ভারতের মৌসুমি জলবায়ু

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/15/2014 - 10:59

মৌসিম’ শব্দে এর অর্থ হল ঋতু । ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মৌসুমি বায়ু প্রবাহেরও পরিবর্তন হয় । স্থলভাগ ও জলভাগের উত্তাপের পার্থক্যের ফলে সমুদ্র বায়ু এবং স্থল বায়ুর মতো মৌসুমি বায়ুরও সৃষ্টি হয় । ভারতের জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতে মৌসুমি বায়ুর বিরাট প্রভাব পরিলক্ষিত হয় । এইজন্য ভারতকে মৌসুমি বায়ুর দেশ বলা হয় ।

(১) ভারত ‘আন্তঃমৌসুমি জলবায়ুর দেশ' হওয়ায় ভারতের অধিকাংশ বৃষ্টিপাত মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ঘটে থাকে । বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু, শরৎকালে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাব ভারতের জলবায়ু ও বৃষ্টিপাতের উপর সবচেয়ে বেশি থাকে । গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পূর্ব এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব এই দুটি বিপরীতমুখী বায়ুপ্রবাহের ফলে ভারতে আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল এই দুটি প্রধান ঋতুর সৃষ্টি হয়েছে ।

(২) দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে সমুদ্রের উপর দিয়ে আগত মৌসুমি বায়ুতে প্রচুর জলীয় বাস্প থাকে বলে বর্ষাকালের জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ভারতের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে ।

(৩) বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে পশ্চিম উপকূলের উত্তরাংশ, অসম, মিজোরাম, পূর্ব হিমালয়, তরাই অঞ্চল এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয় ।

(৪) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার প্রভাবে উত্তর–পূর্ব ভারতের গারো, খাসি ও পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশবর্তী অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হলেও এই সব অঞ্চলের দক্ষিণ ও পশ্চিম দিকে বৃষ্টিপাত ক্রমশ কমে যেতে থাকে ।

(৫) দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখার প্রভাবে দক্ষিণ থেকে উত্তর ও উত্তর পশ্চিমে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে ।

(৬) মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খাসি, গারো, পূর্ব হিমালয় এবং পশ্চিমঘাট পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত হলেও অনুবাত ঢালে বৃষ্টিহীন বা অল্পবৃষ্টিযুক্ত বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে ।

(৭) অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে শরৎকাল অথবা শীতকালের শুরুতে প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয় এবং করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটে ।

(৮) উত্তর–পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে শীতকালে ভারতে বৃষ্টিপাত খুব একটা হয় না, কেবল মাত্র করমণ্ডল উপকূলে ডিসেম্বর মাসে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয় ।

(৯) দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ভারতে গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা কিছুটা কমে যায় ।

(১০)  মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে হিমালয় পর্বত সহ ভারতের বিভিন্ন অংশে চিরহরিৎ, পর্ণমোচী এবং সরলবর্গীয় বৃক্ষের গভীর অরণ্যে সৃষ্টি হয়েছে । এইসব অরণ্য থেকে মুল্যবান কাঠ এবং অন্যান্য অরণ্য সম্পদ পাওয়া যায় ।

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।