্য শুরু করেন । কিন্তু এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছিল ইলতুৎমিসের সময় । এই মিনার সুফি সন্ত খাজা কুতুবউদ্দিন কাকীর সম্মানে নির্মিত হয়েছিল । 

*****

Related Items

ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লবের কারণ ও তার ফলাফল

ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লব সংগঠিত হওয়ার নানাবিধ কারণের মধ্যে একটি বড়ো কারণ ছিল পুঁজির জোগান । এই পুঁজির অনেকটাই এসেছিল ঔপনিবেশিক ব্যবসাবাণিজ্য থেকে । ইংল্যান্ডে শিল্প বিপ্লবের ফলে দুটি সমস্যা দেখা দেয় ...

ইউরোপীয় ধনতন্ত্র ও ঔপনিবেশিক অর্থনীতি

ভারত ইতিহাসে ইংরেজ শাসনের তাৎপর্য অনুধাবন করতে হলে ধনতন্ত্র ও ঔপনিবেশিক অর্থনীতি সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার । কারণ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মানদণ্ড অচিরেই রাজদণ্ডে পরিণত হয়েছিল । আগে যেসব বহিরাগত জাতি ভারতে এসেছিল, তাদের সঙ্গে ...

দেওয়ানি লাভ ও দেওয়ানি লাভের গুরুত্ব

বক্সারের যুদ্ধে ত্রিশক্তির পরাজয়ের পর প্রায় সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে ইংরেজদের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য স্থাপনের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে ওঠে । এই অবস্থায় ১৭৬৫ খ্রীষ্টাব্দের মে মাসে বাংলায় ক্লাইভের পুনরাগমন ঘটে । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দের এলাহাবাদ চুক্তিতে ৫০ লক্ষ টাকার বিনিময়ে কারা ও এলাহাবাদ ছাড়া ...

বক্সারের যুদ্ধ ও বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব

কাটোয়া, মুর্শিদাবাদ, গিরিয়া, সুটি, মুঙ্গের ও উদয়নালায় পরপর ছয়টি যুদ্ধে মিরকাশিম পরাজিত হন । এই অবস্থায় ১৭৬৩ খ্রিষ্টাব্দে মিরকাশিমকে সিংহাসনচ্যুত করে ইংরেজরা মিরজাফরকে আবার বাংলার মসনদে বসান । কিন্তু মিরকাশিম হাল না ছেড়ে মুঘল সম্রাট শাহ আলম ...

মির কাশিম (Mir Kasim)

কোম্পানির প্রাপ্য অর্থ পরিশোধ এবং বর্ধমান, মেদিনীপুর, চট্টোগ্রামের জমিদারি প্রদানের প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে মিরকাশিম বাংলার মসনদ লাভ করেন । ইংরেজদের সাহায্যে বাংলার মসনদ দখল করলেও তিনি ব্যক্তিত্বহীন পুরুষ ছিলেন না, বরং বাস্তববাদী ছিলেন । অহেতুক ইংরেজ বিরোধিতা তাঁর ...