ভারতের প্রধান ঋতু — বর্ষাকাল

Submitted by avimanyu pramanik on Sat, 11/15/2014 - 10:47

বর্ষাকাল (Rainy Season) : ভারতে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস হল বর্ষাকাল ।

দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু : গ্রীষ্মকালের শেষের দিকে উত্তর-পশ্চিম ভারতে গভীর নিম্নচাপের সৃষ্টি হলে বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগর থেকে আর্দ্র দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু আকস্মিকভাবে ভারতে প্রবেশ করে, ফলে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাতের সূচনা হয় । এইভাবে প্রবল বর্ষণের মাধ্যমে ভারতে বর্ষাকালের সূচনা ঘটে, তাকে মৌসুমি বিস্ফোরণ বলা হয় ।

(১) ভারতে বর্ষা ঋতুটি জুন মাসে শুরু হয় এবং সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।

(২) এই সময় উত্তর ভারতের সমভূমির উপর প্রবল নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়, তখন ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ মৌসুমি বায়ুপ্রবাহের আগমন ঘটে ।

(৩) এই সময় দক্ষিণ গোলার্ধ থেকে প্রবাহিত দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু যাকে বাণিজ্য বায়ুও বলা হয়, ফেরেলের সুত্র অনুসারে ডান দিকে বেঁকে ভারতীয় উপমহাদেশে দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে প্রবাহিত হতে শুরু করে ।

(৪) ভারতবর্ষের ত্রিভুজের মতো আকৃতির জন্য দক্ষিণ–পশ্চিম মৌসুমি বায়ু দুই শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়— (ক) আরব সাগরীয় শাখা ও (খ) বঙ্গোপসাগরীয় শাখা ।

(ক) মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা :

(১) আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাস্প সংগ্রহ করে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা জুন মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই দক্ষিণ–পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়ে পশ্চিম উপকূলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় বাধাপ্রাপ্ত হয় এবং এই পর্বত ও আরব সাগরের উপকূলের মধ্যবর্তী গোয়া (পানাজি) ও কেরালার মালাবার উপকূলে প্রবল শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় । গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ২৫০ সেমির বেশি হয় ।

(২) এর পর এই বায়ুপ্রবাহ পশ্চিমঘাট পর্বত অতিক্রম করে মধ্যপ্রদেশ ও দাক্ষিণাত্য মালভুমিতে প্রবেশ করে । কিন্তু পশ্চিমঘাট পর্বতের অপর দিক বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় জলীয় বাষ্পের ঘাটতি পড়ে বলে এই সব অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশ কমে যায় । গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৫০ সেন্টিমিটারেরও কম হয় ।

এই বায়ুপ্রবাহ যতই আরও পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণও ততই কমতে থাকে । যেমন হায়দ্রাবাদে বছরে গড়ে ১০০ সেমিরও কম বৃষ্টিপাত হলেও পূর্ব দিকে অবস্থিত চেন্নাই -এ বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ সেন্টিমিটারেরও কম হয় ।

(৩) এই বায়ুর একটি শাখা উত্তরে রাজস্থানের দিকে অগ্রসর হয়, কিন্তু আরাবল্লী পর্বত এই বায়ুপ্রবাহের গতিপথে সমান্তরালভাবে অবস্থিত হওয়ায় এই বায়ুপ্রবাহের ফলে রাজস্থানে বৃষ্টিপাত খুব কম হয় । বছরে ২৫ সেন্টিমিটারেও কম হয় ।

(খ) মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপ সাগরীয় শাখা :

বঙ্গোপসাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে মৌসুমি বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখাটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়, যা মায়ানমারের আরাকান ইয়োমা এবং উত্তর–পূর্ব ভারতের গারো, খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ে বাধা পেয়ে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ু হিসেবে ভারতে প্রবাহিত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়, যেমন—

(১) দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্রের বদ্বীপ সমভূমি অঞ্চল ও উত্তর–পূর্ব ভারতের পাহাড়ি রাজ্যগুলিতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয় । যেমন— দক্ষিণ–পূর্ব মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে খাসি পাহাড়ের দক্ষিণের বায়ুমুখী ঢালে অবস্থিত চেরাপুঞ্জি–মৌসিনরাম অঞ্চলে পৃথিবীর মধ্যে সর্বাধিক প্রায় ১২৫০ সেমি থেকে ১৪০০ সেমি পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয় । কিন্তু বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় এই পার্বত্য অঞ্চলের উত্তর ঢালে (যাকে অনুবাত ঢালে বলা হয়) অবস্থিত শিলং শহরে বছরে মাত্র ২৫০ সেমি বৃষ্টিপাত হয় ।

(২) দক্ষিণ–পূর্ব মৌসুমি বায়ুপ্রবাহ পূর্ব হিমালয়ে পৌঁছানোর পর পশ্চিমমুখী হয়ে গাঙ্গেয় সমভূমির মধ্য দিয়ে যতই পাঞ্জাব ও রাজস্থানের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়, বৃষ্টিপাত ততই কমতে থাকে । যেমন— এই বায়ুপ্রবাহের ফলে নিম্নগাঙ্গেয় সমভূমির কলকাতায় বছরে ২০০ সেমি, মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমির পাটনায় বছরে ১৫০ সেমি, এবং উচ্চগাঙ্গেয় সমভূমির হরিদ্বারে বছরে প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার বৃষ্টিপাত হয় । কিন্তু আরাবল্লী পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায়া অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় রাজস্থানের বিকানিরে বছরে খুবই সামান্য বৃষ্টিপাত হয় । আবার কোনও বছরে একেবারেই বৃষ্টিপাত হয় না । 

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।