প্রশ্ন:- অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি কে প্রবর্তন করেন ? এর প্রধান শর্তগুলি কি ছিল ? কোন দেশীয় রাজ্য সর্বপ্রথম এবং কারা কারা এটি গ্রহণ করেছিল ?
গভর্নর জেনারেল লর্ড ওয়েলেসলি অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি প্রবর্তন করেন ।
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির (Subsidiary Alliance) শর্ত : ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের বিস্তারের জন্য লর্ড ওয়েলেসলি যে সকল নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি । কোনো দেশীয় রাজা এই নীতি গ্রহণ করলে তাঁকে কতকগুলি শর্ত পালন করতে হত, যেমন—
(১) অধীনতামূলক মিত্রতায় আবদ্ধ দেশীয় রাজাগুলিকে কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করতে হত ।
(২) সংশ্লিষ্ট দেশীয় রাজ্যগুলিতে একদল ইংরেজ সৈন্য এবং একজন ইংরেজ রেসিডেন্ট রাখতে হত ।
(৩) সৈন্যবাহিনীর ব্যায়নির্বাহের জন্য মিত্রতাবদ্ধ রাজ্যকে নগদ টাকা বা রাজ্যের একাংশ ছেড়ে দিতে হত ।
(৪) কোম্পানির বিনা অনুমতিতে অপর কোনো শক্তির সঙ্গে মিত্রতা বা যুদ্ধবিগ্রহ করা যেত না । অর্থাৎ মিত্র রাজ্যগুলির বৈদেশিক নীতি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নির্ধারণ করত ।
(৫) চুক্তিবদ্ধ রাজ্যে ইংরেজ ছাড়া অন্যান্য সমস্ত ইউরোপীয়কে তাড়িয়ে দিতে হত ।
(৬) এই সব বশ্যতার বিনিময়ে কোম্পানি সেই রাজ্যকে অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ, বৈদেশিক আক্রমণ এবং অন্যান্য বিপদ থেকে রক্ষা করত ।
১৭৯৮ খ্রিস্টাব্দে হায়দ্রাবাদের নিজাম সর্ব প্রথম ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহণ করেন । এরপর অযোধ্যা, তাঞ্জোর, সুরাট, পুণা প্রভৃতি রাজ্যগুলি এই নীতিতে আবদ্ধ হয়ে ইংরেজদের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় । পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও ১৮০২ খ্রিস্টাব্দে বেসিনের সন্ধির মাধ্যমে এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন । টিপু সুলতানের পতনের পর মহীশূরের পূর্বতন হিন্দু রাজবংশও কোম্পানির বশ্যতা স্বীকার করে নেয় । পরবর্তী সময়ে সিন্ধিয়া, ভোঁসলে ও হোলকার অধীনতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ।
- এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে, অধীনতামূলক চুক্তিতে স্বাক্ষর করে দেশীয় রাজারা চিরদিনের মতো নিজেদের স্বাধীনতা বিসর্জন দেন ।
*****