বিচার ব্যবস্থার প্রবর্তন (Judicial System)
শাসন বিভাগের মতো ওয়ারেন হেস্টিংস বিচার বিভাগেরও নানা সংস্কার সাধন করেন । ভারতে ইংরেজ রাজত্বের সূচনায় দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলার ভার নবাবের হাতেই ন্যস্ত ছিল । ভূমি ও রাজস্ব সংক্রান্ত মামলা দেওয়ানি মামলা এবং খুন জখম রাহাজানি সংক্রান্ত মামলা ফৌজদারী মামলা নামে পরিচিত ছিল । ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে কোম্পানি দেওয়ানি মামলার ভার নিজেদের হাতে নিয়ে নেয় । তারপর রাজনৈতিক প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগে কোম্পানি ফৌজদারী মামলার ভারও নিজেরদের হাতে নিয়ে নেয় । দেওয়ানি মামলার বিচারের জন্য প্রতি জেলায় কালেক্টরের অধীনে দেওয়ানি আদালত এবং ফৌজদারী মামলার বিচারের জন্য কাজির অধীনে ফৌজদারি আদালত স্থাপিত হয় । এছাড়া হেস্টিংস কলকাতার সদর দেওয়ানি আদালত এবং সদর নিজামত আদালত স্থাপন করে তাঁদের ওপর জেলার নিম্ন আদালতগুলি থেকে আসা আপিলের মামলার নিস্পত্তির দায়িত্ব অর্পণ করেন । সদর দেওয়ানি আদালতে গভর্নর ও তাঁর কাউন্সিলের দুজন সদস্য বিচারের দায়িত্বে ছিলেন । সদর নিজামত আদালতের বিচার করতেন নবাব নিযুক্ত বিচারক । ১৭৭৩ খ্রিস্টাব্দে নিয়ামক আইন পাশ হলে কলকাতার একজন প্রধান বিচারপতি এবং অন্য তিনজন বিচারপতি নিয়ে ১৭৭৪ খ্রিস্টাব্দে সুপ্রিমকোর্ট গঠিত হয় । স্যার এলিজা ইম্পে প্রথম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হন ।
হেস্টিংস বাংলার বিচারব্যবস্থাকে নবাবের হাত থেকে কোম্পানির হাতে নিয়ে আসেন । কর্নওয়ালিশ সেই বিচার ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করে তাকে সুসংহত করেন । তাঁর আমলে সদর নিজামত আদালত মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় স্থানান্তরিত করা হয় । তার পূর্বে নবাব ফৌজদারী মামলার বিচারের ভারপ্রাপ্ত ছিলেন । কর্নওয়ালিশ ফৌজদারী মামলার বিচারের ভারও নবাবের হাত থেকে নিয়ে গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের হাতে ন্যস্ত করেন । জেলা কালেক্টরদের হাত থেকে দেওয়ানি মামলার বিচারের ভার কেড়ে নিয়ে সে ভার জেলা জজদের ওপর দেওয়া হয় । কালেক্টরগণ এরপর শুধু রাজস্ব আদায়ের দায়িত্বে থাকেন । কর্নওয়ালিশ গভর্নর জেনারেল ও তাঁর কাউন্সিলের অধীনে পাটনা, ঢাকা, কলকাতা ও মুর্শিদাবাদে চারটি প্রাদেশিক আদালত স্থাপন করেছিলেন । প্রত্যেক প্রাদেশিক আদালতে তিনজন ইংরেজ বিচারক নিযুক্ত হতেন । এঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বিচারকার্য পরিচালনা করতেন । নিম্ন আদালত ছিল সদর দেওয়ানি আদালত । গভর্নর ও কাউন্সিলের সদস্যগণ এই বিচারের দায়িত্বে ছিলেন । এছাড়া কর্ণওয়ালিশ ফৌজদারী মামলার বিচারের জন্য ও চারটি ভ্রাম্যমান আদালত স্থাপন করেছিলেন । এইসব আদালতের বিচারকার্য পরিচালনা করতেন কাজী ও মুফতিগণ । ফৌজদারী মামলার সর্বোচ্চ আপিল আদালত ছিল সদর নিজামত আদালত । বিচার ব্যবস্থার সর্ব নিম্নে ছিল সদর আমিন ও মুনসেফের আদালত । এইসব বিচারালয়ের বিচারকগণ এদেশীয় হিন্দুপন্ডিত ও মুসলমান আইনজ্ঞ ব্যক্তিগণের সহায়তায় বিচারকার্য পরিচালনা করতেন । বিচার ব্যবস্থার দন্ডবিধির কঠোরতা হ্রাস, আইনের চক্ষে সকলের সমতা প্রতিষ্ঠা এবং মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের রীতি প্রবর্তন করে কর্ণয়ালিশ বিচার ব্যবস্থাকে অনেক উন্নত করে তুলেছিলেন । তাঁর শাসন ও বিচার বিভাগীয় সংস্কারগুলি সংকলিত হয়ে 'কর্ণয়ালিশ কোড' (Cornwallis Code) নামে প্রকাশিত হয় ।
*****
- 7777 views