সুন্দরী বা সুঁদরী গাছের অভিযোজন (Adaptation of Sundari)
সুন্দরী এক রকমের লবণাম্বু [Halophyte] উদ্ভিদ । এরা সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার কর্দমাক্ত ও লবণাক্ত মাটিতে জন্মায় । এর অভিযোজনগত বৈশিষ্ট্যগুলি হল :
[1] মূল:-
[a] মাটি লবণাক্ত থাকায় মূল মাটির গভীরে প্রবেশ করে না, মূল মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে ।
[b] মাটি কর্দমাক্ত ও রন্ধ্রবিহীন হওয়ায় ওই মাটিতে অক্সিজেন সরবরাহ খুব কম । তাছাড়া এসব এলাকা বেশির ভাগ সময়েই জলপ্লাবিত থাকে । মাটিতে প্রচুর পরিমাণে অজৈব লবণ দ্রবীভুত অবস্থায় থাকে, তাই উদ্ভিদের কিছু শাখা-মূল অভিকর্ষের বিপরীত দিকে ধাবিত হয়ে মাটির উপরে উঠে আসে । এইসব মূলের উপরিভাগে অসংখ্য সূক্ষ্ম শ্বাস ছিদ্র বা 'নিউম্যাটোফোর' থাকে, এই ছিদ্রের মাধ্যমে মূলগুলি বায়ুমন্ডল থেকে অক্সিজেন শোষণ করে । এই রকম মূলকে শ্বাসমূল বলে ।
[c] গাছগুলি নরম ও কর্দমাক্ত মাটিতে জন্মানোর ফলে, যাতে গাছগুলো সহজে না পড়ে যায়, তার জন্য কান্ডের গোড়ার দিক থেকে এক রকমের অস্থানিক মূল বেরিয়ে মাটিতে প্রবেশ করে —এই মূলগুলিকে ঠেস মূল বলে ।
[d] সুন্দরী গাছের গুঁড়ির নীচের দিকের চারপাশ থেকে কতকগুলি চ্যাপ্টা এবং তক্তার মতো অংশ বের হয়ে মাটির মধ্যে প্রবেশ করে । তক্তার মতো এই অংশগুলিকে অধিমূল বলে । অধিমূল সুন্দরীর গুঁড়িকে খাড়াভাবে থাকতে সাহায্য করে ।
[2] কান্ড:-
[a] সুন্দরী গাছ খর্বাকার এবং গম্বুজাকার, কান্ড সাধারণত দৃঢ় এবং শাখাপ্রশাখাযুক্ত ।
[b] কান্ডে যান্ত্রিক কলা ও সংবহন কলা সুগঠিত ।
[c] কান্ডের ত্বকে পুরু কিউটিকল থাকে । ত্বক অনেক সময় মোমযুক্ত পদার্থ দ্বারা আবৃত থাকে ।
[3] পাতা:-
[a] পাতাগুলি স্থুল, রসালো এবং খসখসে ।
[b] পাতার ত্বক পুরু এবং কিউটিকলযুক্ত, পাতার ফলকে মোমের আবরণ থাকায় পাতা চকচকে হয় । বাষ্পমোচন রোধের জন্য পাতার এমন অভিযোজন হয়েছে ।
[c] পাতার প্যালিসেড কলা সুগঠিত এবং কোশান্তর-রন্ধ্র সাধারণত থাকে না ।
[d] পত্ররন্ধ্রগুলি নিম্নত্বকের ভিতরের দিকে অবস্থিত ।
সুন্দরী গাছের অভিযোজনের বৈশিষ্ট্য ও অভিযোজনগত গুরুত্ব
অভিযোজিতঅঙ্গ | বৈশিষ্ট্য | অভিযোজনগত গুরুত্ব |
১. পাতা | (ক) পাতাগুলো পুরু ও চকচকে মোমের দ্বারা আবৃত থাকে । | (ক) বাষ্পমোচনের হার কমানোর জন্য, কারণ বাষ্পমোচন বেশি হলে মাটি থেকে দ্রবীভূত খনিজ লবণসহ জল বেশি প্রবেশ করে না । |
(খ) পাতার পত্ররন্ধ্রগুলি নিমত্বকের ভেতরে অবস্থিত থাকে । | (খ) কারণ সরাসরি আলো পত্ররন্ধ্রের ওপর না পড়ার দরুন জল বাষ্পাকারে কম বেরোবে, ফলে মাটি থেকে জল কম শোষণ করতে হবে । | |
২. কান্ড | (ক) কান্ড হয় খুবই সুগঠিত এবং প্রচুর শাখাপ্রশাখা যুক্ত । | (ক) এরা বৃক্ষ জাতীয় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ । |
