ভারতবর্ষের কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থার গুরুত্ব

Submitted by avimanyu pramanik on Mon, 11/24/2014 - 09:58

 ভারতবর্ষের কৃষিতে জলসেচ ব্যবস্থার গুরুত্ব (Importance of Irrigation System in India) : পৃথিবীর সবচেয়ে বৃষ্টিবহুল অঞ্চল মঁওসিরাম (চেরাপুঞ্জি) ভারতে অবস্থিত হলেও ভারতের কৃষিকাজে জলসেচ ব্যবস্থার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।  নিম্নলিখিত কারণগুলির জন্য ভারতের কৃষিকাজে জলসেচ ব্যবস্থার প্রয়োজন ।

(১) মৌসুমি বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা (Uncertainity of Rainfall) : ভারতের প্রায় শতকরা ৯০ ভাগ বৃষ্টিপাত দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হলেও এই বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অনিশ্চিত । কোনও বছরে প্রচুর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে বন্যার সৃষ্টি হয় । আবার কোনও বছর মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হওয়ার জন্য খরা দেখা দেয় । মৌসুমি বৃষ্টিপাতের এই অনিশ্চয়তার জন্য ভারতের কৃষি জমিতে জলসেচের প্রয়োজন হয় ।

(২) শীতকালীন বৃষ্টিপাতের অভাব (Scarcity of Rainfall in Winter Season) : দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বৈশিষ্ট্য অনুসারে শীতকালে তামিলনাড়ু উপকুল এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কোনও কোনও অংশ ছাড়া ভারতে বৃষ্টিপাত হয় না । সেই জন্য শীতকালীন রবিশস্য চাষের জন্য ভারতে জলসেচের প্রয়োজন হয় ।

(৩) বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন (Unequal Distribution of Rainfall) : ভারতের সর্বত্র মৌসুমি বৃষ্টিপাতের পরিমাণ সমান নয়, উত্তর-পশ্চিম ভারত ও দাক্ষিণাত্য মালভূমির মধ্যভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ খুবই কম হওয়ায় এই সব অঞ্চলে কৃষি কাজের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয় ।

(৪) উচ্চ ফলনশীল শস্যের চাষ (Cultivation of High Yielding Variety) : বর্তমানে ভারতে প্রচলিত নানারকম উচ্চ ফলনশীল শস্যের চাষ হয় । উচ্চ ফলনশীল শস্যের চাষে প্রচুর জলের প্রয়োজন হওয়ায় ব্যাপক ভাবে জলসেচের প্রয়োজন হয় ।

(৫) মৃত্তিকার অসম ধারণ ক্ষমতা (Water Holding Capacity of Soils) : ভারতের সব অঞ্চলে মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা সমান নয় । যেসব অঞ্চলের মৃত্তিকার জল ধারণ ক্ষমতা কম, সেখানকার কৃষি কাজের জন্য জলসেচের প্রয়োজন হয় ।

(৬) বহু ফসলী চাষ (Multiple cropping) : আজকাল বৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতিতে একই জমিতে বহু বার ফসল ফলানো যায় । একই জমিতে বছরে বহুবার ফসল ফলানোর জন্য কৃষি জমিতে সারা বছর ধরে সেচের জলের যোগান রাখা অপরিহার্য ।

(৬) ভারতে কৃষি জমির প্রয়োজন বৃদ্ধি (Extension of Agricultural Land) : কৃষিজ দ্রবের চাহিদা পূরণের জন্য কৃষি যোগ্য জমির সম্প্রসারণ প্রয়োজন হয়ে পড়ছে ।  অসেচ সেবিত জমিতে আজকাল বৈজ্ঞানিক কৃষি পদ্ধতিতে সেচের ব্যবস্থা করে ফসল ফলানো হচ্ছে । এর জন্য এই সব কৃষি জমিতে সারা বছর ধরে সেচের জলের যোগান রাখা অপরিহার্য ।

*****

Related Items

নর্মদা নদী (The Narmada)

নর্মদা নদী (The Narmada) : মহাকাল পর্বতের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অমরকন্টক থেকে উৎপন্ন হয়ে নর্মদা নদী উত্তর-পশ্চিমে বেঁকে মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্র হয়ে গুজরাটের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিন্ধ্য ও সাতপুরার সংকীর্ণ গিরিখাত অতিক্রম করে

ব্রহ্মপুত্র নদ (The Brahmaputra)

ব্রহ্মপুত্র নদ : তিব্বতের মানস সরোবরের নিকটবর্তী চেমায়ুং-দুং হিমবাহ থেকে সাংপো নামে উৎপন্ন হয়ে নামচাবারওয়া শৃঙ্গের কাছে চুলের কাটার মত বেঁকে অরুণাচল প্রদেশের মধ্য দিয়ে ডিহং নামে ভারতে প্রবেশ করেছে । এর মোট দৈর্ঘ্য ২,৯০০ কিমি, এর মধ্

সিন্ধু নদ (The Indus)

সিন্ধু নদ : সিন্ধু নদ তিব্বতের মানস সরোবরের উত্তরে অবস্থিত সিন-কা-বাব জলধারা থেকে উৎপন্ন হয়ে উত্তর-পশ্চিমে প্রথমে তিব্বতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে পরে লাদাখ অঞ্চল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করেছে । সিন্ধু নদের মোট দৈর্ঘ্য ৩,১৮০ কিমি এবং এর মধ

গঙ্গা নদী (The Ganges)

গঙ্গা নদী : গঙ্গা ভারতের শ্রেষ্ঠ নদী এবং ভারতের দীর্ঘতম নদী । গঙ্গানদীর মোট দৈর্ঘ্য ২৫১০ কিমি এবং এর মধ্যে ২০১৭ কিমি ভারতে প্রবাহিত । কুমায়ুন হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হিমবাহের গোমুখ তুষার গুহা থেকে ভাগীরথী নামে উৎপন্ন হয়ে সংকীর্ণ গিরিখাতের

ভারতের নদনদী (Rivers of India)

ভারতের নদনদী : ভারতে অসংখ্য নদনদী বিভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে । উৎস, প্রবাহের অঞ্চল, এবং মোহানা অনুসারে ভারতের নদনদীকে প্রধানত দুটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় । যেমন— (১) উত্তর ভারতের নদী এবং (২) দক্ষিণ ভারতের নদী ।