(খ) ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত হয় । | (খ) বাষ্পমোচনের হার হ্রাস করার জন্য সুন্দরীর কান্ডের ত্বক পুরু কিউটিকল যুক্ত হয়েছে । | |
৩. মূল | (ক) সুন্দরীর মূল খুব বেশি সুগঠিত নয় । মাটির খুব গভীরে প্রবেশ করে না । | (ক) মাটি থেকে এরা প্রয়োজন মতো জল সন্তর্পণে শোষণ করে । মাটিতে জলের পরিমাণ বেশি থাকায় মূলকে খুব বেশি গভীরে প্রবেশ হয় না । তাছাড়া মাটিতে খনিজ লবণের পরিমাণ থাকে খুব বেশি । |
(খ) প্রধান কান্ডের নিম্নদেশ থেকে তির্যকভাবে ঠেস মূল এবং নৌকোর হালের মতো অধিমূল উত্পন্ন হয় । | (খ) নরম কর্দমাক্ত মাটিতে জন্মায় বলে উদ্ভিদকে জোর প্রদান করা হল মূলের অন্যতম কাজ । | |
(গ) শ্বাসমূলের মাধ্যাকর্ষণের বিপরীত দিকে উপস্থিতি । | (গ) মাটির নীচে অবস্থিত কোশগুলোর শ্বাসকার্যের অসুবিধা দূর করার জন্য শ্বাস মূলের উত্পত্তি । তাদের গাত্রস্থিত শ্বাসছিদ্রের মধ্য দিয়ে O2 গৃহীত এবং CO2 নির্গত হয় । |
পদ্ম, ক্যাকটাস এবং সুন্দরী গাছের অভিযোজনমূলক পার্থক্য
বিষয় | পদ্ম | ক্যাকটাস | সুন্দরী |
১. প্রকৃতি | ১. জলজ উদ্ভিদ । | ১. জাঙ্গল উদ্ভিদ | ১. লবণাম্বু উদ্ভিদ । |
২. মূল | ২. মূল অস্থানিক প্রকৃতির, প্রধান মূল, মূলত্র এবং মূলরোম থাকে না । | ২. মূল স্থানিক প্রকৃতির । প্রধান মূল উপস্থিত এবং তা মাটির নীচে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত । মূলে মূলরোম এবং মুলত্র থাকে । | ২. মূল স্থানিক প্রকৃতির । প্রধান মূল উপস্থিত এবং তা মাটির অল্প নীচে বিস্তৃত থাকে । মূলে মুলত্র এবং মূলরোম থাকে । |
৩. শ্বাসমূল এবং ঠেসমূল | ৩. থাকে না । | ৩. থাকে না । | ৩. থাকে । |
৪. কান্ড | ৪. বিরুৎ শ্রেণির ও রাইজোম জাতীয় । ত্বক কিউটিকলবিহীন, কান্ডে বাতাবকাশ থাকে । কান্ডের যান্ত্রিক কলা এবং সংবহন কলা সুগঠিত নয় । | ৪. গুল্ম জাতীয়, স্থুল, রসালো, চ্যাপ্টা, এবং সবুজ । কান্ডের ত্বকে কিউটিকল এবং মোম জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে । কান্ডের যান্ত্রিক কলা এবং সংবহন কলা সুগঠিত । | ৪. বৃক্ষ জাতীয়, কান্ডের ত্বকে কিউটিকল এবং মোম জাতীয় পদার্থের আবরণ থাকে । কান্ডের যান্ত্রিক কলা এবং সংবহন কলা সুদৃঢ় । |
৫. পাতা | ৫. পাতার ফলক খুব বড়ো এবং প্রসারিত । পাতার ঊর্ধ্বত্বকে কিউটিকল ও মোমযুক্ত আবরণ থাকে । পত্ররন্ধ্র কেবল ঊর্ধত্বকে থাকে । | ৫.পাতা আকারে ছোটো এবং সংখ্যায় কম । পাতা অনেকক্ষেত্রে কাঁটায় রূপান্তরিত । পাতার ত্বক পুরু কিউটিকলযুক্ত এবং মোম জাতীয় আবরণে আবৃত থাকে । পত্ররন্ধ্র অনুপস্থিত । | ৫. পাতার ফলক স্থূল, রসালো, ত্বকে পুরু কিউটিকল ও মোমযুক্ত আবরণ থাকে । পত্ররন্ধ্র কেবল নিম্নত্বকে থাকে । |
*****
- 20624 views